জীবন সংকেত মধুসূদনের কবিপ্রকৃতিকে বোঝার জন্য তাঁর জীবনচরিতের দিকেও ফিরে তাকানো দরকার। প্রথাগত রুটিনবদ্ধ জীবনচর্চার ফাঁকে কাব্যবিলাস, এই ছকে তাঁর জীবনকে ধরা খুবই মুস্কিল। বরং তাঁর জীবনধারা থেকে কিছু signal বা সংকেতকে তুলে এনে তারই সঙ্গে তাঁর কাব্যচর্চার যোগসূত্র খোঁজাটাই উপযুক্ত কাজ হতে পারে। ক. মধুসূদন মধ্যবিত্তের জীবনচলের বাইরে দাঁড়িয়ে ধ্যানে-স্বপ্নে আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এ জন্যই বাল্যে-কৈশোরে তিনি দেশীয় শিক্ষা-সংস্কৃতির সঙ্গে প্রকট ইচ্ছাকৃত দূরত্ব গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর ধর্মান্তরকরণ এই প্রতিজ্ঞারক্ষারই এক অছিলা ছিল। খ. পোষাকে-আসাকে, ঠাটে-ব্যবহারে এবং কথাবার্তায় ষোল আনা ইংরেজ হয়ে ওঠাই ছিল তাঁর তরুণ বয়সের মন্ত্র। আদব-কায়দায় ইংরেজিয়ানার নিচে নামার কথা তিনি কখনই ভাবতে পারেননি। 'তাই আর্থিক অস্বচ্ছলতার মধ্যেও সামাজিক জীবনযাপনের এই ষ্টাইলকে বজায় রাখতে গিয়ে তিনি যৎপরোনাস্তি বিপর্যস্ত হয়েছেন। এই অপকর্ম জনিত হতাশা-বেদনা কখনও তাঁর পিছু ছাড়েনি। তাঁর কাব্যশিল্প এই বেদনাতেই সর্বক্ষণ নিষিক্ত হয়ে আছে।