"কে সিরাজদৌলা কে মীরজাফর" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বাংলা কবিতার শেষ প্রান্তের উজ্জ্বলতম কবি আবদুল হাই শিকদার। উজ্জ্বল এবং আলাদা। মৃত্তিকা বৃক্ষ এবং আকাশ, বিশ্বাসের পাশে বিজ্ঞান, ঐতিহ্য ও ক্রমাগত আধুনিক, তারপর মানুষ আর মানুষ, রৌদ্র জোছনার কোরাস, আনন্দ এবং বেদনার নিরন্তর অবগাহন- সব মিলিয়ে অবিরাম। সৌন্দর্য্যাত্রা, আর এর ভেতর দিয়েই আবদুল হাই শিকদারের কবিতা; শুরু থেকেই আদায় করে নিয়েছে কাব্যপাঠকের অভিনিবেশ ও সমীহ। তার হাতে ওড়ে আবহমান বাংলা কাব্যের নিশান, আত্মা থেকে ডানা মেলে অদম্য মানবিক চৈতন্যের অবিনাশী প্রবাহ। সার্বিক অর্থেই আমাদের কবিতার স্যাতসেঁতে ভিজে উঠানে তিনি এখন এক ব্যতিক্রম। তরল আগুনের গায়ে প্রসন্নতার ছটা, পাশাপাশি পানি সরে যাওয়া নতুন চরের মতাে ঝলমল তার নির্মাণ। আধিপত্যবাদ ও রাজরােষের শিকার হয়েছেন তিনি বার বার। তারপরও আবদুল হাই শিকদার অন্যায়, খ্যাতি ও প্রতিপত্তির কাছে মাথা নত না করা ঋজু এক কবি। তার কবিতা হয়ে উঠেছে স্বপ্ন, সগ্রাম, ঘাম ও প্রেমের অবিস্মরণীয় মােহনা, আবার দৈশিক হয়েও বৈশ্বিক। তার ‘কে সিরাজদৌলা কে মীরজাফর’-এ পাওয়া যাবে বাংলা কবিতার বাক পরিবর্তনের অনুরণন। আশ্চর্য কিন্তু অনিবার্য শিকড়ায়নের মধ্যে জড়িয়ে রয়েছে রহস্যময় এক রূপকথা। এ পাঠের আনন্দই আলাদা।
Abdul Hye Sikder- জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৫৭ ৷৷ ছাট গোপালপুর গ্রামে। পিতা কৃষিবিদ ওয়াজেদ আলী শিকদার। জননী হালিমা খাতুন। মওলানা ভাসানীর দীর্ঘ ছায়ায় আশৈশব বেড়ে ওঠা তার । পিতার সাহায্যে তাঁর প্রথম লেখা ’নদী’। পড়ালেখার বেশিরভাগ কেটেছে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছিলেন স্নাতক সম্মান।তারপর নিয়েছেন স্নাতকোত্তর। পুরো পরিবার অংশ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে । প্রিয় কবি মনসুর আহমদ । স্বপ্ন ছিল চে গুয়েভারা হওয়ার। লেখালেখির শুরু স্কুলজীবন থেকেই। বিকাশ আশির দশকে। পেশা জীবন শুরু সাংবাদিকতা দিয়ে, এখনও আছেন সেই পেশাতেই। সাংবাদিকদের বৃহত্তম সংগঠন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দুই দুইবারের নির্বাচিত সভাপতি তিনি । মাঝে নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন নজরুল ইন্সটিটিউট-এ। নজরুলের ওপর নির্মাণ করেছেন তিনটি তথ্যচিত্ৰ । স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নিয়মিত সাহিত্য মাসিক "এখন"-এর তিনি মূল স্থপতি। কবিতা, শিশুসাহিত্য, জীবনী, গল্প, গবেষণা, ভ্ৰমণ, চলচ্চিত্র-সব মিলিয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা এখন শতাধিক । বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিকড় সন্ধানী ম্যাগাজিন ‘কথামালার” পরিকল্পক, উপস্থাপক। কবিতার জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অন্যান্য পুরস্কার। স্ত্রী আবিদা শিকদার, পুত্র পরম ও কন্যা প্রকৃতিকে নিয়ে রাজধানীর শহরতলীতে তার সংসার।