অনুবাদক ও ব্যাখ্যাকারের কথা (রাব্বি আউদুবিকা মিন হামাজাতিশ শায়াতিন ওয়া আউদুবিকা রাব্বি আই ইয়াহ্্দুরুন) আল্লাহ্্ বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। তিনি পরমোপাষ্য এক, অনাদি, অনন্ত, সর্বজ্ঞ, সর্বদ্রষ্টা, সর্বস্রষ্টা, সর্বশক্তিমান, সর্বপ্রাণ স্রষ্টা, সর্বপ্রাণে আহার্য দাতা, সর্বসংহারক, পুনরুজ্জীবক ও ন্যায়দÐধর। তিনি আলোকময় মহাশক্তি। তিনি চরম চিন্ময়শক্তি। বিশ্বজগতে স্থিত দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সকল জীব ও জড় তিনি সৃষ্টি করেছেন। সকল জীবশক্তি ও জড়শক্তির শক্তি, তিনিই প্রদান করেছেন এবং তিনি যে কোনো সময় তা প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। সুতরাং তাঁর শক্তির বাইরে এক বিন্দু বিসর্গ শক্তির অস্তিত্ব নেই। তিনি তার সৃষ্ট জগতের ওপর আসন পেতে বসে থাকেন না; বরং তিনি তাঁর সৃষ্টিকে ধারণ করে আছেন। তাঁর সিংহাসন আরশ হচ্ছে তাঁর ক্ষমতা ও প্রভাব বলয়; তিনি কোন আসননির্ভর নন। তিনি স্বয়ম্ভু। তিনি জন্মদান বা গ্রহণ করেননি। তাঁর সগৌরব চির অবস্থিতি এবং তাঁর সৃষ্টি এ দু এর বাইরে আর কিছু নেই। তাঁর সংগে কারোর এক বিন্দু বিসর্গ অংশীদারিত্ব নেই। তিনি মনুষ্যকে সুপথে পরিচালিত করার জন্য দু লক্ষ চব্বিশ সহস্র বা তদপেক্ষ অধিক বা ন্যূন সংখ্যক বাণীদূত প্রেরণ ও একশ চারটি গ্রন্থ [কিতাব ও সহিফা] অবতারণ করেছেন। তন্মধ্যে একশত চারতম গ্রন্থ হচ্ছে এ কুরআন। যা আমি বাংলায় অনুবাদ করেছি মূল আরবি কুরআন হতে বিদ্যমান বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদসমূহের সহায়তায়। এ গ্রন্থে আল্লাহ্্র নিকট হতে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে যে, এ গ্রন্থে এক বিন্দু বিসর্গ সন্দেহ নেই। ধর্মানুরক্তদের জন্য এটি পথ প্রদর্শক যাঁরা বিশ্বাসী, সালাতপ্রার্থনা সংস্থাপক ও আল্লাহ্্ প্রদত্ত জীবিকা হতে জীবন নির্বাহ করেন এবং এ গ্রন্থ ও এর আগে অবতারণকৃত আরও একশ তিনটি গ্রন্থে বিশ্বাস করেন এবং পরলোকে বিশ্বাস করেন। আল্লাহ্্ খ্রিস্টিয় ৬১০ সাল হতে ৬৩২ সাল পর্যন্ত সময়ের ব্যপ্ত পরিসরে এ গ্রন্থ স্বর্গদূত জিবরাইল (অ্যাঞ্জেল গ্যাবরিয়েল) এর মাধ্যমে মহান বাণীদূত [রাসুল] মুহম্মদ (দ:) এর ওপর অবতারণ করেন। এ গ্রন্থের নাম কুরআন। এর অর্থ গ্রন্থনা। এতে তিরিশটি অংশ ও একশ চৌদ্দটি অধ্যায় রয়েছে। পুরো কুরআন জুড়ে আছে মানুষের জন্য জীবন পরিচালনার আদর্শ বিধি। মানুষের জন্য অ-কল্যাণ আণয়ন করে এমন বাক্য বা শব্দ এ গ্রন্থে নেই। এ গ্রন্থ মানুষের জন্য আল্লাহ্্র সদুপদেশ মাত্র। পবিত্রগণ ছাড়া কেউ এ গ্রন্থ স্পর্শ করেন না। এ কুআন আল্লাহ্্র অনুগ্রহে