ভূমিকা “Man is born free but everywhere he is in chains” ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের এই অমর বাণী দিয়ে শুরু করছি নাটকের পটভূমিকা। যে চরিত্র আনা হয়েছে তাও কাল্পনিক। ভলতেয়ারের সেই অমর বাণীতে বলা হয়েছে, ‘মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন কিন্তু মানুষ সর্বত্র শৃঙ্খলাবদ্ধ’। তাই আমাদের দেশটাকে বড় জেলখানার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আর এর সীমানা তাহলে ঐ বড় জেলানা প্রাচীর। জেলাখানার ভিতর হতে কোনো কয়েদী ইচ্ছে করলেই বাহির হতে পারে না বা ঢুকতে পারে না। এটকা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাহির বা ঢুকতে হয়। ঠিক এক দেশ হতে আরেক দেশ যেতে হলে বা অন্যদেশ হতে এদেশে আসতে হলে ঠিক অনুরূপ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে বা যেতে হয়।
এখানে যে কাল্পনিক চিত্র আনা হয়েছে তাদের একটি সংগঠন আছে। তার নাম ‘বিশ্ব বাটপার সমিতি’। সমিতির প্রধান বিশ্ব বাটপার সমিতির সভাপতি সবার নিকট একটি প্রশ্ন রেখেছে যে, আমরা কেন চোর হলাম? কারা আমাদের চোর বানালো? আর কী করলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
এ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে মৌলভী সাহেব বলেছেন, ‘যাকাত-ফেতরা গরীবদের মধ্যে বিতরণ বন্ধ করতে হবে। যাকাত-ফেতরা ও কুরবানীর অর্থ একত্র করে যদি কলকারখানা স্থাপন করা যায় এবং সেই কলকারখানায় কর্মসংস্থান করা যায় তাহলে গরীব খেদানো যাবে। শিল্পে উৎপাদিত ভালো মানের পণ্য বিদেশের বাজারে বিক্রি করতে পারলে দেশ সমৃদ্ধির মুখ দেখবে।’ হোমিও ডাক্তার মাতাল কিংসুর মতে, ‘মাথা ব্যথার জন্য দু’ফোঁটা বেলেডোনাই যেখানে যথেষ্ট সেখানে এত ওষুধের কী প্রয়োজন। যারা আমাদের শোষণ করছে ঐ ধনিক শ্রেণিটাকেও মোকাবেলা করতে হবে এভাবেই’ । উনি অবশ্য ধনীদের নাইট ক্লাবে গিয়ে কৌশলে তাদের মদের পাত্রে বিষ ঢেলে দিতেন।
আর একজন বিশ্ব পরিবেশ কর্মী। তার কথা হলো, আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করে আদম ও হাওয়াকে দান করেছেন। তাই আদম হাওয়ার উত্তরাধিকারী হিসেবে আমরা সবাই এই পৃথিবীর মালিক। সীমানা প্রাচীর দিয়ে আমাদের আটকে রাখা যাবে না। সীমানা প্রাচীর খুলে দাও, খুলে দাও এটা তাদের শ্লোগান। আর একটি চরিত্র বৈজ্ঞানিক। তার কথা হলো, নষ্টের শুরু ঐ ১৪ নং গোডাউন অর্থ্যাৎ পেট। ঐ গোডাউন শুধু খাদ্য দিয়ে ভরে রাখতে হয়। ভরে রাখতে না পারলেই গোণ্ডগোল।
এই পৃথিবীতে যত গোণ্ডগোল হচ্ছে তা ঐ ১৪ নং গোডাউনের জন্য। তাই এ ১৪ নং গোডাউন দেহ থেকে কেটে বাদ দিতে হবে। কিভাবে বাদ দেয়া যায় বৈজ্ঞানিক এখনো বের করতে পারেনি। যতদিন উপায় বের না হচ্ছে ততদিন মানুষকে উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জেলাখানার আরেক চরিত্র রাজনীতিবিদ। তার ভাষায় গোণ্ডগোলের মূল ঐ বাংলা বর্ণ ‘র’ । যেসব শব্দ অধিকারী। যেমন জমিদার, তালুকদার, মহামারি, চোর, বাটপার,ঘুষখোর, সুদখোর,জোতদার,হাবিলদার,চৌকিদার,রাজাকার,আলবদর,স্বৈরাচার, হাহাকার,মদখোর, গাঁজাখোর ইত্যাদি। এরূপ আরও অসংখ্য শব্দ খারাপ অর্থে ব্যবহৃত হয়। রাজনীতিবিদের ভাষায় ঐ ‘র’ কে এ জগৎ থেকে তাড়াতে পারলেই সমাজে সুখ শান্তি আসবে। আরেকজন আছেন ঝামেলা সাহেব। দুনিয়ার সব ঝামেলা তার কাছে। কিভাবে রাস্তা খোড়াখুড়ি দূর করা যায়, কিভাবে ঢাকাকে যানজট মুক্ত করা যায়। কিভাবে রাস্তা খোড়াখুড়ি দূর করা যায়। কিভাবে খাদ্য সমস্যা সমাধান করা যায়, কিভাবে হরতাল বন্ধ করা যায় এ সব বিষয়ে সকলের মতামত নিয়ে বিশ্ব বাটপার সমিতির সভাপতি ২১ তারিখে একটি মহাসম্মেলন করবেন। ওই সম্মেলন থেকে পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে। ততক্ষণ একটু অপেক্ষায় থাকুন....।
জন্ম ২ জানুয়ারি ১৯৪৬। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর । সাপ্তাহিক একতার প্রথমে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক (১৯৭০-৭৩) এবং পরে সম্পাদক ছিলেন (১৯৭৩-৯১)। সম্পাদক * ছিলেন ভােরের কাগজ (১৯৯২-৯৮) পত্রিকার । প্রথম আলাের সম্পাদক (১৯৯৮ সাল থেকে)। উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ ধনিকগােষ্ঠীর লুটপাটের কাহিনী (যৌথ, ১৯৮৭), খোলা হাওয়া খােলা মন (১৯৮৮), ইতিহাসের সত্য সন্ধানে বিশিষ্টজনদের মুখােমুখি (২০০৪), শহীদ নূর হােসেন (যৌথ, দ্বি. স. ২০১৩), আকাশভরা সূর্যর্তারা : কবিতা-গান-শিল্পের ঝরনাধারায় (২০১৪), মুক্ত গণতন্ত্র রুদ্ধ | রাজনীতি, বাংলাদেশ ১৯৯২-২০১২ (২০১৪)। এ ছাড়া উল্লেখযােগ্য সম্পাদিত গ্রন্থ একুশের পটভূমি : একুশের স্মৃতি (২০০৩), আমাদের কালের নায়কেরা ( (২০০৩), কৃতীদের মুখ (২০০৪), আলতাফ মাহমুদ: এক ঝড়ের পাখি (২০০৫) ফিলিপাইনের ম্যানিলা থেকে ‘সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও সৃজনশীল যােগাযােগ’-এ ২০০৫ সালে পেয়েছেন র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার ।।