রঙ্গপুর ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এক প্রাচীন ভূখণ্ড। সুদূর অতীতে প্রাচীন রাজ্য প্রাগজ্যোতিষপুর তথা কামরূপ রাজ্যের (বর্তমান আসাম) অন্তর্ভুক্ত ছিল রঙ্গপুর। রঙ্গপুরের ইতিহাসের প্রাচীনত্ব নির্ধারণ গবেষণার বিষয়। রঙ্গপুরের ইতিহাসের প্রাচীনত্ব সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'যথায় এখন কামরূপ তথায় অতি প্রাচীনকালে এক আর্য রাজ্য ছিল। তাহাকে প্রাগজ্যোতিষ বলিত। বোধহয়, এই রাজ্য পূর্বাঞ্চলের অনার্য ভূমিমধ্যে একা আর্য জাতির প্রভাব বিস্তার করিত বলিয়া ইহার এই নাম। প্রাগজ্যোতিষপুর বা কামরূপ (বর্তমান আসাম) প্রাচীনকালে উন্নত সভ্যতার অধিকারি ছিল। রঙ্গপুর ছিল এই কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। 'এক সময়ে এই কামরূপ রাজ্য অতিবিস্তৃত হইয়াছিল। পূর্বে করতোয়া ইহার সীমা ছিল; আধুনিক আসাম, মণিপুর, জয়ন্ত্যা, কাছাড়, ময়মনসিংহ, শ্রীহট্ট, রঙ্গপুর, জলপাইগুড়ি ইহার অন্তর্গত ছিল।'২ রঙ্গপুর নামকরণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রঙ্গপুরের ইতিহাসের প্রাচীনত্ব। শব্দতত্ত্বের বিচারে 'রঙ্গপুর' শব্দে রয়েছে প্রাচীনত্বের ছাপ। 'রঙ্গপুর' শব্দের অন্তর্গত ব্যঞ্জনাসমৃদ্ধ অর্থবহ পৃথক দুটি শব্দ 'রঙ্গ' ও 'পুর' (পুরী)। 'রঙ্গ' বৌদ্ধযুগের বৌদ্ধসভ্যতা ও সংস্কৃতির শব্দ এবং 'পুর' (পুরী) সংস্কৃত ভাষার শব্দ। বাংলাভাষা ও সাহিত্যের সাথে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের সম্পর্ক মধ্যযুগে। '
শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও ভাষাসৈনিক মােতাহার হােসেন সুফী ১৯৩২ সালের ১ অক্টোবর রংপুর শহরের মুনশীপাড়ার অলিবাগ জন্মগ্রহণ করেন । ১৯৪৮ সালে মুনশীপাড়া সাধারণ পাঠাগার থেকে হাতেলেখা দেয়ালপত্রিকা ‘মশালে’ গল্প প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যজগতে তাঁর আত্মপ্রকাশ। পঞ্চাশের দশকে গবেষণামূলক নিবন্ধ রচনার মাধ্যমে তিনি সাহিত্যচর্চায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর কারমাইকেল কলেজ, রাজশাহী কলেজে, ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজসহ অন্যান্য সরকারি কলেজে অধ্যাপনা ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন । তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য ও পাঠক নন্দিত গ্রন্থ ‘ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক’ নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রােকেয়ার জীবন ও সাহিত্যকর্ম সম্পর্কীত তাঁর রচিত প্রথম মৌলিক গবেষণাগ্রন্থ ‘বেগম রােকেয়া : জীবন ও সাহিত্য প্রকাশিত হয়েছে। লেখক রচিত জীবনীগ্রন্থ : বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত কাজী মােহাম্মদ ইদরিস (১৯৮১) তসলিমুদ্দীন আহমদ (১৯৩৩), ‘প্রিয়তম নবী (২০০৯) প্রভৃতি। বাংলা একাডেমী কর্তৃক লেখকের আরেক মৌলিক গবেষণাগ্রন্থ ‘বাংলাসাহিত্যে রঙ্গপুরের অবদান’ ২০০১ সালে প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৮ সালে রংপুর কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক স্বর্ণপদক, ১৯২২ সালে ঢাকাস্থ রংপুর সাংস্কৃতিক পরিষদ কর্তৃক ‘র.সা.প পদক’, ঢাকাস্থ স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট কর্তৃক রােকেয়া পদক এবং ১৯৯৭ সালে ঢাকাস্থ কারমাইকেল কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতি কর্তৃক তিনি সংবর্ধিত হন। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমী পরিচালিত সাদত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার-২০০০-এ তিনি ভূষিত হন । তিনি বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য (১০৭০) এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সােসাইটির আজীবন সদস্য (১৯২৬)। গবেষণাকর্মে তিনি এখনও সক্রিয় আছেন ।