আজও অবিকৃত রয়েছে। উ’তমান বিন আফফানের যুগে হযরত আলি সহ ৬ জন সাহাবা গ্রন্থাকারে কুরআন প্রকাশ করন। এতে ১১৪টি অধ্যায় আছে। উমর বিন খাত্তাব বলেছেন কুরআনে রজম এর জন্য আরও একটি সুরা ছিল এখন নেই। সুরা ফাতিহা আরম্ভ হয়েছে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নামাজে তা বলা হয় না। অন্য কোন সুরায় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম নেই। কিন্তু তা লেখা হয়। সুরা ফাতিহার শেষে আমিন নেই, কিন্তু লেখা হয়। এগুলো কুরআনকে ক্ষতবিক্ষত করে। ৬৬১ সালের পর রাজনৈতিক প্রয়োজনের সাহাবির সংখ্যা পরিবর্তন করা হয়। নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী যারা চোখ দিয়ে নবিকে দেখেছেন তারা সাহাবি নিষ্পাপ ও বেহেশতি। তারা যদিও রাসুলকে কাছ থেকে একটি উপদেশও (হাদিস) শুনেনি। সিফফিনের হত্যাকাÐসহ জঘন্য পাপ হতে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য এবং হাদিস বানানোর জন্য এই পদক্ষেপ; অথচ কুরআনের সুরা তওবাতে ১০০ ও আনফালের ৭৪ আয়াতে আল্লাহ্্ ভিন্ন কথা বলেছেন। কুরআনের বিধানের বিরুদ্ধে গিয়ে বলা হলো এরা সাহাবি, এদের কোন কাজই পাপ নয়; এবং এদের সমালোচনা করা পাপ। এভাবে নারকীয় হত্যাকাÐের (সিফফিন ও কারবালার) সমালোচনা বন্ধ করা হলো। নবিগণ আসমানি কিতাব পাল্টাতে পারেন না। সুতরাং হাদিস দ্বারা কুরআনের কোন অংশবিশেষ পাল্টানো সম্ভব নয়। নবিগণ নিষ্পাপ আর ইসলাম ত্যাগীগণ কাফির। দুজন জলিল কদর ওহি লেখক যথা উবায়দুল্লা বিন জাহাশ ও আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ ইবনে সারা ইসলাম ধর্মত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছেন। যে এক অক্ষর অহি লেখেনি তাকে জলিল কদর সাহাবি নাম দিয়ে তার পাপ স্খলনের চেষ্টা করাও ভয়াল পাপ। পবিত্র কুরআনকে কেন্দ্র করে ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস ও বিশ্বাসমালা এবং যাবতীয় ধর্মীয় ক্রিয়া আবর্তিত। কুরআন হচ্ছে প্রিন্সিপাল ডিভাইন কমান্ডমেন্টস। কুরআনের স্থানে স্থানে এর সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে। আল্লাহ্্ সাপ্লিমেন্টরি ডিভাইন কমান্ডমেন্টস দ্বারা এ প্রয়োজনীয়তা পরিপূর্ণ করেছেন। এ সম্পূরক প্রত্যাদেশগুলোকে লিখতে নিষেধ করা হয়েছে কিন্তু পূর্ণাঙ্গরুপে বাস্তবায়ন করতে আদেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ্্র দূত এবং আসসাবিকুনাল আউয়ালিনা মিনাল মুহাজিরিন ওয়াল আনসারি ওয়াল্লাদিনাত তাবাউহুম বি ইহ্্সান গণ সাপ্লিমেন্টরি আনরিটেন ডিভাইন কমান্ডমেন্টস এর ভিত্তিতে ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস ও