"পদ্যসমগ্র - ৭ শক্তি চট্টোপাধ্যায়" বইয়ের ফ্ল্যাপের কথা হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এর আগে তাঁর সার্থক আত্মপ্রকাশ কৃত্তিবাস’ ও ‘কবিতা’ পত্রিকায় এই দুই পত্রিকাতে প্রায় একই সঙ্গে প্রকাশিত হয়ে বাংলা কবিতার আসর চমকে দিয়ে আবির্ভূত। হলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। কোনও প্রেরণা নয়, কোনও সনির্বন্ধ ভালােবাসায় না—শুধুমাত্র চ্যালেঞ্জের মুখােমুখি হয়ে এইসব পদ্য লেখা’ নিজেই জানিয়েছেন তিনি। প্রথম থেকেই তিনি শব্দের প্রভু, কখনও পূজারী। পাঠককে তিনি আবিষ্ট করেছিলেন কিংবদন্তিপ্রতিম জীবনযাপন দিয়ে। কবিতা দিয়ে। ভাষার অনায়াস অধিকারে, ভাবনার অভাবনীয় তীক্ষ্ণতায়। জীবনচর্চার এলােমেলাে নিয়মহীনতায়, মধ্যবিত্তের সাবধানী মূল্যবােধকে অনায়াস ফুৎকারে উড়িয়ে দেবার তাচ্ছিল্যে। কিন্তু যতই কেন্দ্রাতিগ তােক তাঁর কক্ষপথ, যতই রহস্যময় হােক তাঁর উচ্চারণ, পাঠকের বুঝে নিতে দেরি হয়নি তাঁর মৌল বক্তব্য: মানুষের জন্য ভালবাসা। নিজের কবিতাকে তিনি বলতেন পদ্য। তাঁর সমস্ত কাব্যগ্রন্থ ও কবিতা খণ্ডে খণ্ডে সংকলিত হচ্ছে এই পদ্যসমশ্রে। এই সপ্তম খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে : সকলে প্রত্যেকে একা’, ‘অগ্রন্থিত শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং গ্রন্থবদ্ধ হয়নি এমন বেশ কিছু কবিতা ও ছড়া। এ ছাড়াও বর্তমান খণ্ডে আছে কবি শঙ্খ ঘােষের একটি প্রবন্ধ এবং প্রভাতকুমার দাস-সংকলিত কবির জীবনীপঞ্জি ও প্রাসঙ্গিক তথ্য। এ যুগের এক অন্যতম প্রধান কবির সৃজন-সত্তার এক জীবন্ত ও অনুপম চলচ্ছবি যেন কালানুক্রমিক এই কাব্যগ্রন্থাবলী। এই খণ্ডেও আছে প্রতিটি গ্রন্থের বিশদ বিবরণ সমন্বিত গ্রন্থপরিচয়, যা পাঠকের সঙ্গে কবির পরিচয়কে আরও অন্তরঙ্গ করে তুলবে। এই খণ্ডটিরও সম্পাদনা করেছেন কবিপত্নী মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়। "পদ্যসমগ্র - ৭ শক্তি চট্টোপাধ্যায়" বইয়ের সূচিপত্র: এই শহরের রাখাল; শঙ্খ ঘােষ.....৯ সকলে প্রত্যেকে একা.....২৩ অগ্রন্থিত শক্তি চট্টোপাধ্যায়.....৬৯ অগ্রন্থিত কবিতা.....২৯৩ অগ্রন্থিত ছড়া.....৩২৭ পরিশিষ্ট: শক্তি চট্টোপাধ্যায় সংক্ষিপ্ত জীবনীপঞ্জি ও প্রাসঙ্গিক তথ্য: প্রভাতকুমার দাস.....৩৪৭ গ্রন্থপরিচয়.....৩৭৫ কবিতার প্রথম পক্তির বর্ণানুক্রমিক সূচি.....৩৯৩
জন্ম: নভেম্বর ২৫, ১৯৩৪ সালে জীবনানন্দ-উত্তর যুগের বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান আধুনিক কবি। বাঙালি-ভারতীয় এই কবি বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বিশেষভাবে পরিচিত এবং আলোচিত ছিলেন। শক্তি চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ এর জয়নগর - মজিলপুরের দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম বামানাথ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতার কাশিমবাজার স্কুলে পড়তেন। দারিদ্রের কারণে তিনি স্নাতক পাঠ অর্ধসমাপ্ত রেখে প্রেসিডেন্সি কলেজ ছাড়েন এবং সাহিত্যকে জীবিকা করার উদ্দেশ্যে উপন্যাস লেখা আরম্ভ করেন। কলেজজীবনে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। প্রথম উপন্যাস লেখেন কুয়োতলা। কিন্তু কলেজ - জীবনের বন্ধু সমীর রায়চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বনাঞ্চল - কুটির চাইবাসায় আড়াই বছর থাকার সময়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায় একজন সফল লিরিকাল কবিতে পরিণত হন। একই দিনে বেশ কয়েকটি কবিতা লিখে ফেলার অভ্যাস গড়ে ফেলেন তিনি। শক্তি নিজের কবিতাকে বলতেন পদ্য। ভারবি প্রকাশনায় কাজ করার সূত্রে তার শ্রেষ্ঠ কবিতার সিরিজ বের হয়। পঞ্চাশের দশকে কবিদের মুখপত্র কৃত্তিবাস পত্রিকার অন্যতম কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তার উপন্যাস অবনী বাড়ি আছো? দাঁড়াবার জায়গা ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। রূপচাঁদ পক্ষী ছদ্মনামে অনেক ফিচার লিখেছেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'হে প্রেম, হে নৈশব্দ' ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় দেবকুমার বসুর চেষ্টায়। ১৯৭০ - ১৯৯৪ আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরি করেছেন। ১৯৬১ সালের নভেম্বরে ইশতাহার প্রকাশের মাধ্যমে যে চারজন কবিকে হাংরি আন্দোলন - এর জনক মনে করা হয় তাঁদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অন্যতম । সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার সহ তিনি একাধিক পুরস্কারে সন্মানিত । তিনি মার্চ ২৩, ১৯৯৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।