"আম" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বিশ্বের উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের খুব কম দেশ রয়েছে। যেখানে নানা ধরনের রসালাে সুগন্ধযুক্ত ফল উৎপন্ন হয়। আমাদের সৌভাগ্য বাংলাদেশ এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এখন আর কোনাে বিতর্ক নেই যে, উষ্ণমণ্ডলীয় ফলের মধ্যে আম সেরা। পাশ্চাত্য ফল বিশারদ কিংবা ভােক্তাগণ সকলেই এটি মেনে নিয়েছেন আমের সার্বিক গুণাগুণের কারণেই। আমকে বলা হয় কল্পতরু। এত অধিক গুণাবলি সমৃদ্ধ ফলের গাছ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, আমের আদি জন্মভূমি হচ্ছে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং এর সন্নিহিত মিয়ানমার, ত্রিপুরা, মিজোরাম এসকল পার্বত্য এলাকা। আরব বণিকেরা অষ্টম শতাব্দীতে সিলেট থেকে কমলালেবুর চারা নিয়ে গিয়ে গােটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছিল। একইভাবে মুসলিম মিশনারিদের মাধ্যমে এই উপমহাদেশ থেকে আমের বীজ ও চারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকাতে ছড়িয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই। পর্তুগিজ বণিকদের মাধ্যমে এদেশের আম পশ্চিম গােলার্ধের ব্রাজিল, জ্যামাইকা, মধ্য আমেরিকা এসকল এলাকায় ছড়িয়ে যায়। মুঘল সম্রাট আকবর হচ্ছেন ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপােষকতা দিয়ে বিহারের দারভাঙ্গায় এক লক্ষ আমগাছের একটি বিশাল বাগান স্থাপন করিয়েছিলেন ১৫৯০ সালে। জানা গেছে, এই বাগান থেকেই সর্বপ্রথম কলমের চারা তৈরির কৌশল আবিষ্কৃত হয়। আম উৎপাদনে ভারত সবচেয়ে এগিয়ে। পৃথিবীর মােট উৎপাদনের প্রায় ৪০শতাংশ আম ভারত উৎপাদন করে থাকে। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আম উৎপাদনে সবচেয়ে এগিয়ে। রাজশাহীর রায়পাড়া আমবাগানটি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমবাগান। আম ১০০ গ্রাম থেকে সাড়ে তিন কেজি ওজনের হতে পারে। বারি আম-৪ বাংলাদেশের ফল বিজ্ঞানীদের একটি অনন্য সৃষ্টি। আম সংশ্লিষ্ট এ জাতীয় নানাবিধ তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে এই গ্রন্থ। লেখক বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরেছেন তথ্য সংগ্রহের জন্য। বইটিতে আমের ইতিহাস, পুরাণ, সাহিত্যভুবন, নামবিচার, জাতবিচার, বাণিজ্য এমনকি চাষের প্রকরণ সমস্তই হাজির হয়েছে। বঙ্গসংস্কৃতির অঙ্গে অঙ্গে এই একটিই ফল ও তার গাছ কতভাবে পল্লবিত হয়েছে তার ছবি আঁকতে চেয়েছেন তিনি।
মাহবুব সিদ্দিকী জন্ম গঙ্গা পাড়ের রাজশাহী শহরে । পিতার চাকরি সূত্রে বাল্যকাল ও কিশোর সময় কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় । পেশাগত জীবনে পুলিশ বিভাগে চাকরির সুবাদে দীর্ঘ ৩৬ বছরের অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশকে দেখেছেন খুব নিকট থেকে। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য সর্বপরি এখানকার মানুষদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সামাজিক জীবন নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন । বাংলাদেশের নদ-নদী এবং স্থানীয় ইতিহাস বিষয়ক একাধিক মৌলিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহ— 'আম', 'শহর রাজশাহীর আদিপর্ব', 'বাংলাদেশের বিলুপ্ত দীঘি- পুষ্করিণী-জলাশয়', 'নারদ নদ', 'বড়াল নদের ইতিকথা', 'ফিরিয়ে দাও সেই প্রবাহ', 'গঙ্গা-পদ্মা- পদ্মাবতী', 'আমাদের নদ-নদী', 'ব্রহ্মপুত্র নদ', “কোন আমটি কখন খাবেন', 'রাজশাহীতে পর্যটন সম্ভাবনা', 'বৃহত্তর সিলেটের সংক্ষিপ্ত বিবরণ- সিলেট মহানগরীর বিলুপ্ত জলাশয়' ইত্যাদি । ভালোলাগার বিষয় : বাংলাদেশের প্রকৃতি এবং এদেশের মানুষ ।