ফ্ল্যাপে লিখা কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দোর্দন্ড প্রতাপের আঁচ থেকে বাইরে অবস্থান করে বাংলা কবিতায় যে নতুন পাঠকরুচির জন্ম দেন জীবনানন্দ দাশ, তার স্বীকৃতি পেতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় জীবনের অন্তিম বছরগুলো পর্যন্ত। মৃত্যুর ডপর উভয় বাংলায় ব্যক্তি ও কবি জীবনানন্দকে আবিষ্কার এবং মূল্যায়নের বহুল প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়। সে সব কাজের ওপর ভিত্তি করে মোট পাঁচটি বিশ্লেষণধর্মী লেখা এ গ্রন্থ সংকলিত । বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের অন্যতম পুরুষদের একজন, হাসান আজিজুল হকের গল্পের কিছু স্বল্প আলোচিত বৈশিষ্ট্য নিয়ে আছে আরও তিনটি রচনা। এ ছাড়া অনিবার্যভাবে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর ‘আফ্রিকা’ কবিতা, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শওকত ওসমান, পার্ল এস বাক –এই তিন লেখকের উপন্যাস জননী এবং দুই বিদেশী লেখকের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে গুটিকয় লেখাও সন্নিবেশিত হল। আগ্রহী পাঠক এই সংকলনটি থেকে নতুন কিছু ভাবনার উপাদান খুঁজে পেতে পারেন।
ভূমিকা বিভিন্ন সময়ে লেখা অকিঞ্চিৎকর প্রবন্ধ গুলো নানা পত্র পত্রিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা এক সময় হয়তো হারিয়ে যেত, যদি না বইমেলাকে উপলক্ষ করে প্রকাশক মহলের উৎপাদনস্পৃহার উদ্দীপনা আমার মধ্যেও সংক্রমিত হত। তবে নানান জায়গা ছাপা হওয়া সে সব লেখা জড়ো করা খুব সহজ কাজ ছিল না। শেষ পর্যন্ত খুঁজে নেওয়ার কাজটি সমাধা হলে টাইপ করানো লেখাগুলো কোনো সংশোধনী ছাড়াই বছর দুয়েক শীতঘুমে পড়ে থাকার কারণে মূল কপি যায় হারিয়ে। ফলে টাইপিস্টের ভুল এবং ছেড়ে দেওয়া পঙক্তিগুলো স্মরণে এনে সংশোধন করার প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু পরিবর্ধন ও পরিমার্জনার প্রয়োজন পড়ে। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন আগে প্রকাশিত কয়েকটা লেখার সাথে করতে হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংযোজন । তবে এসব কোনো আয়াসসাধ্য কাজ ছিল না। কিন্তু প্রকৃতই বিপাকে পড়তে হয় হাসান আজিজুল হকের গল্পের উদ্ধৃতিগুলো সম্পাদান করার সময়। গল্পগ্রন্থগুলোর সংস্করণ আছে একাধিক, আবার বিভিন্ন সংকলনেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশনা থেকে। এ সব সংস্করণে বানানের ভিন্নতা ছাড়াও কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই গ্রন্থে একই শব্দের অভিন্ন বানানরীতিও রক্ষা করা হয়নি। এমন এক বিভ্রান্তিকর অবস্থার সুযোগে পরবর্তী সংস্করণে বাদ দেওয়া অথচ আমার পছন্দের কিছু বাক্যাংশ আমি উদ্ধৃতি থেকে ছেঁটে ফেলিনি। এই গ্রন্থে তাঁর গল্পের উদ্ধৃত অংশগুলোতে বানান এবং কিছু বাক্যাংশের ভিন্নতাদৃষ্টে বিভ্রান্তি অপনোদনের জন্য এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা করি। লেখাগুলো সম্পাদনার সময় নানানভাবে সাহায্য করার জন্য সসময়ের সুহৃদয় ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, অনুজপ্রতিম জাফর আহমদ রাশেদ ও মেসবাহউদ্দীন চৌধুরী এবং সাদিয়া মহাজীবনের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। আর ,প্রবন্ধের বইয়ের মতো চাহিদা বিহীন গ্রন্থ প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করে অবসর প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার আলমগীর রহমান যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিয়েছেন, তাঁকে ধন্যবাদ জানানোটা তাঁর অবদানের তুলনায় হবে অতি নগণ্য। বিনীত ফারুক মঈনউদ্দীন বনানী ,ঢাকা।
সূচিপত্র * ‘আফ্রিকা’ : সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতায় রবীন্দ্রনাথ * সেই আট বছর আগের একদিন * মৃত্যুর আগে জীবনের সংগীত * আলোচিত ও বিতর্কিত ‘ক্যাম্পে’ * প্রেম-অপ্রেম, দারিদ্র্যে ও দাম্পত্য জীবনানন্দ * ‘মাল্যবান’ : আত্নজীবনের নৈকট্য বিচার * তিন জননীর উপাখ্যান * প্রেম, যুদ্ধ ও জীবন : কবি সেন্দর পেতোফি * মিসরীয় সমাজবিকৃতির দলিল ‘ইমারাৎ ইয়াকুবিয়ান’ * হাসান আজিজুল হকের অমরণীয় রমণীরা * হাসান আজিজুল হকের অদ্ভুত আঁধার ভূবন * হাসান আজিজুল হকের গল্পের ভূগোল
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করলেও ফারুক মঈনউদ্দীন মূলত গল্পকার। তাঁর ছোটগল্পগুলো ভাষার অনবদ্য কাব্যিকতার জন্য প্রথম থেকেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। মানুষের অন্তর্লীণ অনুভ‚তি ও বহিরাচরণ তাঁর নিবিড় পর্যবেক্ষণে প্রমূর্ত হয়ে ওঠে। তাঁর প্রথম লেখা গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার সাহিত্য সাময়িকীতে, আর প্রথম গল্পগ্রন্থ ১৯৯০ সালে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর অন্যতম গল্পগ্রন্থ আত্মহননের প্ররোচনা। নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি অনুবাদ, সাহিত্য সমালোচনা, ভ্রমণ এবং অর্থনীতি বিষয়ক লেখালেখিতে নিজেকে ব্যাপৃত করেছেন। মার্কিন লেখক ক্লিনটন বি সিলির কবি জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যিক জীবনী অ্যা পোয়েট অ্যাপার্ট গ্রন্থটির অনুবাদের জন্য তিনি ‘আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার ২০১১’ এবং ভ্রমণগ্রন্থ সুদূরের অদূর দুয়ার-এর জন্য ‘সিটি-আনন্দআলো পুরস্কার ২০১৯’ লাভ করেন। তাঁর এযাবত প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে গল্পগ্রন্থ তিনটি, অনুবাদ চারটি, ভ্রমণ সাতটি, অর্থনীতি-ব্যাংকিং বিষয়ক গ্রন্থ পাঁচটি এবং প্রবন্ধগ্রন্থ একটি।