সংস্কৃত সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভাধর কবি কালিদাস। বাল্মীকি ও বেদব্যাসের পরেই সংস্কৃত সাহিত্যে তাঁর স্থান। কালিদাস বলতে আজ আমরা শুধু এক ব্যক্তিকেই বুঝি না, বরং প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের এক সুবর্ণ যুগকে বুঝি-যে যুগের সাহিত্য-সংস্কৃতির মূর্ত প্রতীক মহাকবি কালিদাস। ভারতীয় উপমহাদেশের এক গৌরবময় যুগেই কালিদাসের আবির্ভাব। উপমহাদেশের সাহিত্য-গগনে তাঁর পদার্পণ আবির্ভাবের মতোই একটা বিরাট ব্যাপার। তাই বলে তিনি কাব্যসাধনার ঐতিহ্য শূন্য অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো আসেননি। তাঁর আবির্ভাবের পেছনে ছিল লৌকিক সংস্কৃত সাহিত্যের দীর্ঘকালীন চর্চা ও এ ভাষায় সাহিত্য রচনার দীর্ঘবিসারী ঐতিহ্য ও ইতিহাস। বাল্মীকির রামায়ণ, ব্যাসদেবের মহাভারত, ভাসের নাটকাবলী, অশ্বঘোষের রচনাবলী (যদিও এ বিষয়ে কিছু মতভেদ আছে) কালিদাসের পূর্ববর্তী যুগের সাহিত্য সাধনার অভ্রান্ত নিদর্শনরূপে বর্তমান রয়েছে। কালিদাস তাই ঐতিহ্যহীন আদিহীন পরমাশ্চর্য নন, তাঁকে প্রকাশিত করেছে সাহিত্যের সুসমৃদ্ধ এক প্রেরণাময় যুগ। কবির স্বাভাবিক প্রতিভা ও নিরলস অধ্যবসায় তাঁকে মহাকবির মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাঁর সমকালীন যুগে এ উপমহাদেশের একজন অধ্যবসায়ী উৎসাহী প্রতিভাধর ছাত্রের পক্ষে যতদূর শিক্ষালাভের সুযোগ ছিল, কবি কালিদাস কখনই তা থেকে বঞ্চিত হন নি।