ছড়া আদিকাল থেকেই মানুষের ভালোবাসার বিষয়। গাঁও গেরামে মুখে মুখে তৈরি হয়েছে অজস্র ছড়া।ভ এইসব লোকছড়ার মাধুর্য আর শিল্পমূল্য অনেক। কোনও কোনও ক্ষেত্রে মর্মবাণীও চমৎকার। সময় গড়িয়ে যায়, কিন্তু এইসব ছড়া তার নিজস্ব গুন ও মানের কারণে টিকে থাকে অবলীলায়। ছড়া এমনই এক শিল্পমাধ্যম, যার কদর শিক্ষিত-নিরক্ষর ,ছেলে-বুড়ো সব মানুষেরই কাছেই। বিশিষ্ট কবি হাসান হাফিজ দীর্ঘকাল ধরে ছড়া লিখে আসছেন।কাব্যসাধনার পাশাপাশি তিনি গভীর ভালোবাসেন ও মমতা যত্নের সঙ্গে এই মাধ্যমে কাজ করে চলেছেন নিয়মিত। সেই চর্চারসোনালি ফসল হচ্ছে তার বিশটি ছড়াগ্রন্থ। রকমারি বিষয় যেমন রয়েছে তার ছড়ায়, তেমনি ব্যঙ্গবিদ্রুপ ,সূক্ষ্ণ কৌতুক ঝিলিক দিয়ে ওঠে তার ছড়াসমুহে। নানামত্রিক ছন্দের ঝলমলানো দুলুনি, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহস, নতুনত্ব ও স্বাদের কারণে তার ছড়া পাঠকদের সহজেই মুগ্ধ করে। ছড়া মানুষকে সচেতন করে, চেতনাকে শাণিত করে। একই সঙ্গে দ্যায় নির্মল আনন্দও। সমা পরিবর্তনে ছড়ার ভূমিকা প্রত্যক্ষ ও কার্যকর। হাসান হাফিজের ছড়ার বই বাংলাদেশ শিশু একাডেমী থেকে প্রকাশিত ‘টাকডুম টাকডুম বাজে’ ১৪০৬ বঙ্গাব্দে অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার ভূষিত হয়। এছাড়াও সাবলীল,স্বচ্ছন্দ, মনোগ্রাহী ছড়া রচনার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন বেশ কয়েকটি পুরস্কার।
হাসান হাফিজের জন্ম নারায়ণগঞ্জের সােনারগাঁও উপজেলার এলাহি নগর গ্রামে, ১৫ অক্টোবর ১৯৫৫। যখন ছিলেন স্কুলছাত্র, প্রথম ছড়া ছাপা হয় ইত্তেফাকের কচি কাঁচার আসরে। পড়াশােনা করেছেন হােসেনপুর হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য,গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতায় এম.এ.(ডাবল)। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত। দৈনিক বাংলায় সূচনা। আরাে কাজ করেছেন জনকণ্ঠ, কলকাতার সাপ্তাহিক দেশ (এখন পাক্ষিক), বৈশাখী টেলিভিশন এবং আমার দেশ-এ। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ ১৪০। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এই লেখক পেয়েছেন বহু সম্মাননা ও পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, ডাকসু সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাঙ্ক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, কলকাতার সৌহাদ্য কবিতা উৎসব সম্মাননা, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক সম্মাননা, ঢাকা রিপাের্টার্স ইউনিটি লেখক সম্মাননা, কবিতালাপ পুরস্কার, কবি জসীম উদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার, এম নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, স্বপ্নকুঁড়ি পদক ইত্যাদি। হাসান হাফিজ বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের (এফইজেবি) সাধারণ সম্পাদক, বাংলা একাডেমির জীবন সদস্য। সাহিত্য-সাংবাদিকতা সূত্রে ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের ১৫ দেশ। তার স্ত্রী শাহীন আখতার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান ডা. শিহান তাওসিফ গৌরব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত।