"যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: শারদপত্রে এই উপন্যাস প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকমহলে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। আদ্যন্ত কবিতায় লেখা একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যে এই প্রচেষ্টা ইতিপূর্বে হয়েছে। কোনও কোনও পাঠকের স্মৃতিতে তা ধূসর ছবির মতাে ধরাও আছে নিশ্চয়ই। তবু জয় গােস্বামীর এই আখ্যানকাব্য নমস্য পূর্বসুরীদের অতিক্রম করে অনন্য হয়ে উঠেছে বিষয় নির্বাচনে, প্রকাশভঙ্গিমায়, নানা ছন্দের নিবিড় উপস্থাপনায়। গদ্যের নিশ্চিত, বেগবান, বিশ্লেষণী আশ্রয় ছেড়ে সম্পূর্ণ কাব্যভাষায় এবং ছন্দোবন্ধনে গঠিত হয়েছে এই উপন্যাসের অবয়ব। অথচ কোথাও অবসিত হয়নি প্লটনির্ভর গল্পের স্বাদ, বিচ্ছিন্ন হয়নি চিরানুক্রমিক থিমের মনস্বিতা। এই কাহিনীর সংলাপ কাব্যের মন্ময়তা সত্ত্বেও তেমনই দ্বন্দ্বমুখর, নাটকীয়। চরিত্রের ঘাত-প্রতিঘাত, রক্তমাংসের উপস্থিতি তেমনই অনিবার্য। গদ্যশরীর ছাড়াও, আমাদের জীবনের গল্প যে কাব্যভাষা আর কাব্যদেহের অবলম্বনে উপন্যাস হয়ে উঠতে পারে, তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হয়ে থাকল যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল। এই উপন্যাসের একদিকে আছে এক নারী, যে নিজের মা এবং ছােট বােনকে নিয়ে কাকার বাড়ির নিরুপায় আশ্রয়ে থাকে। একদিন সে বাড়ির যােগাযােগে সম্পূর্ণ অচেনা এক পুরুষের সঙ্গে বিবাহিত হয়ে পৌঁছয় এক যন্ত্রণাময় অসুখী দাম্পত্যে। আখ্যানের অন্যদিকে আছে এক তরুণ। দিদি আর পিসিমাকে নিয়ে যার সংসার। সে কবি হিসেবে সদ্য পরিচিতি পেতে শুরু করেছে। এই সময় তার জীবনে আসে প্রেম এবং তার পরিণতি হয় মর্মঘাতী। তা সত্ত্বেও, খানিকটা অজান্তেই দুটি কাহিনী তথা দুটি জীবন কীভাবে যেন পরস্পরের দিকে এগিয়ে আসে ! প্রতিটি ফুলের মতাে পক্তি জুড়ে সৃষ্টি হয় এক কাব্যমালা: ‘সত্যি কি জানি ভাের কাকে বলে ?/ ভােরে উঠে যাই গাছেদের কাছে/এ শিউলি আর ও গন্ধরাজ ফুল ফুটে আছে, ফুল ঝরে আছে/ হাত দিয়ে ওই পাতাগুলাে ছোঁয়া/ গাছকে কুশল প্রশ্নই কাজ শুরু করতেই গাছগুলাে বলে :/ কে আসবে আজ ? কে আসবে আজ ?”
জয় গোস্বামী ১৯৫৪ সালের ১০ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাটে জন্ম গ্রহণ করেন।তিনি হচ্ছেন একজন ভারতীয় কবি। তিনি বাংলা ভাষার এক আধুনিক কবি এবং উত্তর-জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি হিসাবে পরিগণিত। জয় গোস্বামীর জন্ম কলকাতা শহরে। ছোটবেলায় তাঁর পরিবার রানাঘাটে চলে আসে। তখন থেকেই তাঁর স্থায়ী নিবাস সেখানে। তাঁর পিতা রাজনীতি করতেন, তাঁর হাতেই জয় গোস্বামীর কবিতা লেখার হাতে খড়ি। ছয় বছর বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। তাঁর মা শিক্ষকতা করে তাঁকে লালন পালন করেন। জয় গোস্বামীর প্রথাগত লেখা পড়ার পরিসমাপ্তি ঘটে একাদশ শ্রেণীতে থাকার সময়। সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকায় তিনি কবিতা লিখতেন। এভাবে অনেক দিন কাটার পর দেশ পত্রিকায় তাঁর কবিতা ছাপা হয়। এর পরপরই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পরে তাঁর প্রথম কাব্য সংকলন ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালে তিনি ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ সালের আগস্ট মাসে তিনি পাগলী তোমার সঙ্গে কাব্য সংকলনের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।