বুদ্ধের ধর্ম-দর্শন তথা বুদ্ধবাণী গ্রন্থাকারে সংকলিত হওয়ার পূর্বে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক পর্যন্তÑএই প্রায় চার-পাঁচশ’ বছর স্মৃতিতে ধারণপূর্বক মুখে মুখে প্রচার করা হতো। মুখের কথা নড়চড় হলে মুখে মুখে প্রচারিত যে কোনো বিষয়ের অর্থান্তর ঘটা স্বাভাবিক। বিশেষত অন্যান্য ভাষার প্রভাব, উচ্চারণ, বোধের তারতম্য এবং বোধ অনুযায়ী ব্যাখ্যার কারণে এই অর্থান্তর ঘটে থাকে। উপর্যুক্ত কারণে মুখে মুখে প্রচারিত বুদ্ধবাণীরও কিছু কিছু বিষয় অর্থান্তরিত হয়ে বিতর্কিত হয়ে উঠেছিল। বুদ্ধবাণীতে বাগধারা, সমাস এবং সন্ধিযুক্ত, জটিল, দ্ব্যর্থক এবং উহ্য অনেক পদ বা বিষয়বস্তু রয়েছে, যা সকল শ্রেণীর পাঠকের নিকট বোধগম্য নয়। ফলে সেসব দ্ব্যর্থক, উহ্য, দুর্বোধ্য, অর্থান্তরিত ও বিতর্কিত পদ বা বিষয়ের সঠিক অর্থ প্রকাশ এবং সহজ-সরল ব্যাখ্যামূলক এক শ্রেণীর সাহিত্যকর্ম রচিত হয়, যা পালি সাহিত্যের ইতিহাসে ‘অট্ঠকথা’ (অর্থকথা/অর্থতত্ত্ব বা ভাষ্য) নামে পরিচিত। বুদ্ধের ধর্ম-দর্শন পালি অট্ঠকথা সাহিত্যের অন্যতম উপজীব্য বিষয় হলেও এতে প্রসঙ্গক্রমে সমকালীন ভারত এবং শ্রীলঙ্কার ধর্ম-দর্শন, সমাজ-সংস্কৃতি, শিক্ষা-শিল্প, নৃতত্ত্ব, ভূগোল, অর্থনীতি, রাজনীতি প্রভৃতি নানা আঙ্গিকের বিষয়বস্তু আলোচিত হয়েছে। এ কারণে পালি অট্ঠকথা সাহিত্যকে ভারত ও শ্রীলঙ্কার প্রাচীন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ আধার হিসেবে গণ্য করা হয়। ড. দিলীপ কুমার বড়–য়া পালি অট্ঠকথা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত গ্রন্থে অট্ঠকথা সাহিত্যের ইতিহাস তথা অর্থতত্ত্বের উদ্ভব-বিকাশ, গুরুত্ব, শ্রেণী-বিন্যাস, বিবর্তন এবং অট্ঠকথাচার্যদের জীবন-দর্শন নানা দিক তুলে এনেছেন। আমাদের প্রত্যাশা, গ্রন্থটি পালি ভাষা ও সাহিত্যপিপাসু এবং অনুসন্ধিৎসু যে কোনো পাঠকের নিকট সমাদৃত হবে।
Dr.Dilip Kumar Barua, জন্ম (৩১ ডিসেম্বর ১৯৬৭) চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনীয়া থানার শিলক গ্রামে। পিতা নিরোদ বরন বড়–য়া, মাতা পারিকা বড়–য়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বি.এ সম্মান ও এম.এ ডিগ্রি লাভ; ১৯৯৫ সালে সংস্কৃত ও পালি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান; ২০০০ সালে জাপানের আইচি গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন এবং ২০০২ সালে জাপান সরকারের জেএসপিএস স্কলারশিপে পোস্ট-ডক্টরেট গবেষণা সমাপ্ত করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ : বৌদ্ধধর্ম (১৯৯৭), উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়; Syncretism in Bangladeshi Buddhism (2002), Nagoya, Japan; গন্ধবংস (২০০৫), আজকাল প্রকাশনী, ঢাকা; বৌদ্ধরঞ্জিকা (২০০৫), নবযুগ প্রকাশনী, ঢাকা; সদ্ধম্ম-সংগহো (২০০৭), পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; কীর্তিমান বৌদ্ধ সাহিত্যিক ও দার্শনিক (২০০৮), পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; বুদ্ধঘোসুপ্পত্তি (২০০৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, ঢাকা এবং পালি ভাষার ইতিবৃত্ত (২০১০), বাংলা একাডেমী, ঢাকা। এছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা জার্নালে ডক্টর বড়–য়ার ৩৫টির অধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভারতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগদান ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এবং চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত।