"শেষ নমস্কার : শ্রীচরণেষু মাকে" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: শৈশব থেকে বেড়ে উঠছে একটি বালক, কৈশােরের সন্ধিলগ্নে সে পথ হারাল। লজ্জিত, অবগুণ্ঠিত, নিস্পাপ একটি কিশাের ক্রমশ নির্লজ্জ, বেপরােয়া, পাপ-তপ্ত হয়ে উঠেছে। ক্রমশ যাত্রা করেছে অর্থের দিকে, প্রতিপত্তির দিকে, সাফল্যের দিকে। কিন্তু অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে, সেই সফলতা যখন করায়ত্ত, তখন যাজ্ঞবল্ক্যর স্ত্রী মৈত্রেয়ীর মতাে এই মানুষটিরও মনে হয়েছে এই বৈভব, প্রতিপত্তি তার প্রার্থিত ছিল না। যাকে সে জীবনের মর্মমূল বলে এতকাল চিনে। এসেছিল—পাওয়ার পর দেখল তা নিতান্তই জীবনের খােসামাত্র—আর তখনই মধ্য বয়সে পৌঁছে যাওয়া মানুষটি কম্প্রবক্ষে ননেত্রপাতে সাম্পু প্রণতি জানাতে বসেছে ‘শ্রীচরণেষু মাকে। কারণ, অনিবার্য বিচারক যে মা ছাড়া কেউ হতে পারেন না। এই উপন্যাসে জীবন ও মৃত্যু, সাহস ও ভয়, যুদ্ধ ও পলায়ন, মিথ্যা ও সত্য, স্বীকার ও অস্বীকার, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত এই মৌলিক বিষয়গুলি প্রায় দিন ও রাত্রির অনিবার্যতায় এসেছে এবং এই বৈপরীত্যগুলির উত্তর দিতে গিয়ে লেখক নিজেও রক্তাক্ত হয়েছেন। জীবনের একেবারে মৌলিক এই স্তরগুলিকে ধরার জন্য লেখক তাই যে দুটি প্রধান চরিত্রকে হাজির করেছেন তাদের সম্পর্কসূত্রও মৌলিকতম : মা ও ছেলে। মায়ের কাছে ছেলের স্বীকারােক্তি। এই স্বীকারােক্তিতে জীবনবােধের সঙ্গে ভিতরে ভিতরে বয়ে চলেছে মৃত্যুবােধও। ফলে গল্পের টান, চেনা চরিত্রের আকর্ষণের সঙ্গে সচেতন পাঠক। নিজের ভিতরে একটা চোরাস্রোতের টানও অনুভব করবেন।
সন্তোষকুমার ঘোষ (জন্ম: ৯ সেপ্টেম্বর ১৯২০ - মৃত্যু: ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫) একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। সন্তোষকুমার ঘোষ বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরের রাজবাড়ীর বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে বিএ পাস করেন। কবিতা দিয়ে তাঁর সাহিত্য রচনার শুরু হয় । তাঁর প্রথম উপন্যাস নানা রঙের দিন থেকেই তাঁর মধ্যে এক নতুন রচনাশৈলির পরিচয় পাওয়া যায় । কিনু গোয়ালার গলি তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস । তাঁর আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস শেষ নমস্কার - শ্রীচরণেষু মাকে । এই গ্রন্থটি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। কয়েক দশক ধরে তিনি নিজস্ব ভঙ্গিতে বহু ছোটগল্প লিখেছেন । তাঁর অন্যান্য বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জল দাও, সময় আমার সময় প্রভৃতি। তাঁর সাংবাদিক জীবনের শুরু ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে যুগান্তর পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসাবে। এরপর বাংলা ও ইংরেজি আরও কয়েকটি পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার বার্তা-সম্পাদক হিসাবে যোগ দিয়ে বাংলা সাংবাদিকতায় নতুনত্ব আনেন। পরবর্তীকালে তিনি এই পত্রিকার সংযুক্ত সম্পাদক হন। তিনি অনেক সাংবাদিকও গড়ে তুলেছিলেন। সন্তোষকুমার ঘোষ একজন রবীন্দ্র অনুরাগী ছিলেন ।