“কেউ একজন অপেক্ষা করছে" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ তবিবুলকে প্রথমটায় পছন্দ হলাে না হেলেনার। তবিবুলের চোখ দুটো খুব সুন্দর। হেলেনা এক রাতে যখন ওই চোখ। দুটো স্বপ্নে দেখল, তখন বুঝল তবিবুলকে পছন্দ করতে আরম্ভ করেছে সে। এই পছন্দের কথা তবিবুলকে মুখ ফুটে জানাল না সে, বুঝতেও দিল না। তার লজ্জা লাগল, ভয়ও। তবিবুল এ বাসায় থাকার ছ'মাসের মধ্যে হেলেনার ছােট বােন ফারজানাকে বিছানায় নিয়ে গেল। ব্যাপারটা খুব কঠিন বই কী, আবার খুব সহজও বার্থরুম যখন বাড়ির ওদিকে, তখন মাঝরাতের পর, বাড়ির সবাই যখন গভীর ঘুমে, তখন বাথরুমে যাওয়ার নাম করে ওদিকে চলে গেলেই হলাে। ফারজানাও তাই যেত হেলেনা তখন কান্না আটকে ঘুমানাের চেষ্টা করত। সে শুধু রাতের-পর-রাত ফারজানার সাহস দেখল। অতটুকু একটা মেয়ে, মাত্র ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে, তার কী সাহস! প্রায় রাতে উঠে গিয়ে ওই কাজটা করে আসে। হেলেনার মাঝে মাঝে এরকম মনে হতাে কোনাে এক রাতে বাবা হাতেনাতে ধরে ফেলুক ফারজানা আর তবিবুলকে। তারপর ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধুক একটা। সেরকম কিছু ঘটল না। তবিবুল সত্যিই খুব চালাক ছেলে। এক সকালে সে বাবাকে বলল-মামা, এইবার আমারে ছাইড়া দ্যান। বাবা গম্ভীর গলায় বলল-তােমারে ছাইড়া দিমু মানে! তােমারে বাইন্ধা রাখছে কে? চালাক তবিবুল বলল-বাইন্ধা কেউ রাখে নাই। তয় আপনেগাে মায়ার বন্ধনে তাে জড়ায়া আছি। কই যাবা? গ্রামে চইল্যা যাবাে। মামা, আমি বিয়া করছি! বিয়া করছ? জ্বি! আপনেগাে জানাইবার সময় পাই নাই। মাইয়ার বিয়া হইছিল, দুই মাস সংসার করছে। তয় বাপের টাকা আছে। বাড়ি লেইখ্যা দিছেন। ব্যবসা করনের ট্যাকাও দিবেন। ভালাে করছ। বুদ্ধিমানের কাম করছ। বুদ্ধিমানের কাম করতে গিয়া নেমকহারামি কইরা ফেলাইলেও অসুবিধা নাই। মামা, আমি নেমকহারাম না। একখান সুযােগ পাইলাম...
মঈনুল আহসান সাবেরের জন্ম ঢাকায়। ২৬ মে ১৯৫৮। পৈতৃক ভিটে একদা বরিশাল ভাগ হয়ে যাওয়ার পর পিরােজপুর। দেশের বহু বহু জায়গায় যাওয়া হয়েছে, যাওয়া হয়নি ওই পিরােজপুর। বাবার ফেলে আসা ভূমি সাজানাে আছে সাবেরের কল্পনায়। জন্মের পর এই ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। সংসার জীবনও। যদিও এক সময় ইচ্ছা ছিল, থিতু হবেন না, পথে পথে থাকবেন, আজ এখানে তাে কাল ওখানে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তিনিও সেই ওদের মতাে, যাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত না টেনেছে, তার চেয়ে বেশি টেনেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চত্বর। বড়দের জন্য প্রথম লেখা ১৯৭৪-এ। প্রকাশিত হয়েছিলাে সে সময়কার সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। তারপর ৪০ বছর ধরে এই একটিই কাজ, বিরতিসহ বিরতি ছাড়া। প্রথম বই গ্রল্পগ্রন্থ “পরাস্ত সহিস বেরিয়েছিল ১৯৮২ সালে। চাকরি না করে উপায় নেই। তাই করছেন, সাংবাদিকতা। এখন অবশ্য বেকার। বেকার থাকার অভিজ্ঞতা তার আছে। বাসনা বেকারই থেকে যাওয়ার। বেড়াতে ভালােবাসেন। একা থাকতেও পুরস্কার পেয়েছেন সামান্য কয়েকটি। বাপি শাহরিয়ার শিশুসাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। স্ত্রী নাহিদ নিগার, দু পুত্র আহসান সেনান ও আহসান সাজিদকে নিয়ে তার সংসার।