"প্রেমের কবিতা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: পৃথিবীর এক অবিনশ্বর অনুভূতির নাম প্রেম। আর প্রেমী? তিনি কে? তিনি, নারী বা পুরুষের অবয়বে, প্রেমের আধার। প্রেম অবিনশ্বর। প্রেমী অবিনাশ। কিন্তু দুই-ই ভয়ঙ্কর দাহ্য। জয় গােস্বামীর প্রেমের কবিতাগুলির মধ্যে অসামান্য এই প্রজ্জ্বলন কবিতা-পাঠকের মগ্ন হৃদয়ে সঞ্চারিত হয়েছে আদিগন্ত। কোথাও বাধা মানেনি। কোথাও টুপটাপ খসে পড়েনি অনুভবের বিন্দু বিন্দু ডৌল। পড়েনি তার কারণ, কবিতাগুলির সত্য নির্মেদ, বাচন বাহল্যবিযুক্ত যেমন করে প্রেম মানুষের কাছে আপনি ধরা দেয়, তেমন করেই তার কবিতাগুলিও প্রেমিকের কাছে আপনি ধরা পড়ে। এই গ্রন্থের প্রবেশক কবিতাটি, যেন বা, কবির প্রেমদর্শন—যার পরতে পরতে সমর্পণ লেগে আছে। যার শেষে, ঈশ্বরের আদালত, মানবপ্রেম সম্পর্কে উচ্চারণ করছে চূড়ান্ত দুর্বিনীত রায়‘যাও, আজীবন অশান্তি ভােগ করাে।' সমস্ত মরুরাত্রি চোখ থেকে চোখে যে সংকেত পাঠাল তার দ্বারা মুগ্ধ কবি, এ গ্রন্থের সমস্ত কবিতায়, মােহনের দ্বারা অন্ধ হতে চেয়ে, দগ্ধ চোখে অসমাপ্ত চুম্বনের আর্তি লিখেছেন। আকুল প্রেম, গােপনীয়তা থেকে ফেটে বেরিয়েছে, প্রকাশ্য ঝর্নায় স্নান করার অপ্রতিরােধ্য ইচ্ছা সমেত। এবং, শেষ পর্যন্ত, এই গ্রন্থে সমস্ত প্রেমীর হয়ে তার। অমােঘ উচ্চারণ—‘এসাে, সূর্য, পুড়ে মরবার জন্য আমরা তৈরি।
জয় গোস্বামী ১৯৫৪ সালের ১০ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাটে জন্ম গ্রহণ করেন।তিনি হচ্ছেন একজন ভারতীয় কবি। তিনি বাংলা ভাষার এক আধুনিক কবি এবং উত্তর-জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি হিসাবে পরিগণিত। জয় গোস্বামীর জন্ম কলকাতা শহরে। ছোটবেলায় তাঁর পরিবার রানাঘাটে চলে আসে। তখন থেকেই তাঁর স্থায়ী নিবাস সেখানে। তাঁর পিতা রাজনীতি করতেন, তাঁর হাতেই জয় গোস্বামীর কবিতা লেখার হাতে খড়ি। ছয় বছর বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। তাঁর মা শিক্ষকতা করে তাঁকে লালন পালন করেন। জয় গোস্বামীর প্রথাগত লেখা পড়ার পরিসমাপ্তি ঘটে একাদশ শ্রেণীতে থাকার সময়। সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকায় তিনি কবিতা লিখতেন। এভাবে অনেক দিন কাটার পর দেশ পত্রিকায় তাঁর কবিতা ছাপা হয়। এর পরপরই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পরে তাঁর প্রথম কাব্য সংকলন ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালে তিনি ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ সালের আগস্ট মাসে তিনি পাগলী তোমার সঙ্গে কাব্য সংকলনের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।