"ফ্রম থার্ড ওয়ার্ল্ড টু ফার্স্ট (লী কুয়ান ইউ'র আত্মকথা)" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ সিঙ্গাপুরের নব প্রজন্মের যারা আজকের স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধি উপভােগ করছে, তাদের জন্যেই মূলত এই গ্রন্থ রচনা করেছি। প্রাকৃতিক সম্পদশূন্য মাত্র ৬৪০ বর্গকিলােমিটার আয়তনবিশিষ্ট একটি সদ্যস্বাধীন জাতিকে ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ পরিবেশে কীভাবে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছিল সেকথা আমি তাদেরকে অবহিত করতে চাই। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অবস্থায় দখলদার জাপানিদের দেওয়া ক্ষত নিয়ে যারা জাতীয় অর্থনৈতিক বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করেছিলাম তাদের জন্য কাজটি অত সহজ ছিল না। আমরা ভুলে যেতে পারি না যে, জাতীয় সংহতি, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রগতি এবং জাতিগত সমৃদ্ধি প্রাকৃতিকভাবে আপনাআপনি অর্জিত হয়নি। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা এবং কর্মদ্যোগের মাধ্যমেই তা অর্জন করতে হয়েছে। এ বিষয়ে আমার পূর্বের প্রকাশিত গ্রন্থে প্রাক্-বিশ্বযুদ্ধকালীন অবস্থা, জাপানিদের দখলদারিত্ব, কমিউনিস্টদের উত্তরণ এবং মালয়েশিয়ার সাথে অবস্থানকালে উদ্ভূত জাতিগত সমস্যার বিষয়ে আলােকপাত করেছি। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এশীয়দের প্রতি জাপানিদের নৃশংসতা আমার ভেতরে ঘৃণার জন্ম দিয়েছিল। সেইসাথে আমার বিষাদপূর্ণ মনে জন্ম নিয়েছিল জাতীয়তাবােধ এবং আত্মসম্মান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর-পরবর্তী চার বছর ব্রিটেনে ছাত্র হিসেবে অবস্থানকালে ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল ভাঙার স্পৃহাকে করেছিল আরও সুদৃঢ়। আগামী দিনের শঙ্কা এবং অচলাবস্থার সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করে আমি ১৯৫০ সালে দেশে ফিরে এসেছিলাম। সে-সময় একটি উপনিবেশবিরােধী আবহ আমাকে এবং আমাদের প্রজন্মের অন্যদেরকে দারুণভাবে আলােড়িত করেছিল। আমি নিজেকে রাজনীতি এবং শ্রমিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলাম এবং মাত্র ৩৫ বছর বয়সে স্বায়ত্তশাসিত সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলাম। একপর্যায়ে আমার সহযােদ্ধাদের সাথে নিয়ে আমাকে কমিউনিস্টদের সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে হয়েছিল। এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমাদেরকে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হবে এবং পথিমধ্যেই ওদের সাথে আমাদের মতদ্বৈধতার সৃষ্টি হবে। পরবর্তীকালে যখন এ ধরনের পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছিল, তখন আমাদের অনেক তিক্ততার সম্মুখীন হতে হয় এবং আমরা ভাগ্যবান যে এ পর্যায়ে আমাদেরকে পরাজিত হতে হয়নি। অদূর ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় রেখে মালয়েশিয়ার সাথে একীভূতকরণ অত্যাবশ্যক অনুভূত হয়েছিল, যে-কারণে ১৯৬৩ সালে আমরা মালয়েশিয়ার সাথে একীভূত হয়েছিলাম। এক বছরের মাথায়, ১৯৬৪ সালে আমাদেরকে মালয় এবং চৈনিক জনগােষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন দলের কট্টরপন্থিদের অদৃশ্য প্রহসনের ফাঁদে আটকা পড়েছিলাম। United Malay National Organization (UMNO) সবসময়ই মালয়-প্রভাবিত মালয়েশিয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল। ওদের এই সাম্প্রদায়িক মনােবৃত্তি প্রতিরােধকল্পে এবং জাতীয় সংহতি রক্ষার্থে সমগ্র মালয়েশিয়ায় আমরা ব্যাপকহারে মালয় এবং অমালয়দের সমাবেশ ঘটিয়েছিলাম। তার পরও ১৯৬৫ সালে আমাদেরকে কোনাে বিকল্প পথ সন্ধানের সুযােগ প্রদান না করে মালয়েশিয়া ফেডারেশন ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। ওই অবস্থায় সাম্প্রদায়িক হিংস্রতা এবং উদ্ভূত ভীতিজনক পরিস্থিতি আমাদের জনগণকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একাকী চলার জন্য যােগ্য করে তুলেছিল। