ফ্ল্যাপে লিখা কথা নামকরণ থেকেই এ গ্রন্থের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা করা যায়। ‘প্রাসাদ ষড়যন্ত্র’ শব্দটি একটি পুরনো রাজনৈতিক পরিভাষা। বলা হয়, যেখানে প্রসাদ সেখানেই ষড়যন্ত্র। রাজতন্ত্রে প্রাসাদ হচ্ছে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের মূল কেন্দ্র। গণতান্ত্রিক-সমাজতান্ত্রিক বিভিন্ন উৎসকে নির্দেশ করে। চাতুর্যপরায়ণ নীতি তথা বৈধ-অনৈতিক পন্থায় ক্ষমতা বাগানোর অপকৌশলকে সাধারণভাবে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র নামে অভিহিত করা হয়। ইতিহাসের সব পর্বে এভাবে ক্ষমতা দখরের বিস্তর দৃষ্টান্ত রয়েছে। যার সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না, নেই।
সোজাসাপটা অর্থে দখল মানে অবৈধ অর্জন। ক্ষমতা দখল স্বভাবতই শক্তি এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। রাজতান্ত্রিক যুগে তো বটেই, গণতান্ত্রিক-সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায়ও অনেক সময় এই দুই অস্ত্রের সফল প্রয়োগ ঘটে। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হলে দেখা যায় একই ঘটনার পুররাবৃত্তি। রাজতন্ত্রে বৈধ-অবৈধ কারণে প্রকাশ্যে যুদ্ধ করে সাম্রাজ্য বিস্তার বা মসনদ দখল এবং বিভিন্ন লালসা পূরণ বৈধ ছিল। রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তন হওয়ায় সেসব স্বেচ্ছাচারিতা রহিত হয়েছে বটে, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ-উপনিবেশবাদ এখনও একেবারেই অতীতের বিষয় হয়ে যায়নি। আপামর জনগণের অনুমোদন ছাড়াই দুরাচারী শক্তি হামলে পড়ছে দুর্বল দেশের উপর। কথায় আগে, গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিতে পারে একজন সৈনিক। অর্থাৎ সামরিক অভ্যুত্থান তথা ক্যু করে ক্ষমতা দখল। গণঅভ্যুত্থান বলতে যা বুঝায় তাতে গণইচ্ছার প্রতিফলন ঘটলেও শেষাবধি তার ফল ভোগ করে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী।
সব মিলিয়ে ‘ক্ষমতার উৎস জনগণ’-একটি সদিচ্ছার ভাষাগত প্রকাশ মাত্র। এখনও ক্ষমতার নির্ধারক শক্তি ও ষড়যন্ত্র। এ গ্রন্থে প্রামাণ্য তথ্য তুলে ধরে সেই নির্মম সত্য দর্শানোর প্রয়াস পেয়েছেন লেখক।
লেখক মাহমুদ শামসুল হক পেশায় সাংবাদিক। এ পর্যন্ত একাধিক সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও প্রথম শ্রেণীর দৈনিক পত্রিকায় যথাক্রমে নির্বাহী সম্পাদক, ইনচার্জ এবং সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি লিখছেন কলাম, ধারাবাহিক, প্রবন্ধ, কবিতা, রম্য, উপন্যাস ও সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিবৃত্ত। বরাবরই তিনি প্রথার বিপরীতে লেখেন, বেছে নেন তুলনামূলকভাবে কম লেখা হয়েছে এমন বিষয়। এ ব্যাপারে তিনি স্বাতন্ত্র রক্ষায় যত্নবান, প্রকাশভঙ্গিতেও। জন্ম ২০ মার্চ, ১৯৫২ সন, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে। বাবা মাে. হাতেম আলী সরকার, মা জরিনা বেগম। লেখক এসএসসি ও বি.এ পাস করেন যথাক্রমে ১৯৬৬ ও '৭০ সালে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে একাধিক বিষয়ে পড়াশােনা করে গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতায় এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৮২ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ‘তিনটি ভয়ংকর উপদ্রব ছাড়াও লেখকের অন্যান্য উল্লেখযােগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- 'যুদ্ধাপরাধের বিচার’, ‘শাহবাগ আন্দোলন ও অন্যান্য লড়াই', 'নদী’ (নদ-নদী বিষয়ক)’, ‘প্রাসাদ ষড়যন্ত্র : ক্ষমতা দখলের ইতিহাস’, ‘নারীকোষ’, নারী-নক্ষত্র’, ‘বিশ্বাসের বিবর্তন’, ‘তন রাধা মন কানু'(পদাবলী অবলম্বনে উপন্যাস), ইরাক: রক্তাক্ত প্রত্নভূমি’, ‘সেই রাধা সেই কৃষ্ণ’, ‘দ্রোহ প্রেম আনন্দ বিষাদ', 'মানুষের শক্ৰমিত্র, রসগােল্লা' (রম্য), ‘ফিরে যাই নিজের ধুলায়, (কাব্যগ্রন্থ)। লেখকের ‘দেহকাব্য : বাংলা কবিতায় অঙ্গসুষমা’ গ্রন্থটি লাভ করেছে সেরা মানের গ্রন্থ-২০১৬ বাংলা একাডেমি পুরস্কার।