বিশ্বাসমালা, সালাত, সাওম, হজ্্ ওমরাহ, ইহরাম, তালবিয়া, জাকাত, ইল্ম, তাহারাত, উদু, তায়াম্মুম, গুসল, ঋতুস্রাব, আদান, জুমুয়া, ইদ, তাহাজ্জুদ, জানাজার সালাত, কাফন, কবর খনন, কবরস্থকরণ, ক্রয়-বিক্রয়, কিসাস, হিবা, সাক্ষ্য, সোলে, ওয়াসিয়ত, আল্লাহ্্র সৃষ্টি প্রক্রিয়া, নবিকাহিনি, কিয়ামত, তাফসির, খুৎবা, বিবাহ, তালাক, নাম রাখা, আকিকা, ত্বকছেদন, আতএমা, আশরেবা, হালাল, হারাম, মাকরুহ, লিবাস, আখলাক, ব্যক্তিগত প্রার্থনা, শপথ, মানত, হুদুদ, দিয়াত, রিকাক, ইতিহাস, ইহসান, আহকান আরকান, ইফতার, সাহর, কেফালাহ, ওকালা, মুজাআরাহ, মুসাকাত, এসতেকরাজ, খুসুমাত, লোকতা, শেরকাহ, রেহান, এত্ক্, মুকতাব, ফাজায়েল, আদাব, ইস্তেজান, কদর, আইমানি, ফারায়েজ, ইকরা, হিয়াল, তাবির, ফিতান, তামান্না, আখবার, ইতিসাম, জান্নাত, জাহান্নাম, হাসর, মিজান, সিরাত, আরাফ, সিদরাতুলমুন্তাহা, লওহেমাহফুজ, মালাইকা, আরশ, কুরসি, কুফর, শিরক, নিফাক, ফিসক, তওবা, ইত্যাদি পূর্ণরূপে অবয়ব প্রাপ্ত হয়েছে। বস্তুতপক্ষে এগুলো কুরআনের সংলাগ অথবা কুরআনের অ-লিখিত অংশ অথবা সম্পূরক অংশ মর্মে বিবেচ্য। আল্লাহ্্র আদেশে আল্লাহ্্র দূত বলেছেন যখন আমি ইসলাম ধর্মের ধর্ম সংক্রান্তে কোন কথা বলি, তখন তোমরা তা মেনে নিও, অর্থাৎ বাস্তবায়ন করতে আদেশ দিয়েছেন, লিখতে বলেননি। সারা পৃথিবী জুড়ে আমরা মুসলিমরা একই প্রকারে ধর্মাচার করি। সে কারণে কুরআন ছাড়া গ্রন্থ আকারে আর কোন লিখিত কিছু প্রয়োজন নেই। পনেরজন সাহাবা আল্লাহ্্র দূতের অলক্ষ্যে তাঁর কথা, কাজ ও অনুমোদনের বিষয় লিখে রাখেন। আল্লাহ্্র দূত এগুলো বিলুপ্ত করার নির্দেশ দেন। অতঃপর কুরআন ব্যতীত বৈধ লিখিত কোন কিছু আর নেই। তবে ধর্মাচার পদ্ধতি লিখতে চাইলে তা সারা পৃথিবীর মুসলিমরা সর্বসম্মতিক্রমে লিখতে পারেন। আল্লাহ এ কুরআন অবতারণ করেছেন। আল্লাহ্্র দূত তাঁর সাহাবিদের সহযোগিতায় প্রচুর কষ্ট, দুঃখ, দুর্দশা, দুর্ভোগ, নির্যাতন, অসহায়ত্ব, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, প্রাণহানী―প্রভৃতির মাধ্যমে এ কুরআনকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। সাহাবিগণ (১) আনসার, (২) মোহাজের ও (৩) বিশুদ্ধ অনুগামি এই তিন শ্রেণির। আনসার ও মোহাজের সাহাবিগণ আসসাবিকুনাল আউয়ালুন হিসেবে অভিহিত। তাদের সংখ্যা কমবেশি ৬০/৭০ জন [নারীসহ]। আর তৃতীয় শ্রেণির সাহাবির সংখ্যা ২৩০ বা ২৪০, মোট ৩০০ জন। অন্যরা রাসুলের যুগের সাধারণ মুসলিম, তাঁদের অধিকাংশই মক্কা জয়ের পর মুসলিম হন। তাঁরা রাসুলের সান্বিদ্ধ লাভ করতে সক্ষম হননি। সে কারণে তাঁরা সাহাবার মর্যাদা পাননি এবং তারা ইসলামি জীবনে তেমন অভ্যস্ত হতে পারেননি। আলি ইবনে আবু