ফ্ল্যাপে লিখা কথা ‘কড়া আলাপ’ শুরু হয় ২০০০ সনে চ্যানেল-আইতে, অর্থাৎ এই স্যাটেলাইট চ্যানেলটির জন্মের পরের বছর থেকেই কড়া আলাপ শুরু হয়। প্রথম থেকেই এর ব্যতিক্রমী চরিত্র দর্শকদের কাছে উন্মেচিত হয়- এটা স্রেফ প্রশ্ন-উত্তরের সাক্ষাৎকার ছিল না, এটা হয়ে উঠেছিল একটা বিষয়ে উপস্থাপক ও অতিথির মধ্যে সমানে সমানে আলোচনার ঝড়। দর্শকরা শুধু অতিথির কাছ থেকে তথ্য পান না, উপস্থাপকও তার দিক থেকে অনেক তথ্য হাজির করেন বা অতিথিকে খেই ধরিয়ে দেন।
পাঠক, শ্রোতা ও দর্শকরা জানেন যে টেলিভিশন ‘টক শো’ গুলো রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত মতবাদ প্রচারের একটা বড় অঙ্গ। অনেক টক শো অসাবধানতাবশত বা ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজে মদদ দেয়। কড়া আলাপ এ ব্যাপারে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করে এসেছে। নিরপেক্ষতার জন্য কড়া আলাপের খ্যাতি সবাই মেনে নেয়। ‘কড়া আলাপে’র আলোচনায় তাত্ত্বিকতা একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যতিক্রম। এমন কি বিশ্লেষণ করলে দেখা যেতে পারে যে অতি সাধারণ বিষয়ের পেছনে যে সুগভীর আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ও অন্যান্য ঐতিহাসিকতা বর্তমান তা এই অনুষ্ঠানের আলোচনায় চলে আসে। দর্শকরা সহজেই বুঝতে পারেন যে ‘কড়া আলাপে’র উপস্থাপক যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন সেসবে তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা আছে, তিনি কাগজে প্রশ্ন লিখে আনা সঞ্চালক নন।
প্রায় পাঁচশত কড়া আলাপের মধ্য থেকে কয়েকটা মাত্র নির্বাচন করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। সে জন্য আমরা কয়েকটি পর্বে কড়া আলাপের অনুলিখন প্রকাশ করার পরিকল্পনা নিয়েছি।
১৯৭১এ মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলামাবাদে কর্মরত ড. ফজলুল আলম পালিয়ে সপরিবারে ইংল্যান্ডে চলে যান। ১৯৯৬ সনে সুদীর্ঘ পঁচিশ বছর পরে দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে লাইব্রেরি অটোমেশান প্রজেক্ট (উটখঅচ) চালু করেন ও ইউএনডিপি অনুদানের প্রস্তাবিত সকল শর্ত সফলভাবে সময়মত কার্যকর করেন। প্রথম কয়েক বছর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কলাম লিখলেও ২০০২ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর পেয়ে সৃজনশীল ও মননশীল সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন। ২০০৪ সনে প্রকাশিত উপন্যাস ক্রান্তিকালে প্রতারক লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ডিগ্রি কোর্সে মনোনীত হয়। ইংল্যান্ডে তার দুটি প্রবন্ধ/গবেষণা বই প্রকাশিত হয়। সেখানে থাকা কালে তিনি নিজ খরচে লাইব্রেরিয়ানশীপে চার্টার্ড, এথনিক রিলেশান্সে মাস্টার্স ও কালচারাল স্টাডিজে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৭ সনে সংস্কৃতির সত্যমিথ্যা প্রকাশ করে তিনি নিজেকে একজন সংস্কৃতি অধ্যয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তারপর তিনি প্রতি বছর সংস্কৃতি বিষয়ে একটা করে সুচিন্তিত ও তথ্যমূলক বই প্রকাশ করেন। ২০১০ সনে প্রকাশিত সংস্কৃতি সমগ্র সুধী মহলে ও বিদ্বদ্গোষ্ঠীতে বহুল সমাদৃত। তিনি সম্পূর্ণ নতুন বিষয় ‘সংস্কৃতিতত্ত্ব বিরোধিতা’র ওপরও লিখেছেন। তার পাঁচটি ছোটগল্প নাটক ও টেলিফিল্ম হিসেবে টেলিভিশনে প্রদর্শিত হয়েছে। তাঁর একটা উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মানাধীন। তিনি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সর্বপ্রথম বিষয়ভিত্তিক টক-শো ‘কড়া আলাপে’র পরিকল্পক ও উপস্থাপক। তিনি দুটো গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছেন, সিটি ব্যাংকÑআনন্দআলো সাহিত্য পুরস্কার (২০০৮) ও বাংলা একাডেমি পরিচালিত সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৪)।