ভূমিকা সায়েন্স নিয়ে ভালোলাগা অনেকদিনের। একটা সময়ে সেই ভালোলাগার পরিধি সায়েন্স থেকে গিয়ে ঠেকে সায়েন্স ফিকশনে। বিভিন্ন সময় সায়েন্স ফিকশন পড়েছি, একটা সময় পরে যখন দেশের মাঝে পড়ার মতো তেমন কিছু খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে উঠল, তখন নজর দিতে হলো দেশের বাইরে। বিভিন্ন দেখকের সায়েন্স ফিকশন পড়ার সুযোগ হলো। আমেরিকান, রাশান, ব্রিটিশ, ভারতীয় জাপানিজ ... কে জানে আরও কত। দেখার সুযোগ হলো ভিনদেশি সব সায়েন্স ফিকশন মুভি, সিরিজ।
বিভিন্ন দেশের লেখকদের দেখা পড়তে গিয়ে যে আনন্দটুকু আমি পেয়েছি, তাই সবার সাথে শেয়ার করার একটা চেষ্টা হলো এই বই। গত বছর, ২০১১ বই মেলাতে প্রকাশ হয়েছিল আমেরিকান সায়েন্স ফিকশন গল্প-১। সেই একই ধারাবাহিকতায় এবং বইটির সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে আবার একই ধরনের আরেকটি চেষ্টা। আগের বারের মতো এবারেও চেষ্টা করা হয়েছে তুলনামূলকভাবে অখ্যাত লেখকদের বিখ্যাত কিছু গল্পকে তুলে নিয়ে আসার। যেহেতু বইটির নাম আমেরিকান সায়েন্স ফিকশন গল্প, তাই স্বাভাবিকভাবেই সেখানে স্থান পেয়েছে আমেরিকান লেখকদের বিভিন্ন গল্প।
সত্যি বলতে কি, আধুনিক সায়েন্স ফিকশনের উন্নয়নের সিংহভাগ অবদান দিতে হয় আমেরিকান লেখকদের। আর তারা লিখেছেনও বটে! প্রতিষ্ঠিত, বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন লেখকই সম্ভবত আছেন পাঁচশোর উপরে। আর সাধারণ ক্যাটাগরির লেখকদের কথা বাদই দিলাম।
এত এত লেখকের মাঝ থেকে গল্প বাছাই করাটা যে বেশ কঠিন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে তারপরেও কিছু গল্প বাছাই করা সম্ভব হয়েছে। যতগুলো বাছাই করা হয়েছিল, তার সবগুলো দেওয়া সম্ভব হলো না স্থান সঙ্কুলান না হবার কারণে। আর যে গল্পগুলো দেওয়া হলো, সেগুলোও যে সবার পছন্দ হবে, এমন কোনো কথাও নেই। তাবে সায়েন্স ফিকশন গল্পগুলো বাছাই করার সময় বেশি করে নজর দেওয়া হয়েছে তাতে যেন সায়েন্সের খটখটে তত্ত্বের থেকে ফিকশন থাকে বেশি। আশা করি গল্পগুলো সবার ভালো না লাগলেও অন্তত কিছু গল্প কিছু মানুষের ভালো লাগবে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে গিয়ে বলতে হয় প্রথমেই মা-বাবার কথা। তাঁরা নিয়মিত খোঁজ নিয়েছেন, তাগাদা দিয়েছেন, লেখা কতদূর হলো তা জানার চেষ্টার মাধ্যমে উৎসাহ দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হয় ইহতিশাম আহমেদ টিঙ্কুর কাছে। অনুবাদগুলোকে মানবিক করতে অসম্ভব রকম সাহায্য করেছেন তিনি। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হয় হাসান খুরশীদ রুমীর কাছে, অল্প কিছুদিনের পরিচয়েই যিনি অনেক আপন করে নিয়েছেন আমাকে, বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন, ভুলগুরো ধরিয়ে দিয়েছেন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হয় কিশোর দত্তগুপ্তের কাছে। ব্লগে তিনি ‘বাদ দেন’ নিক নেমে পরিচিত। সেই যবে থেকে অনুবাদ শুরু করেছি, তখন থেকেই তিনি আমার লেখার কঠিন সমালোচক! এই মানুষটির জন্য আর আমার হাত থেকে আজেবাজে লেকা বার হবার উপায় থাকে না, কোনো না কোনভাবে কিছু একটা করেই ছাড়বেন!
কৃতজ্ঞতা বন্ধু ইয়ামিন আরাফাত বাঁধনকে। একই রুমে থেকে রাতের পর রাত আলোকিত ঘর আর অর্ধেক নষ্ট কীবোর্ডের ভয়ানক শব্দ সহ্য করে আমাকে উৎসাহ দিয়ে গেছে লেখার।
সবশেষে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্যের প্রধান নির্বাহী ও স্বত্বাধিকারী আরিফুর রহমান নাইমের কাছে। এই মেলায় গতবছরের থেকেও বেশি সংখ্যক বই প্রকাশ করার ব্যস্ততাতেও তিনি আমার এই বইটির দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন, প্রকাশ করেছেন। সায়েন্স ফিকশন এর প্রতি তার ভালোবাসা কতটুকু তার প্রমাণ হিসেবে তিনি খুব শীঘ্রই আনছেন একটি বিশাল আকৃতির ও অসাধারণ মানসম্পন্ন সায়েন্স ফিকশন পত্রিকা, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ঝুঁকিতে। এজন্য তাঁকে জানাই সাধুবাদ। সবাইকে আবারও শুভেচ্ছা, ভালো থাকবেন।
খন্দকার ইশতিয়াক মাহমুদ ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েট। দেশের বাড়ি রংপুর হলেও শিক্ষা ও কর্মসূত্রে ঢাকাবাসী প্রায় এক যুগ । ছােটবেলা থেকেই বই পাগল ছিলেন এবং স্কুল পালিয়ে পাবলিক লাইব্রেরিতে বসে নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস ছিল এক সময় । অনুবাদ শুরু করেন ২০১১ সালের বই মেলায় প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত আমেরিকান সায়েন্স ফিকশন গল্প ১ দিয়ে, এবং নিয়মিতভাবে লিখে এই সিরিজে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বই প্রকাশ করেছেন ঐতিহ্য থেকেই । নিয়মিতভাবে অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে কাজ করে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।