"বাছাই রম্য" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: এক দুপুরে আনিস ভাইয়ের ফোন। তুমি কি অফিসে? তাইলে একটু আমার রম্নমে আস। আমি অফিসেই ছিলাম। তাই একটু না পুরােপুরি গিয়ে হাজির হলাম। উনি উনার একগাদা বই ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এগুলা পড়। আমি বললাম, জ্ঞান লাভের জন্য? উনি বললেন, হ, তােমার জ্ঞানের অভাব আছে। জ্ঞানই শক্তি। মনােযােগ দিয়ে পইড়াে কিন্তু। উনি সিরিয়াসলিই পড়তে বলতেছেন নাকি রসিকতা বুঝতে না পেরে বলি, আপনার রম্য লেখা তাে আমি নিয়মিতই পড়ি। এ পর্যত্ম যা লিখছেন সব গােগ্রাসে পড়েছি। আবার পড়তে বলতেছেন? কোন পরীঙ্গা-টরীড়া দিতে হবে নাকি আপনার লেখার উপর? এমসিকিউ হইলে সুবিধা। খাটনি কম। আনিস ভাই বলেন, ফাইজলামি কইরাে না। বিভাস প্রকাশনী আমার একটা বাছাই রম্য বের করতে চায়। তুমি এগুলা থেকে একটু বাইছা দাও। মনে মনে বলি, কেমনে কি? ইদানীং ফেসবুকের স্ট্যাটাস ছাড়া কিছু পড়ি না, পড়তে ভালােও লাগে না। এতগুলাে বই কেমনে পড়বাে? বাঁচার জন্য বলি, আনিস ভাই আপনার সব লেখাই তাে অসাধারণ। বাছা-বাছির কোন অবকাশ নাই। সবগুলাে এক মলাটে বাই ফেলেন। কোন লেখা বাদ দিয়ে পাঠককে রস বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। আনিস ভাই এই তেল নিলেন না। তা তাে বটেই, তা তাে বটেই বলতে বলতে টোপ ফেললেন একটা, যাও তুমি লেখা বাছাই করে দিলে এই বই তােমার নামে হবে। বইয়ের নাম হবে, সিমু নাসের সম্পাদিত আনিসুল হকের বাছাই রম্য। এমনকি বইয়ের রয়্যালিটির টাকাও পাবা। আমার লেখা বইয়ের টাকায় তুমি কোটিপতি হয়ে যাবা। এ সুযােগ জীবনে বার বার আসবে না। আমি সেদিন থেকে সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বই পড়া শুরম্ন করলাম। মানুষ বলে সঙ্গ দোষে লােহা ভাসে। আমি বলি, একই লেখকের লেখা দিন রাত পড়লে পাঠকের উপর লেখকের শারীরিক ও মানসিক প্রভাব পড়ে। আনিস ভাইয়ের সাত খন্ড রম্য রচনা পড়তে পড়তে আমার মাথার চুল সামনের দিকে আনিস ভাইয়ের মতাে পাকা শুরম্ন করলাে, গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ন থেকে ফর্সায় টার্ন নিলাে, মনের মধ্যে গােফ রাখার বাসনা জাগলাে। অফিসে উনি যাদের যাদের তুমি তুমি করে বলেন আমারও তাদের তুমি তুমি
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।