ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা তার জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে অন্তত দুবার। ১০ বছর বয়সে, ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় তার দুচোখের আলো নিভে আসে। সে হয়ে পড়ে সম্পূর্ণ অন্ধ। তারপর বাবা-মা ভাইবোন ছেড়ে তাকে চলে যেতে হয় দষ্টিপ্রতিবদ্ধিদের আবাসিক স্কুলে। চারদিক অন্ধকার, নতুন পরিবেশ, নতুনন ধরনের পড়া, নতুন ধরনের লেকা, আর কঠোর শৃঙ্খলা-সেই নতুন জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ওই ছোট্ট ছেলেটাকে কী কষ্টই না স্বীকার করতে হয়েছিল। কঠিনতম সংগ্রাম শেষে যখন সে ভর্তি হয় ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে, তখন তার জীবনে নেমে আসে আরেক অন্ধকার। তার বাবার কর্মস্থল আদমজী পাটকল বন্ধ হয়ে গেলে তাদের পরিবার রাতারাতি পথে বসে পড়ে। তারপরও তার জীবনে আছে আলো, আছে প্রেম-বিরহ, আনন্দ-অভিমান। প্রতিবন্ধীদের অধিকার কেড়ে নেওয়া এই বিরূপ রাষ্ট্রের পেতে রাখা বাধা পদে পদে পেরিয়ে আছে তার এবং তার মতো প্রতিবদ্ধীদের নিত্যদিনের পথচলা। বাংলা সাহিত্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের নিয়ে এই রকম সত্যানুসন্ধানী বস্তু-হৃদয়-সময়নিষ্ঠ কথাসাহিত্যিক প্রয়াসের আর কোনো তুলনা আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। আনিসুল হকের আলা-অন্ধকারে যাই হয়তো সেই অভাবটা পূরণ করবে খানিকটা। আনিসুল হকের উপন্যাসের মতো আলো-অন্ধকারে যাই প্রবেশ করতে পেরেও আমরা গৌরবান্বিত
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।