তালিব জাইদ বিন তাবিত, আবু বকর, বেলাল, হামজা, উৎমান, সাইদ বিন জাইদ, আবু উবায়দা, সালমান ফারসি, আবুদর গিফারি, আবু সালামা, ইয়াসির আমির, আম্মার ইয়াসির, দুবায়ের, আব্দুর রহমান বিন আউফ, সাদ, তালহা, মিকদাদ, জাফর, উবায়দুল্লাহ্্, আরকাম, উৎমান বিন মাজুন, কাদামা বিন মাজুন, উবায়দুল্লাহ্্ বিন মাজুন, সাদ বিন জাইদ, খাব্বাব, আব্দুল্লাহ হুজালি, আবু উবায়দা বিন জারবা, আবু হুদাইফা, উমর বিন খাত্তাব, আব্দুল্লাহ্্ আসাদি ও মুসাইব এবং প্রায় সমসংখ্যক নারী সাহাবা আছেন। পরবর্তী পর্যায়ে অনৈতিকভাবে সাহাবির সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়। ওদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক বিভিন্ন সময়ে অসততা, মিথ্যাচার, চুরি, মদ্যপান ও ব্যাভিচারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন, এর রেকর্ড আছে। পূর্ববর্তী আসসাবি কুনাল আউয়ালুন এবং তাবাউহুম বি ইহসানভ‚ক্ত ৩০০ জন পুণ্যবান সাহাবা ব্যাতীত অন্যদেরকে মুসলিম জনতা অনুসরণযাগ্য ব্যক্তি হিসেবে মানতে রাজি না। ইসলাম ধর্ম কী? ইসলাম ধর্ম মানব জাতির জন্য স্বর্গীয় দূত জিবরাইলের মাধ্যমে রাসুল মোহাম্মদ (স.) এর নিকট অবতারিত আল্লাহ্্র বাক্য। আল্লাহ্্র প্রধান বাক্যাবলি কুরআন: এটি লিখিত। কুরআনের বহু জায়গা আছে যেখানে আল্লাহ্্র বিস্তারিত বাক্য প্রয়োজন। যেমন আল্লাহ্্ বলেছেন―আকিমুস সালাতা―সালাতকে প্রতিষ্ঠিত রাখো। কিন্তু সালাত কি এর কাঠামো কি? সে সম্পর্কে কুরআনে কিছুই বলা হয়নি। আল্লাহ্ সাপ্লিমেন্টারি ডিভাইন কমান্ডমেন্টস্্ দ্বারা এ প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেছেন। রাসুলের কাছে পাঠানো আল্লাহ্্ তার সাপ্লিমেন্টেশন বাস্তবায়ন করতে বলেছেন কিন্তু লিখতে নিষেধ করেছেন। ইসলাম ধর্মের সকল ধর্মাচার আল্লাহ্্র অ-লিখিত বাক্য দ্বারা পরিপুষ্ট হয়েছে। ইসলামি জগতে আল্লাহ্্র অলিখিত বাক্য দ্বারা সর্বত্র সকল ধর্মাচার পালন করা হচ্ছে। অঞ্চলভেদে খুব সামান্যই ব্যতয় বা ব্যতিক্রম বিদ্যমান আছে। ইসলাম ধর্মে কুরআন ছাড়া অন্য কোন গ্রন্থ লিখিত, রচিত ও মুদ্রিত হওয়ার সুযোগ নেই। যারা হাদিসপন্থী তাঁরা আল্লাহ্্র অলিখিত সাপ্লিমেন্টারি ডিভাইন কমান্ডমেন্টেস্্কে হাদিসের অধিভ‚ক্ত করে নিয়েছেন। তাঁদের মতে হাদিস হচ্ছে রাসুলের কথা, কাজ ও অনুমোন। বস্তুতপক্ষে ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় কাজে আল্লাহ্্র আদেশ ছাড়া নবি কোন কথা বলতে পারেন না বা কোন কাজ করতে পারেন না। তাঁদের হাদিস বইগুলোর আগে সহিহ শব্দটি লেখা থাকলেও এগুলো সত্য ও মিথ্যার যৌগ। একটি হাদিসও যদি মিথ্যা হয়, তবে সেটি হবে বিদাত। একটি