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা আমাকে এবং আমার সহকর্মীদেরকে ধর্ম, ভাষা এবং বর্ণ-নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমানাধিকারভিত্তিক একটি বহুজাতিক সমাজগঠনে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং সেবিশ্বাসের আলােকেই আমাদের নীতিমালা পরিচালিত হয়েছিল। এই গ্রন্থে মালয়েশিয়াবিহীন একটি বন্দর হিসেবে স্বাধীনভাবে অবিচল আস্থায় দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার কথা বিধৃত হয়েছে। আমাদেরকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দৃশ্যমান অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মাত্র তিন দশকে গরিবানা থেকে সমৃদ্ধির সােপানে পৌঁছতে হয়েছে। ১৯৬৫-পরবর্তী সময়কালের অরাজকতা আর অস্থিরতায় পরিপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসবার পথ খুঁজতে হয়েছে। ১৯৭১ সালে ব্রিটিশ সেনাছাউনি প্রত্যাহারের পর আমরা যখন বেকার জনগােষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছিলাম, কেবলমাত্র তখনই কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবার অবকাশ পেয়েছিলাম। ইত্যবসরে ১৯৭৩ সালে হঠাৎ করে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের মূল্য চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরকে অনেকটা থমকে দাঁড়াতে হয়েছিল। তার পরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজেদের মতাে করে অনাহূত পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা সমর্থ হয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ের পদক্ষেপগুলাে ছিল অত্যন্ত কঠিন। তার পরও সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিমার্জিত উৎকর্ষের বদৌলতে শিল্পায়িত দেশগুলাের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে দেশটিকে এ অঞ্চলের পণ্য, সেবা এবং তথ্য-প্রযুক্তির সূতিকাগার হিসেবে গড়ে তােলা হয়েছিল। ১৯৫৯ সালে আমি যখন স্বায়ত্তশাসিত সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলাম তখন আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৪০০ মার্কিন ডলার। ১৯৯০ সালে এ অঙ্ক ১২ হাজার ২ শত মার্কিন ডলারে উপনীত হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে যখন বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে আমূল পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল এবং আমি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম, তখন আমাদের মাথাপিছু আয় ২২০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। বৈষয়িক দিক দিয়ে আমরা আমাদের দারিদ্র্যসম্পৃক্ত তৃতীয় বিশ্বের পরিচিতি অনেক পেছনে ফেলে এসেছি। তার পরও শিল্পকলা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক মাননান্নয়নের জন্য প্রথম বিশ্বের সমতুল্য যে অবকাঠামাে আমরা গড়ে তুলেছি তার ফলাফল পেতে আমাদেরকে আরেক প্রজন্ম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। "স্নায়ুযুদ্ধের" সময়কালে বিশেষত ষাট ও সত্তরের দশকে যখন বিশ্ব দুভাগে বিভক্ত ছিল এবং কোন্ পক্ষ বিজিত হবে তা অত্যন্ত অস্পষ্ট ছিল, তখন আমরা পশ্চিমের দিকেই ঝুঁকেছিলাম। আমাদের প্রতিবেশী দেশের কমিউনিস্টবিরােধী অবস্থানের সুবাদে আমরা যেমন আঞ্চলিক সংহতির প্রশ্নে ইতিবাচক ফায়দা ভােগ করতে পেরেছিলাম, তেমনি আমেরিকা, ইউরােপ এবং জাপানের অকুণ্ঠ সমর্থন-লাভেও সমর্থ হয়েছিলাম। আশির দশকেই এটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, আমরা বিজিতদের দিকেই আছি। কীভাবে একটি দেশের অর্থনীতি, সেনাবাহিনী কিংবা একটি জাতি গড়ে তুলতে হয়, এই বইটি সে-সম্পর্কিত কিছু নয়, বরং আমি এবং আমার সহকর্মীরা কী কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম এবং কীভাবে সে সব সমস্যার সমাধান করেছিলাম এ গ্রন্থে সেসব বিষয়ের উপরই আলােকপাত করা হয়েছে। আমার পূর্বের গ্রন্থটিতে ধারাবাহিকভাবে ঘটনা প্রবাহের সারসংক্ষেপ উল্লেখ করেছিলাম। সে-তুলনায় এ গ্রন্থে নাতিদীর্ঘ আলােচনার অবতারণা করেছি। ত্রিশ বছরের ঘটনা-পরম্পরাকে আমি ৭৫০ পাতায় নিবন্ধিত করেছি।
জন্ম এবং শৈশব-কৈশোর কেটেছে উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট শহরে। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায়। বাবা মরহুম আব্দুল ওয়াদূদ ভূঞা, মা রাজিয়া সুলতানা। পাঁচ ভাই এক বোন। স্ত্রী জেসমীন আরা, তিন কন্যা; তূর্ণা, অরণ্যা এবং পৌষী রাজকন্যাকে নিয়ে জীবনযাপন। বই পড়া ও আড্ডা দেওয়া প্রধান শখ। ছড়া ও কবিতা লেখা মূল প্রতিপাদ্য হলেও পরিবেশ, মুক্তিযুদ্ধ, ভ্রমণ, অনুবাদ এবং শিশুতোষের ক্ষেত্রেও লেখার পরিধি বিস্তৃত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে এমএসএস। বর্তমানে চাকরিতে নিয়োজিত। প্রকাশিত গ্রন্থ : কবিতা : শেষান্তে কিছুই হয় না আর, বদ্বীপের বেদনা, তাই যদি হবে, একটি সুন্দর রাতের জন্মদিন, সূর্যহীন তাপের ছায়ায়, অন্তর্ভাজে লুকোচুরি, কবিতায় কবি ছয়, আবৃত্তির কবিতা। ছড়া : পৌষী যাবে রেলগাড়িতে, প্রথম ছড়ার বই, এক শালিকে দুঃখ বাড়ায়, বউ কথা কও ডাকে পাখি, একটি ছোট ঘুড়ি, মেঘ মাদুরে সূর্য ঘুমায়, বিষ্টি ঝরা মিষ্টি ছড়া, সাদা পাতা লাল কবিতা, ডৎড়হম তামাশা, ছড়া কবিতায় একুশ একাত্তর, ছড়ায় ছড়ায় পরিবেশ, আমার শত ছড়া কবিতা, একুশ ও একাত্তরের ছড়া, রাঙ্গা ঠোঁটে ফোটে ফুল।