প্রসঙ্গ কথা মৌখিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ হয়ে লোক-সাহিত্য ব্যাপ্তি লাভ করেছে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের কাছে সেকাল থেকে একাল অবধি। পল্লী বাংলার শাশ্বত জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে আজন্ম বাঁধা পড়ে আছে রোক-সাহিত্য। এর উপাদান সংগৃহীত হয়েছে আবহমান বাংলার গ্রামীণ জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা জীবন বৈচিত্রের ভাণ্ডার থেকে। লোক-সাহিত্য কোনও কালেও সচেতন মনের বাণী সাধনা নয়। তাই সযত্ন ও সুচিন্তিত মানস ফসল বলে একে স্থায়ীভাবে রক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। লোক-সাহিত্য নরম পলি গঠিত প্রকৃতির আবহে বেড়ে ওঠা আধুনিকতার ছোঁয়া বঞ্চিত মানুষদের সুখ-দুঃখের বাস্তব অনুভূতির স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। বাঁচতে গিয়ে-হাসতে গিয়ে-ঞাঁটতে গিয়ে যা মনে এসেছে তাই অকুণ্ঠভাবে প্রকাশ করেছে। এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশই তাদের জীবনের অবসাদে প্রাণসঞ্চার করেছে এগিয়ে চলার পথে। প্রবাদ-প্রবচনা, দাঁধা, হেয়ালী এরই প্রতিফলন।
ধাঁধা লোক-সাহিত্যের এই প্রধান অংশ-অঙ্গ। এর আঙ্গিক এবং সুর সহজেই আমাদের আকৃষ্ট করে। আসলে সহজ জীবন ধারার সরস উক্তি থেকেই ধাঁধার জন্ম। বর্তমান গ্রন্থটিতে ধাঁধার উদ্ভব-বিকাশ, শ্রেণী বিভাগ নিয়ে কোনও তাত্ত্বিক আলোচনা করা হয়নি। গ্রন্থের উদ্দেশ্য লোক-সাহিত্যের মতোই সহজ ও সরল- ধাঁধাগুলো জানিয়ে দেয়া। ধাঁধার উপর গ্রন্থ ইতঃপূর্বে বেশ কিছু প্রকাশিত হয়েছে< ভবিষ্যতেও আরও হবে, তাত্ত্বিক আলোচনাও হবে। এই ধারায় একটি সংযোজন রাখার উদ্দেশ্য নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে ধাঁধা সংগ্রহের কাজ শুরু করি। ধাঁধা সংগ্রহের কাজে যারা আমাকে সর্বত্মক সহযোগিতা করেছে তাদের কাছে আমি সবিশেষ কৃতজ্ঞ। ধাঁধার মতো কম প্রচলিত এবং প্রচারিত গ্রন্থের প্রকাশনার দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রকাশক গাজী প্রকাশনীর- এর স্বত্বাধিকারী জনাব আলহাজ্ব গাজী মোহাম্মদ আলীকে বইটি প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বইটি দেশে ও বিদেশে (বাংলা ভাষা-ভাষীদের) প্রতিটি ঘরে শোভা পাক। সর্বোপরি, বাংলার লোক-সাহিত্যের পঠন-পাঠনে এবং গবেষণায় আমার এই গ্রন্থটি সহায়ক ভূমিকা রাখলে আমার শ্রম সার্থক হবে।
সাইফুল আলম প্রধানত সাংবাদিক। তাঁর গল্পকবিতা পড়লে মনে হয়, মূলতই তিনি সৃষ্টিশীল লেখক- লেখার পরিমাণ বা সংখ্যা যদিও পুরােপুরি সমর্থন করে না ‘মূলতই সৃষ্টিশীল লেখক অভিধা’কে। লেখালেখির সঙ্গে তিনি যুক্ত আছেন ছােটবেলা থেকেই। এই লেখকের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘হাত বাড়ালেই আকাশ’ এবং গল্পগ্রন্থ ‘হেঁড়া পাতা’ ও ‘নিম ফুলের ঘ্রাণ’-এ তার ব্যতিক্রমী মননের দিকটি স্পষ্ট। তার পড়ালেখা ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। শিশু সংগঠন চাঁদের হাট ও সাপ্তাহিক কিশাের বাংলার সাংস্কৃতিক জোয়ারে ঘুরে বেড়ান সারাদেশে। এ কারণেই তার। গল্প-কবিতা, কলাম এবং টেলিভিশন টকশােতে উঠে আসে সমগ্র বাংলাদেশের হৃদয়ের কোলাহল।। তাঁর সাংবাদিকতার শুরু কিশাের বাংলায়। দৈনিক জনতা, দৈনিক নব অভিযান, দৈনিক ইনকিলাব এসব পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে দৈনিক যুগান্তরে নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন সংবাদ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সদালাপী এই মানুষটি প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর। দায়িত্বের প্রয়ােজনে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে নানা বৈচিত্র্যময়তায় নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন। স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম একজন ব্যাংকার । দু কন্যার প্রথমজন রেদোয়ানা তাবাসসুম অন্তরা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য বিবিএ সম্পন্ন করেছেন, দ্বিতীয় কন্যা তানজিনা তাবাসসুম অনিমা এ লেভেলে পড়ছেন। লেখকের পৈত্রিক নিবাস চাঁদপুর।