এই সেই সায়ংকাল যখন কবির প্রকৃতি জুড়ে | পুরিয়া-ধানেশ্রী রাগ। যখন প্রকাশই প্রধান লক্ষ্য। অবয়ব নয়। তাই গল্প, না কবিতা, নাকি গল্প-কবিতার সীমা মুছে দেওয়া গহিন ভাষ্য—এ নিয়ে আর ব্যস্ত নন আমাদের কবি। বরং বিকেলবেলার কবিতাগুলি এবং ‘ঘাসফুলের কবিত পাঠ করলে কবির এই ইচ্ছাই স্পষ্ট হয়—যে-কথা কোথাও বলা হয়নি, সেইকথা বলার এখন যথাযোগ্য সময়। গল্প হিসেবে চিহ্নিত ‘ঘাসফুলের কবি'-র এই যে কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্তি, তার কারণ কবি তাঁর অভিজ্ঞতার সত্যকে প্রকাশ করতেই চেয়েছেন কেবল। আর, ‘ঘাসফুলের কবি’ সর্বাঙ্গীণ এক কবিতার মুখপাত্রও যে তা পড়লেই বুঝতে পারা যাবে। সব মিলিয়ে এই গ্রন্থ, এ-ও জয় গোস্বামীর এক নতুন ভাষায় ঋদ্ধ। প্রৌঢ়তার আলোমাখা। অস্তের গনগনে আঁচে উদার সত্যের ধ্বনি সমস্ত পৃষ্ঠায়। কবির ভাষাতেই তার মূর্ত থাকা—“দেখো, সূর্য ঢলেছেন, তাঁরও মুখে প্রৌঢ়তার আলো।/অস্তের আগুন বেশি? তবে তাকে শান্ত রাখা ভাল।” কীভাবে আসবে শান্তি ? কবিতাই পারে তাকে শান্তি দিতে। কিংবা কবিতার মতো খেলা, যে-খেলার জন্য অপেক্ষা করা যায় সারাটি জীবন। অপেক্ষা থাকে। আর কবি ও লেখেন—“কবি-জীবনের এই ধুলোওড়া বিকেলবেলায়/তোমার খেলাটি দ্যাখো আমার এই অবসাদ-দীপ্ত খেলাটিকে/অঙ্গার দু-নখে বিঁধে দু-ডানা ঝাপটিয়ে/সূর্যাস্ত পেরিয়ে উড়ে যায়...”।
জয় গোস্বামী ১৯৫৪ সালের ১০ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাটে জন্ম গ্রহণ করেন।তিনি হচ্ছেন একজন ভারতীয় কবি। তিনি বাংলা ভাষার এক আধুনিক কবি এবং উত্তর-জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি হিসাবে পরিগণিত। জয় গোস্বামীর জন্ম কলকাতা শহরে। ছোটবেলায় তাঁর পরিবার রানাঘাটে চলে আসে। তখন থেকেই তাঁর স্থায়ী নিবাস সেখানে। তাঁর পিতা রাজনীতি করতেন, তাঁর হাতেই জয় গোস্বামীর কবিতা লেখার হাতে খড়ি। ছয় বছর বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। তাঁর মা শিক্ষকতা করে তাঁকে লালন পালন করেন। জয় গোস্বামীর প্রথাগত লেখা পড়ার পরিসমাপ্তি ঘটে একাদশ শ্রেণীতে থাকার সময়। সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকায় তিনি কবিতা লিখতেন। এভাবে অনেক দিন কাটার পর দেশ পত্রিকায় তাঁর কবিতা ছাপা হয়। এর পরপরই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পরে তাঁর প্রথম কাব্য সংকলন ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালে তিনি ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ সালের আগস্ট মাসে তিনি পাগলী তোমার সঙ্গে কাব্য সংকলনের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।