বাংলাদেশেও রুশাের ‘সােশ্যাল কন্ট্রাক্ট’-এর বাংলা অনুবাদ যে এর পূর্বে না হয়েছে, তা নয়। কিন্তু মাওলা ব্রাদার্সের পক্ষ থেকে রুশাের ‘সােশ্যাল কন্ট্রাক্ট’-এর বর্তমান বাংলা অনুবাদ সরদার ফজলুল করিমের অনুবাদ। এ অনুবাদের বৈশিষ্ট্য সরদার ফজলুল করিমের রচনাশৈলী এবং অনুবাদের প্রাঞ্জলতার বৈশিষ্ট্য। কেবল অনুবাদ করার জন্য সরদার ফজলুল করিম রুশাের এ গ্রন্থকে অনুবাদ করেন নি। বাংলাদেশের বিদ্যমান সমাজ পরিস্থিতিতে সরদার ফজলুল করিম রুশােকে। বাংলাসাহিত্যের পাঠকের দরবারে পেশ করার প্রয়ােজন ও দায়িত্ববােধ থেকে এ অনুবাদ সম্পন্ন করেছেন। তাঁর মতাে অভিনিবেশ সহকারে রুশােকে পাঠ করার দৃষ্টান্তও বিরল। রুশােকে কেবল তিনি পাঠ করেননি, রুশােকে তিনি ভালােবেসেছেন। তাঁকে সম্বােধন করেছেন নিজের সমগােত্রীয় ‘প্রিয় রুশাে’ বলে। রুশাের এমন আন্তরিক উপস্থাপনা সমগ্র বাংলাসাহিত্যে যে এই প্রথম, একথা বলা কোনাে অত্যুক্তি নয়। একবছরের অধিককাল যাবৎ অনুবাদটি প্রখ্যাত সাহিত্য পাক্ষিক ‘শৈলী’তে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকলে অগণিত পাঠক অনুবাদটিকে গ্রন্থাকারে লাভ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের সেই আগ্রহ পূরণের জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ।
মে ১, ১৯২৫- সালের পহেলা মে বরিশালের আটিপাড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন৷ বাবা খবিরউদ্দিন সরদার কৃষিকাজ করতেন৷ মা সফুরা বেগম ছিলেন গৃহিণী৷ তাঁরা দুই ভাই তিন বোন৷ সরদার ফজলুল করিমের শৈশবকাল কেটেছে গ্রামে৷ ম্যাট্রিকুলেশন শেষে তিনি প্রথম ঢাকা আসেন ১৯৪০ সালে। ঢাকায় ১৯৪২ সনে তিনি তার আই.এ. পাঠ সমাপ্ত করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৪৫ সনে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৪৬ সনে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার সাম্যবাদী বামপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘ ১১ বৎসর বিভিন্ন পর্যায়ে কারাজীবন যাপন করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সনে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯৬৩ থেকে '৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তান হানাদারবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন। পরবর্তিতে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করেন। তিনি ১৫ জুন, ২০১৪ তারিখে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়মারা যান৷