ধুলো “বার্মুডা, না বাহামা ?” “বেনেপুকুর বোধহয় !” সেই সেকালের বটতলা উপন্যাসের ভাষায় বর্ণনা করা যেতে পারত যে কোনও এক বর্ষণক্ষান্ত সন্ধ্যায় একটি জীর্ণপ্রায় বাড়ির দ্বিতলের একটি নাতিপ্রশস্ত প্রকোষ্ঠে কয়েকটি অপরিণত যুবক ও জনৈক অনির্দিষ্ট বয়সের কিঞ্চিৎ শীর্ণ ব্যক্তির মধ্যে উল্লিখিত কথোপকথন হইতেছিল। কিন্তু যত প্যাচ করেই বলি, একথা কি কেউ সহজে বিশ্বাস করবে যে প্রথম উক্তিটি স্বয়ং ঘনাদার আর দ্বিতীয়টি আমাদের? ঘনাদা তাঁর মৌরসি আরাম-কেদারায় বসে নিজে থেকে বার্মুডা কি বাহামা, কোথায় শিশিরের জোগানো সিগারেটের ধোঁয়ার সঙ্গে তাঁর গল্পের গুল ছাড়বেন ভাবছেন, আর আমরা বেতালা বিদ্রূপের খোঁচায় তাঁর মুখ বোজাতে চাইছি! এ-ও কি সম্ভব? অন্য দিন হলে ওই বেনেপুকুর নামটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে গল্প শোনার আশা ভরসা তাইতেই ডুবত নিশ্চয়, কিন্তু আজ ঘনাদা' যেন কানে তালা আর পিঠে কুলো বেঁধে বসেছেন। “ফ্লোরা কি ডোরার দেখা অবশ্য তখনও পাইনি,” বলে তুচ্ছ বেনেপুকুর-মার্কা বিদ্রূপ গ্রাহ্যই না করে ঘনাদা স্মৃতির ভাঁড়ার ঘটা করে ঘাঁটাতে বসে গেছেন আমাদের সামনে। আর তা সত্ত্বেও পোশাকের ওপর ওয়াটারপ্রুফ চড়িয়ে মাথায় তার হুড-এর বোতাম লাগাতে লাগাতে “পেলে কী কেলেঙ্কারি-ই হত” বলে আমরা মুখ টিপে হাসছি! এমন কখনও হতে পারে বলে ভাবা যায় ? অমৃতে কি অরুচি হয় ? হয়। হয়, অসময়ে যদি অমৃতও কেউ মুখে ঢেলে দেয় জোর করে! ধরো, দারুণ তেষ্টা পেয়েছে, ছাতি ফেটে যাচ্ছে তেষ্টায়, সে সময়ে এক ভাঁড় রাবড়ি কেউ মুখে ধরলে কেমন লাগে?
প্রেমেন্দ্র মিত্র ( জন্ম: ১৯০৪ - মৃত্যু: ৩ মে, ১৯৮৮) একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বাঙালি কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক। বাংলা সাহিত্যে তাঁর সৃষ্ট জনপ্রিয় চরিত্রগুলি হল ঘনাদা, পরাশর বর্মা, মেজকর্তা এবং মামাবাবু।