কোথায় গেলেন বিজ্ঞান আসিফ হায়দার চৌধুরী? কারা কিডন্যাপ করল তাঁকে?.. মরুভূমির ভেতর ডেভিলস ওয়েসিস কারাগার থেকে মুক্ত করতে হবে তাঁকে। একের পর এক বাধার মুখে পড়ে পড়ে রানার মনে হলো, এবার বুঝি হার মানতেই হবে। আসরে কারাগারের ভিতরে ঢোকা যত সোজা, তার চেয়ে ১০০ গুণ কঠিন বেরিয়ে আসা। রানা জানে না, আসলে বিজ্ঞানী আছেনিই বা কারাগারের ঠিক কোন জায়গাটিতে ! এবার কাহিনির সামান্য অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি : ভীষণ চমকে গিয়ে একমুহুর্তে রানা ভুলে গেল, ও কে এবং কোথায় আছে। ঝনঝন করছে মাথার ভিতরের মগজ। কানে ঢুকল দূরের গোলাগুলির আওয়াজ। এক সেকেণ্ড পর মনে পড়ল কী ঘটেছে। চট্ করে চোখ মেলল রানা, পরক্ষণে শিউরে উঠল ভয়ে। বুদ্বুদ তোলা তেলের প্রস্রবণ গলগল করে নামছে রিগের পায়া বেয়ে, সেখান থেকে চল্লিশ ফুট দূরে আছে ও। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে আকাশে উড়ে যাওয়ার কথা কিন্তু আপার ডেক ঘিরে রাখা সেফটি নেটের ভিতর জড়িয়ে রয়ে গেয়েগেছে। যে কণ্টেনারের পিছনে লুকিয়ে পড়েছিল, সেটা এক ক্রুড অয়েলে ছাওয়া সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু আরপিজি ডেটোনেট হওয়ার সময় যে লোককে সরিয়ে এনেছিল, তার কোনে চিহ্ন নেই কোথাও। এখনও থরথর করে কাঁপছে নেট, চট করে উপুড় হলো রানা, মাকড়সার মত তিরতির করে রওনা হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর প্ল্যাটফর্মের পাশে পৌঁছে গেল ও, খুব সাবধানে উঁকি দিল ওদিকে। রিগের নিয়ন্ত্রণ েএখনও বজায় রেখেছে মার্সেনারিরা, ওর নিজের লোকরা পিছিয়ে পড়েছে, কমে আসছে তাদের গোলাগুলি... রানা সিরিজের ৪২৩ ও ৪২৪ তম বইয়ের এই কাহিনি একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠার কোনো উপায় নেই। কাহিনির সঙ্গে মানানসই প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী রনবীর আহমেদ বিপ্লব। লাইম লাইট-২ শীঘ্রি পাঠকজনপ্রিয়তা অর্জন করবে।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পের সাহিত্যধারাকে প্রায় একা হাতে জনপ্রিয় করে তুলেছেন যে মানুষটি তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে এই সাহিত্যধারার বিশাল পাঠকশ্রেণী। বিদ্যুৎ মিত্র এবং শামসুদ্দিন নওয়াব ছদ্মনামে লিখেছেন অসংখ্য গল্প। পাঠকদের কাছে পরিচিত প্রিয় কাজীদা নামে। প্রখ্যাত গণিতবিদ ও সাহিত্যিক বাবা কাজী মোতাহের হোসেন ও মা সাজেদা খাতুনের ঘরে ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন কাজী শামসুদ্দিন নওয়াব। পরিবারের সঙ্গীতচর্চার ধারাবাহিকতায় প্রথমে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৬৩ সালে বাবার দেওয়া টাকায় সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে সেই প্রেস থেকেই নিজের সম্পাদনায় পেপারব্যাকে সৃষ্টি করেছেন কুয়াশা, মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দার মতো চিরতরুণ চরিত্রগুলোর। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই ‘কুয়াশা’ সিরিজের মাধ্যমেই মূলত রহস্যধারার বই প্রকাশ শুরু সেবা প্রকাশনীর। এরপর এক বন্ধুর প্রকাশিত জেমস বন্ডের ‘ডক্টর নো’ পড়ে ঠিক করেন বাংলাতেই লিখবেন এই মানের থ্রিলার। সালটা ১৯৬৫, মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে এলেন চট্টগ্রাম, কাপ্তাই ও রাঙামাটি। সাত মাস সময় নিয়ে লিখলেন মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ধ্বংস পাহাড়’। এই সিরিজের কাজী আনোয়ার হোসেনের বই সমূহ এর মধ্যে প্রথম তিনটি বাদ দিলে বাকিসবগুলোই লেখা হয়েছে বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই সমগ্র রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যের যে পিপাসা পাঠকের মনে তৈরি করেছে তা মেটাতে সাড়ে চারশোরও বেশি মাসুদ রানার বই প্রকাশ করতে হয়ছে সেবা প্রকাশনীকে, যার ধারাবাহিকতা আজও চলমান।