"বটতলার ছাপা ও ছবি" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: বটতলার বই— কথাটা শুনলেই কেমন যেন অশ্রদ্ধার ভাব জেগে ওঠে আধুনিক শিক্ষাভিমানী পাঠকের মনে। কেউ কেউ এ অভিধার বই বলতে ভাবেন পাঁচালি-জাতীয় কমদামি ধর্মগ্রন্থ, কারও মনে পড়ে যাত্রাপালার বই, কেউবা আবার ‘হরিদাসের গুপ্তকথা’র মতাে গােপন রােমাঞ্চকর বইয়ের কথা ভেবে বসেন। কিন্তু সত্যিই কি বটতলার বই অতটাই অশ্রদ্ধেয় ? এশিয়াটিক সােসাইটির দ্বিশতবর্ষপূর্তি উৎসবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধেয় সুকুমার সেন এই বইতে আমাদের অনেক ভুল ভেঙে দিলেন। দেখিয়ে দিলেন যে, বটতলার মুদ্রণযন্ত্রের কল্যাণেই আমাদের সাহিত্যসংস্কৃতির লােকলােচনলুপ্ত ধারাটির 'পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। সংস্কৃতি বলতে চিত্রশিল্পকেও ধরতে হবে। কালীঘাটের পট চালু হবার দীর্ঘকাল আগেই বটতলার বইয়ের জন্য ছবি আঁকা শুরু হয়েছিল। আধুনিক কালে চিত্রশিল্পে সেই আমাদের প্রথম উদ্যম ‘বটতলার ছাপা ও ছবি’ বইতে সুকুমার সেন শুধু যে বটতলার চিত্রশােভিত বইয়েরই আনুপূর্ব ইতিহাস শুনিয়েছেন তা নয়, সেইসূত্রে বাংলা সচিত্র গ্রন্থের সূত্রপাতের ইতিহাস এবং মুদ্রণযন্ত্রের আদি ইতিহাসও অতি আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে বর্ণনা করেছেন। বটতলার ছাপা ও ছবি’-র এই নতুন সংস্করণে লেখকের | পূবপ্রকাশিত একটি ইংরেজি প্রবন্ধের বঙ্গানুবাদ ছাড়াও বটতলার, শহরের অন্যান্য অঞ্চলের---- এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে মফস্বলের মুদ্রান্ত্রের বর্ণানুক্রমিক একটি তালিকা যুক্ত করা হল। এ দুটি কাজই করে দিয়েছেন গ্রন্থসম্পাদক। বর্তমান সংস্করণে বেশ কিছু ছবিও সংযােজিত হয়েছে। গবেষক এবং রসপিপাসু পাঠক-~'সকলের কাছেই এ-গ্রন্থ গণ্য হবে এক মূল্যবান উপহার হিসেবে।
Sukumar Sen-এর জন্ম : জানুয়ারি ১৯০০ সাল। কলকাতায়। বর্ধমান মিউনিসিপাল হাই ইংলিশ স্কুল থেকে ১৯১৭ সালে পাশ করেছেন প্রবেশিকা পরীক্ষা, মোহিনীমোহন মিশ্র মেডেল পেয়ে। আই-এ, বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে। সংস্কৃত, বাংলা ও গণিত তিন বিষয়ে লেটার। সংস্কৃত কলেজ থেকে সংস্কৃত অনার্সে বি-এ। কমপ্যারেটিভ ফিললজিতে এম-এ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোনার মেডেল। ১৯২৪-এ প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি। ১৯২৬-এ মোয়াট মেডেল। ১৯২৬-৩১ মৌলিক গবেষণা করে তিনবার গ্রিফিথ মেমোরিয়াল পুরস্কার ও দু-বার স্যার আশুতোষ মুখুজ্জে মেডেল পেয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার ১৯৩০ সাল থেকে, এর আগে অনারারি লেকচারার। ১৯৩৭-এ পি-এইচ-ডি.| ১৯৫৪-১৯৬৪ খয়রা অধ্যাপক। ১৯৫২তে ভাষাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যক্ষ। ১৯৬৩তে রবীন্দ্র পুরস্কার। ১৯৮১-তে বিদ্যাসাগর পুরস্কার। এ-ছাড়াও আনন্দ পুরস্কার, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর রামেন্দ্রসুন্দর স্মৃতি পুরস্কার। সরোজিনী মেডেল। এমন আরও বহু। বিশ্বভারতী দিয়েছেন ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়—ডি. লিট| নানা গ্রন্থ : ইংরেজীতে ও বাংলায়।