‘পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বইয়ের তৃতীয় সংস্করণ প্রসঙ্গেঃ দ্বিতীয় সংস্করণও শেষ? এই শুকনো, ধোঁমাটে, রক্তের ছিটে-লাগা আগ্নেয় সময়েও কবিতার দিকে মানুষের বাড়ানো হাত? চাল-ডাল-ট্রেনের মান্থলির মতো এখনও মানুষের জীবনযাপনের অন্যতম উপকরণ কবিতা? এ যদি সত্যি, তাহলে তো একজন কবির মনে আস্ত একটা গোলাপ বাগানের উল্লাস গজিয়ে ওঠার কথা। তা কিন্তু ওঠে না, কিংবা ওঠে কি তেমন? এসব জানার পরও একজন কবি কি সন্দেহাতীতরূপে নিশ্চিত, পাঠকসমাজে নিজের অবস্থানভূমির স্থায়ীত্বে? সব কবির কাছেই কি পৌঁছে যায়। তাঁর পাঠকগোষ্ঠীর ভালো লাগা না-লাগার অকপট ধারাভাষ্য? এ বইয়ের প্রথম সংস্করণ কিনেছিলেন যাঁরা, দ্বিতীয় সংস্করণ তাঁরা কেনেননি। কিনেছেন নতুন পাঠকগোষ্ঠী। নতুন পাঠক পড়ছেন পুরনো কবিতা। ভালো লাগছে, তাই মুগ্ধ। অত ভালো লাগছে না, তাই কিছুটা হতাশ। একেবারেই স্বাদ পাচ্ছেন না আধুনিকতার, তাই ক্ষুব্ধ। কিন্তু সেসবেরও থাকবে একটা বহিঃপ্রকাশ। ঝিরঝিরে ঝাউপাতাকে কাঁপায় যতটুকু হাওয়া, ততটুকুও তো পৌঁছতে পারত কানে। তা যখন পৌঁছাচ্ছে না, তখন পরিতৃপ্তির পরম অবলম্বন হয়ে থাকুক সংখ্যাতত্ত্বই শুধু। নতুন সংস্করণে সবই আগের মতো যথাযথ। নতুন কেবল 'রক্তিম বিষয়ে আলোচনা’ থেকে কয়েকটি কবিতা।
‘পূর্ণেন্দু পত্রীর শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বইয়ের প্রধান প্রধান সূচিপত্রঃ * এক মুঠো রোদ। ১৯৫১ * শব্দর বিছানা। ১৯৭৫ * তুমি এলে সূর্যোদয় হয়। ১৯৭৬ * আমিই কচ আমিই দেবযানী। ১৯৭৭ * হে সময় অশ্বারোহী হও। ১৯৭৯ * আমাদের তুমুল হৈ-হল্লা। ১৯৮০ * প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ। ১৯৮০ * গভীর রাতের ট্রাঙ্ককল। ১৯৮১ * রক্তিম বিষয়ে আলোচনা। ১৯৯০
জন্ম ফেব্রুয়ারি ২, ১৯৩১ - মার্চ ১৯, ১৯৯৭পূর্ণেন্দু পত্রী নামে সর্বাধিক পরিচিত; ছদ্মনাম সমুদ্রগুপ্ত) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, সাহিত্য গবেষক, কলকাতা গবেষক, চিত্র-পরিচালক ও প্রচ্ছদশিল্পী। পূর্ণেন্দু পত্রীর জন্ম বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার নাকোলে। পিতা পুলিনবিহারী পত্রী, মা নির্মলা দেবী। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পারিবারিক কলহের কারণে পৈত্রিক ভিটে ছেড়ে চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৪৯ সালে ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে ভর্তি হন বাণিজ্যিক শিল্পকলা বা কমর্শিয়াল আর্টের ছাত্র হিসেবে। যদিও নানা কারণে এই পাঠক্রম শেষ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। ছেলেবেলায় বাগনানের বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা অমল গাঙ্গুলির সংস্পর্শে এসে কমিউনিস্ট পার্টির নানান সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কলকাতায় অভিভাবক কাকা নিকুঞ্জবিহারী পত্রীর চলচ্চিত্র পত্রিকা 'চিত্রিতা' ও সাহিত্যপত্র দীপালি-তে তাঁর আঁকা ও লেখার সূচনা হয়। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হয়ে পড়লে রাজনীতি ও সাহিত্যচর্চা উভয়েই একসঙ্গে চালাতে থাকেন। মৃত্যুর পূর্বে ১৯৯৬ সালে তার প্রথম খণ্ড বঙ্কিম যুগ প্রকাশিত হয়। শিশুসাহিত্যেও তিনি ছিলেন এক জনপ্রিয় লেখক। ছোটোদের জন্য লিখেছেন আলটুং ফালটুং, ম্যাকের বাবা খ্যাঁক, ইল্লীবিল্লী, দুষ্টুর রামায়ণ, জুনিয়র ব্যোমকেশ, জাম্বো দি জিনিয়াস, প্রভৃতি হাসির বই। আমার ছেলেবেলা নামে তাঁর একটি স্মৃতিকথাও রয়েছে। সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে বিদ্যাসাগর পুরস্কারে ভূষিত করেন। ১৯৬৫ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্প অবলম্বনে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র স্বপ্ন নিয়ে মুক্তি পায়। এর পর রবীন্দ্রনাথের কাহিনি অবলম্বনে স্ত্রীর পত্র ও মালঞ্চ সহ পাঁচটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন তিনি। এছাড়াও নির্মাণ করেন সাতটি তথ্যচিত্র। স্ত্রীর পত্র চলচ্চিত্রটির জন্য তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চিত্রনির্মাতা ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে সমরেশ বসুর কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত তাঁর ছেঁড়া তমসুক চলচ্চিত্রটিও একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছিল।