ক. ভাষণের লক্ষ্য ভাষণ কী প্রাণের প্রধান শর্ত আত্মপ্রকাশ এবং আত্মপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা। আদিম প্রাণী অ্যামিবা জাতীয় জীবের মধ্যেও প্রাণের এই ধর্ম বর্তমান ছিল। প্রাণীর আত্মপ্রকাশ ছিল বংশধারা রক্ষায় আর ক্রমশ উন্নততর জীবের উৎপত্তির মধ্যেই রয়েছে তার আত্মপ্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টার পরিচয়। মানুষের মধ্যে এ প্রচেষ্টার প্রবলতর প্রকাশ দেখা যায়। জন্মের পর থেকে মানুষ যে সব চেষ্টা চালাতে থাকে তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে এই আত্মপ্রকাশের অভিব্যক্তি। কিন্তু তা কীভাবে প্রকাশিত হয়? আসলে, প্রত্যেকটি মানুষ নিজস্ব শক্তি-সামর্থ্য অনুসারে নিজের মনোভাব প্রকাশ করে এবং অন্যকে তার দ্বারা অভিভূত করতে চায়। এই ভাবেই সে আত্মপ্রকাশ করে এবং অপরের ওপর নিজভাব স্থায়ী হলেই হয় তার আত্মপ্রতিষ্ঠা। এই আকাশতেই আমরা দল গড়ি, সভাসমিতিতে মিলিত হই,—গঠিত হয় সমাজ। কিন্তু যতই মিলিত হই না কেন, বাহ্য সাম্যের অন্তরালে আমরা প্রত্যেকে পৃথক, আমরা প্রত্যেকে স্বতন্ত্র। একজন মানুষ তার রুচি ও ভাবনা, প্রবণতা ও আবেগ, সীমাবদ্ধতা ও সমুন্নতি নিয়ে কখনওই আর এক জনের সঙ্গে হুবহু এক হতে পারে না। এই যে কেন্দ্রীয় স্বাতন্ত্র্য—একে আমরা সর্বদাই প্রকাশ করতে চাই। এই স্বাতন্ত্র্যই আমার আমিত্ব, এই আমিত্বেই আমি অপর থেকে পৃথক। এই স্বাতন্ত্র্য ও পার্থক্যকে প্রকাশের
ড: নীরদবরণ হাজরার জন্ম ১৩৪০ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসে অবিভক্ত বাঙলার ফরিদপুর জেলার রাজবাড়ি শহরে। পিতা সৈন্যবিভাগের ডাক্তার হিসাবে অবিরত বদলির কারণে তাঁর ধারাবাহিক পড়াশুনা হয়নি। কৃষ্ণনগর সি. এম. এস স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে গণনাট্য সংঘে যোগ দিয়ে পাঁচ বছর গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে বিপুল অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরে কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে স্নাতক হন। শিক্ষকতাকালে শিক্ষক আন্দোলনের জেলাস্তরের নেতাদের অন্যতম ছিলেন এ সময়ে এম.এ.বি.টি পাশ করেন ও পি.এইচ ডি উপাধি পান। পরে সাংবাদিকতা ও পত্রিকা সম্পাদনায় ব্রতী হন। বর্তমানে অন্য কোন বৃত্তিতে যুক্ত নন। ষোল-আনা কলমজীবী। এঁর লেখা ‘আবৃত্তিকোষ’,‘ভাষণকোষ’, ‘শ্রুতি-নাটক কোষ’, ‘মঞ্চে আলোক সম্পাত’, ‘মঞ্চে শব্দবিজ্ঞান ও শব্দ সংযোজন’, ‘দৃশ্যপট নির্মাণ ও ব্যবহার ইতঃমধ্যে সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে অপরিহার্য গ্রন্থ হিসাবে দুই বাঙলায় সমাদৃত হয়েছে ৷ তিনি রামায়ণ মহাভারত সম্পাদন করেছেন। মূল ভাগবত সম্পূর্ণ অনুবাদ করেছেন। বিষয়-বৈচিত্র্যে এবং চিন্তাশীলতার গভীরতায় তাঁর রচনাবলী বিশিষ্ট। তাঁর গ্রন্থসংখ্যা ত্রিশেরও বেশি।