মাত্র বিদাত দোজখে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত। অন্যদিকে কোন নফল পালন করা বা না করার জন্য কেউ দোজখে যাবে না। নফল নয় এমন কাজকে নফল মনে করলে সেটিও বিদাত হবে। এ অনুবাদ গ্রন্থে বাংলা (তৎসম, বিকৃত তৎসম, অর্ধতৎসম ও তদ্ভব) ছাড়া অন্যকোনো শব্দের প্রয়োগ করিনি। অ-বিমিশ্র বাংলা কুরআন এ যাবত আমি দেখিনি। এ থেকে আমি অবিমিশ্র বাংলা ভাষায় কুরআন অনুবাদ করার ইচ্ছে পোষণ করে আসছি। আল্লাহ্্, কুরআন, ইসলাম, মুসলিম এ শব্দ গুলোকে আমি ভাষার ঊর্ধ্বে জ্ঞান করি, তাই এগুলো এ অনুবাদেও অবিকল রয়ে গেছে। সহজ চলিত ভাষায় আমি এ অনুবাদকর্ম পরিচালনা করেছি। ১৯৩৪ ও ২০১২ সালের প্রমিত বাংলা বানানরীতিতে এ অনুবাদগ্রন্থ প্রণীত। বিশুদ্ধ বাংলা ভাষায় এটি অনূদিত। এটি পবিত্র কুরআনের বাংলা অনুবাদ। আমার কাছে মনে হয়েছে এর কোথাও বাংলা ছাড়া অন্য ভাষার কোন শব্দ প্রয়োগ করলে সেটি হবে কপটতা (মুনাফিকি)। বাংলা ভাষার নিরঙ্কুশতা অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে এ অনুবাদে আমি অনেকগুলো শব্দ তৈরি করেছি; যেমনÑপ্রণিপাত প্রার্থনা (সালাত), উপবাসব্রত (সিয়াম), মক্কাতীর্থ ব্রত (হজ), মক্কা উপতীর্থ ব্রত (উমরাহ্), আবশ্যিক দাক্ষিণ্য (যাকাত), প্রণত হওয়া (রুকু করা), উৎসর্গ (কুরবানি), আবশ্যিক (র্ফদ), নিষিদ্ধ (হারাম), উপাসনা (ইবাদত), সেবক (আব্দ), বাণীদূত (নবি/রাসুল), স্বর্গদূত (মালাইকা), স্বর্গোদ্যান (জান্নাত), নরক (জাহান্নাম), প্রণিপাত (সিজদা), অনাচারী (জালিম), গ্রন্থ (কিতাব), ক্ষুদ্রগ্রন্থ (সহিফা), রেমিসিস (ফিরআউন), লক্ষ্যস্থল (কিবলা), অনুশোচিত ক্ষমা প্রার্থনা (তওবা), কৃতকর্ম (আমল), কর্ম বিররণি (আমলনামা), বিভেদসৃষ্টি (ফিৎনা), প্রতীক্ষমানকাল (ইদ্দত) প্রভৃতি এবং আরও অনেক। এ অনুবাদ মনুষ্য কর্ম বিধায় ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। এর প্রমাদ বিষয়ে অনুগ্রহ করে কেউ ক্রুদ্ধ হবেন না। সর্বদাই ভ্রম সংশোধনে প্রস্তুত আছি। পবিত্র কুরআনের অধ্যায় গুলোর নামও আমি বাংলায় লিখেছি যা এ পর্যন্ত কেউ করেননি বলে মনে হয়, যথা ঃ ফাতিহা-উদ্বোধনি, বাকারা-গাই, আলে ইমরান-ইমরান সন্ততি, নিসা-নারী, মায়িদা-অন্নপাত্র, আনআম-গ্রাম্যপশু, আরাফ-উন্নিমিতস্থান, আনফাল-যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, তওবা-অনুশোচিত ক্ষমা প্রার্থনা, রআদ-বজ্রধ্বনি, হিজর-বিচ্ছেদ, নহল-মধুমক্ষিকা, কহফ-গর্ত, আম্বিয়া-বাণীদূত, হজ্-মক্কাতীর্থব্রত, মুমিনুন-বিশ্বাসীগণ, নুর-আলো, শুঅরা-কবিগণ, নমল-পিঁপড়া, কাসাস-উপাখ্যানাবলি, আনকাবুত-মাকড়, রুম-গ্রিস ও তুরাস্ক প্রভৃতি। মুহম্মদ ইফতেখারুল ইসলাম খান