ফ্ল্যাপে লেখা কথা আসলে এই গ্রন্থ আবহমান প্রাচ্য নারীর জীবন সংগ্রামের কাহিনী। হোক সে নারী সহস্র বর্ষ পূর্বের প্রাচীনা, কয়েকশত বর্ষ পূর্বের মধ্যমা অথবা আধুনিক কালের নবীনা -তার কথা ,তার জীবনকাহিনী চিরকালই এক ও অভিন্ন। সে কাহিনী নারীর অবদমন ,অধস্তনতা ও আত্নপ্রতিষ্ঠার জন্যে নিয়ত সংগ্রামের কাহিনী। নারীর এই চিরন্তন কথা- অবিরাম যুদ্ধের কাহিনী পূরবী বসু এই গ্রন্থে যেভাবে বর্ণনা করেছেন এর আগে তেমন করে আর কেউ করেছেন বলে মনে হয় না। ‘প্রাচ্যে পুরাতন নারী’র সবচেয়ে বড় সম্পদ পুরাণের অলৌকিক দেবদেবতার চরিত্র, মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতের অতিলৌকিক কাহিনী কি মধ্যযুগের মানবজীবনের অপরূপ বয়ান সবই এখানে উপস্থিত হয়েছে চিরন্তন নরনারীর জীবনগাথা হিসেবেই। স্বর্গ, মর্ত্য, নরকের সীমা এই শব্দ,গন্ধ, বর্ণ স্পর্শের পৃথিবীতেই। দানব, মানব ,দেবতা এঁরাও সবাই মানুষই- এই তত্ত্ব বা কাহিনী ‘ প্রাচ্যে পুরাতন নারী’ র বাক্যবন্ধে যে ভাবে পরিস্ফুট হছে, তেমনভাবে আগে কখনো হয়নি । মনুসংহিতা, বেদ , উপনিষদ প্রভৃতি শাস্ত্রগ্রন্থ, এমনাকি ‘পুরাণ’ ও ‘রামায়ণ’- ‘মহাভারত’ মহাকাব্যদ্বয়ও যে বায়ুতরঙ্গে ভেসে আসা শব্দা্বলি নয়, সবই মানুষেরই সৃষ্টি সে কথাও স্পষ্টভাবে বিধৃত এ গ্রন্থে। দেখা যায়, নারী নিগ্রহ ও অবদমনের জন্যে পুরুষ তার অসম শক্তি ও ক্ষমতার প্রাবল্যে নারী জীবনের চারদিকে যে নিষেধের গন্ডি টেনে দিয়েছে, সহস্র বছরেও সেই সীমারেখা বিলুপ্ত হয়নি । এই গ্রন্থ তাই নানা শাস্ত্রের বিশ্লেষণ নয়, বরং তা কীভাবে নারীর জীবনকে প্রতি পদে দু:সহ করে তুলেছে তারই উপাখ্যান । গল্পকার ও বিজ্ঞানী পূরবী বসুর অধ্যয়ন ,গবেষণা, বিশ্লেষণ ও অনণ্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সাজানো এই গ্রন্থের বক্তব্য ও বিষয়াবলি পাঠকের কাছে যেন রূপকথার মতোই শোনাবে । কিন্তু কিছুই রূপকথার নয়-সবই প্রাচ্যে নারী জীবনের নিয়ত বৈষম্য ও নির্যাতনের কাহিনী।
সূচিপত্র * প্রাচ্য পুরাণ ও প্রাচ্যে পুরাতন নারী * সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রাচীন প্রাচ্য সভ্যতা * শাস্ত্রীয় দৃষ্টিতে ও নির্মোহ চোখে স্বর্গ, মত্য , নরক এবং দেবতা, মানব, দানব * মনুসংহিতা ও অন্যান্য শাস্ত্রীয় ও নীতিগ্রন্থে নারীর অবস্থান * প্রাচীনকালে ধর্মে-কর্মে ও কৃষিকর্মে নারীর ভূমিকার প্রান্তিকীকরণ * পৌরণিক কাহিনী ও প্রাচীন নারীর কিছু বৈশিষ্ট্য * প্রাচ্য পুরাণে নারীর অবমাননা ও অবদমন * প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ও নারী * প্রাচ্য পুরাণের র পঞ্চকন্যা * মধ্যযুগের নারীর অবস্থান ও অবস্থা * কিছু পৌরিাণিক, মধ্যযুগীয় ও কিংবদন্তীয় নারী * সীতাকেই কেন বার বার সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হল? * রামায়ণ ও মহাভারতে অপ্সরাদের ভূমিকা * সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে পৌরাণিক নারীর নবরূপায়ণ * আত্নপ্রতিষ্ঠার সন্ধানে যুগে যুগে নারী * তথ্য নির্দেশনা পরিশিষ্ট * ক) রামায়ণ ও রামায়ণের প্রধান নারী চরিত্র * খ) মহাভারত ও কুরু -পাণ্ডব বংশের বিভিন্ন প্রজন্মের তালিকা * গ) প্রধান প্রধান আর্য ধর্মগ্রন্থর তালিকা * ঘ) কিছু পৌরাণিক শব্দের সংখ্যা
পূরবী বসু বিজ্ঞানী, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক। তাঁর গল্প, প্রবন্ধাবলি ও বিবিধ রচনা নারী-ভাবনা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনায় ঋদ্ধ। মুন্সীগঞ্জের সন্তান তিনি। শহরের এক জনপ্রিয় চিকিৎসকের কন্যা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ করেছেন। ফার্মেসিতে অনার্সসহ স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা। তারপর বিদেশ যাত্রা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। মেডিক্যাল কলেজ অভ পেনসিলভ্যানিয়া ও ইউনিভার্সিটি অভ মিসৌরি থেকে লাভ করেছেন। যথাক্রমে প্রাণ-রসায়নে এম.এস. ও পুষ্টিবিজ্ঞানে পিএইচ-ডি । বিজ্ঞানচর্চা তার পেশা। নিউইয়র্কের বিশ্ববিখ্যাত মেমােরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যান্সার সেন্টার গবেষণা ও কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনায় কেটেছে বেশ কিছুকাল । অজস্র গবেষণা-প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে সারা বিশ্বের নানা নামী জার্নালে। দীর্ঘ বিদেশবাসের পর দেশে ফিরে আসেন এক খ্যাতনামা ঔষধ প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে। দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক-এ স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালকও ছিলেন পরবর্তীকালে । গত কয়েক বছরে তার নারী সম্পর্কিত রচনা নিয়ে কয়েকটি মননশীল গ্রন্থ বেরিয়েছে, যার মধ্যে নারী, সৃষ্টি ও বিজ্ঞান, ‘নােবেল বিজয়ী নারী’, ‘সাহিত্যে নােবেল বিজয়ী নারী’, ‘প্রাচ্যে পুরাতন নারী’, ‘আমার এ দেহখানি’ ও নারী, মাতৃত্ব ও সৃজনশীলতা উল্লেখযােগ্য।। তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্যে ২০০৫-এ তিনি অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১৪-এ কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।