"চল্লিশের দশকের ঢাকা" বইটির শেষের ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ শহর ঢাকার রয়েছে প্রাচীন গরিমা ও বিশিষ্ট সংস্কৃতি, খুব কম মহানগরী পারে এমন গর্বে গর্বিত হতে। ইতিহাসের নানা উত্থান-পতনের মধ্যে ঢাকার যে অব্যাহত পথচলা তার অনন্য খতিয়ান মিলবে বিগত শতকের চল্লিশের দশকের ঢাকার জীবন ও সংস্কৃতির পরিচয়বহ বর্তমান সংকলনে। হারিয়ে যাওয়া অতীতের সঙ্গে আমাদের মােকাবিলা ঘটবে গ্রন্থভুক্ত রচনাসমূহের কল্যাণে, প্রাণবন্ত এই শহরের জীবন যখন নানা দিক থেকে কল্লোলিত হয়েছিল। ঢাকা যে বহুভাবেই আলাদা শহর, ঢাকাবাসী যে মিলনে-মিশ্রণে-বৈচিত্র্যে বিশেষ সংস্কৃতি ও জীবনধারা গড়ে তুলেছিল সেই পরিচয় এখানে ফুটে উঠেছে। গ্রন্থভুক্ত লেখকেরা চল্লিশের দশকের ঢাকাবাসী, স্ব-স্ব দৃষ্টিকোণ থেকে আলােকপাত করেছেন তকালীন ঢাকার জীবনধারার ওপর। সংকলনভুক্ত লেখকদের মধ্যে কিরণশঙ্কর সেনগুপ্তের রয়েছে প্রধান ভূমিকা; এই ঢাকাতেই তাঁর জন্ম, বেড়ে-ওঠা ও সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক কর্মের সূচনা। তাঁর লেখায় শহর ঢাকার বিদ্বদৃগােষ্ঠী ও সংস্কৃতি-সমাজের অন্তরঙ্গ পরিচয় মেলে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে চল্লিশের দশকের ঢাকা-বিষয়ক অন্যতর কিছু ভাষ্য, যে লেখকদের মধ্যে রয়েছেন রণেশ দাশগুপ্ত, সুকুমার রায়, কবীর চৌধুরী, বঙ্গেশ্বর রায় ও সানাউল হক। সব মিলিয়ে ঢাকার হারিয়ে যাওয়া জীবনধারার অনুপম পরিচয় পাওয়া যাবে এই গ্রন্থে, যা দূর অতীতের হলেও আজো বিশেষ প্রাসঙ্গিক।
মফিদুল হক (জন্ম: ১৯৪৮) পেশায় প্রকাশক এবং কর্মসুবাদে শিল্প-সংস্কৃতি ও সৃজনমূলক বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। তার সমাজচিন্তামূলক বহুবিধ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও শিল্প-সাহিত্যের সাময়িকীতে, যদিও প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তুলনায় খুব বেশি নয়। মৌলিক প্রবন্ধ রচনার পাশাপাশি অনুবাদেও তিনি সর্বদা আগ্রহের পরিচয় রেখেছেন। সমাজ-অধ্যয়ন তাঁর রচনার মূল বিষয়, এক্ষেত্রে শিল্প-সাহিত্যের দৃষ্টিকোণ পেয়েছে বিশেষ প্রাধান্য। বাংলা একাডেমী থেকে জীবনীগ্রন্থ সিরিজে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর রচিত আবুল হাশিম’ এবং পূর্ণেন্দু দস্তিদার' প্রকাশিত উল্লেখযােগ্য অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘মনােজগতে উপনিবেশ: তথ্য সাম্রাজ্যবাদের ইতিবৃত্ত’, ‘তৃতীয় বিশ্ব এবং নারীমুক্তির পথিকৃৎ। অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে এর্নেস্তো কার্দেনালের ‘বিপ্লব ও ভালােবাসার কবিতা, জন হের্সের ‘হিরােশিমা', সিডনি শনবার্গের ‘ডেটলাইন বাংলাদেশ: ১৯৭১', আহমেদ সালিমের ‘পাকিস্তানের কারাগারে শেখ মুজিবের বন্দিজীবন’ প্রভৃতি। শিল্পকলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়েছে দ্বিভাষিক গ্রন্থ কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটইউনেস্কো প্রকাশিত দ্বিবার্ষিক সংকলন ‘ওয়ার্ল্ড অব থিয়েটার'-এর অন্যতম সম্পাদক। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য-সচিব তিনি।