ফ্ল্যাপে লিখা কথা এলফ্রিডে ইয়েলিনেক জন্ম অস্ট্রিয়ার মুরুৎসসুশ্লাগ শহরে আলপ্স পর্বতমালার পাদদেশে ২০ অক্টোবর ১৯৪৬ সালে। বড় হয়েছেন ভিয়েনায়। সেখানে স্কুলে লেখাপড়া করেন।অল্পবয়সে পিয়ানো ও অরগান বাজাতে শেখেন। ভিয়েনা কনজারভেটরিতে সঙ্গীত বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন। ১৯৬৪ সালে ‘আরবাইট গিমনাজিয়াম’ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেণ। তারপর সঙ্গীত শিক্ষালাভের পাশাপাশি ভিনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও শিল্প-ইতিহাস বিষয়ে পড়ালেখা করেন। অরগান বাদনে ডিপ্লোমা পান ১৯৭১ সালে। এলফ্রিডে ইয়েলিনেকের সাহিত্য জগতে প্রবেশ কবিতার মধ্য দিয়ে। ১৯৬৭ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লিজাস শাটেন’ প্রকাশিত হয় । অনুবাদের কাজও করেছেন প্রচুর। তার প্রথম উপন্যাস ‘ভিয়ার জিন্ড লক ফোয়েগেল’ ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়। তার সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উপন্যাস ‘ডি ক্লাভিয়ার স্পিলারিন’ (দ্য পিয়ানো টিচার) ।ঔপন্যাসিক এলফ্রিডে ইয়েলিনেক একই সঙ্গে নাট্যকার, কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ।
এলফ্রিডে ইয়েলিনেক তার সাহিত্য কর্মের জন্য এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২২টি পুরস্কার পান। তাঁর জীবনের প্রথম পুরস্কারটি ছিল ১৯৬৯ সালে অস্ট্রিয়ার তরুণদের সাংস্কৃতিক সপ্তাহে পাওয়া। ১৯৮৬ সালে জার্মান ভাষা সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য তিনি হাইনরিশ বোল পুরস্কার পান। ১৯৯৮ সালে তার সমগ্র সাহিত্যকর্মের জন্য সম্মানজনক গিওর্গ বুখনার পুরস্কার পান এবং ২০০৪ সালে জয় করে নেন নোবেল পুরস্কার।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আলােড়িত করেছিল বিশ্বের নানা স্থানে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা মানুষকে, দূর দেশে বসবাসরত বাঙালিদের অন্যতর জীবনেও এই ঢেউ আছড়ে পড়েছিল, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা সচেষ্ট হয়েছেন সময়ের ডাকে সাড়া দিতে, মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে যথাসাধ্য ভূমিকা পালনে। বিশ শতকের সত্তরের দশকের সেই সূচনাকালে প্রবাসী বাঙালিরা সংখ্যায় খুব বেশি ছিলেন না, কিন্তু তাদের ভূমিকা কতভাবেই ফলপ্রসূ হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে। এই কীর্তিগাথা নিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হলেও সেসব মূলত যৌথ নাগরিক উদ্যোগের বিবরণী তুলে ধরেছে, ব্যক্তি-মানুষের পরিচয় সেখানে বিশেষ মেলে না। এই গ্রন্থে বিবৃত হয়েছে এমনি দুই ব্যক্তির ভিন্নতর ভূমিকার কথা, একজন সুনীল দাশগুপ্ত, দেশভাগের পূর্বেই যিনি দেশত্যাগ করে উদ্বাস্তু জীবন বরণ করেছিলেন, পরে স্থিত হয়েছিলেন তঙ্কালীন পূর্ব জার্মানিতে, আরেকজন মােশাররফ হােসেন, পাকিস্তান সরকারের বৃত্তি নিয়ে গিয়েছিলেন পশ্চিম জার্মানিতে। একাত্তরে তাদের ভূমিকার ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গ চিত্র এঁকেছেন। নাজমুন নেসা পিয়ারি, জার্মানিতে সম্প্রচারমাধ্যমে দীর্ঘকাল কাজ করে কৃতির স্বাক্ষর যিনি রেখেছেন। রাষ্ট্র ও ভৌগােলিক বিভাজন ও দূরত্ব অতিক্রম করে মানবসত্তার যে অসীম আকাশে সর্বজনের মিলন ঘটে সেই তাড়না একেবারে বাস্তব কর্মকাণ্ডে মূর্ত হয়ে উঠেছিল তার পরিচয় মিলবে এই গ্রন্থে, স্বাধীনতা সংগ্রামের অভিঘাত ও প্রতিরােধের একেবারে আলাদা এক ছবি, যা পাঠকের সামনে মেলে ধরবে মুক্তিযুদ্ধের বহুমাত্রিকতার অন্তরঙ্গ ও অন্যতর হৃদয়ছোঁয়া ভাষ্য।