স্বীকার্য - অষ্টাদশ শতাব্দীর চালচিত্রে একটি বৃহদায়তন উপন্যাস রচনার এই ইচ্ছেটা হঠাৎ কেন জাগল সে-বিষয়ে আপনাদের কৌতূহল হতেই পারে। বিশেষত আজ বছর-দশেক ধরে লেঅনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিষয়ে কাগজপত্র, বই ইত্যাদি সংগ্রহ করে চলেছি, নোট রাখছি, কাজে হাত দিতে পারিনি হঠাৎ একটা 'না-মানুষী' দরদ উথলে ওঠায়। সে 'বিশ্বকোষ' ও অসমাপ্ত - শুধু ঐ অমেরুদণ্ডী পর্যায়টুকু পাড়ি দেওয়া গেছে। সেক্ষেত্রে- কী জানেন? খেয়াল-বেখেয়ালে কোন গানের তান যে ধরে বসবে ঐ 'সাধের লাউ' তা কি বাউল নিজেই আগে-ভাগে টের পায়? আঙুলের সঙ্গে গুবগুবির আঁতাত, কণ্ঠকে গলা মেলাতেই হয়। শিবনাথ শাস্ত্রী যাকে বলেছেন 'বঙ্গের নবযুগ', পরে যার নাম হয় 'বেঙ্গল রেনেসাঁস', তার উপর যথেষ্ট গবেষণাগ্রন্থ আছে; অগুন্তি গবেষক তাঁদের বজ্রমণিশলাকায় সেই সময়-এর অসংখ্য মণিমাণিক্য সমুৎকীর্ণ করে রেখেছেন। তাই সেই সময়ের মালা গাঁথা দুঃসাধ্য হতে পারে, অসাধ্য নয়। সাম্প্রতিককালে বৃহদাকারে সে-চেষ্টা করাও হয়েছে। আমি নৌকাটাকে ঠেলে ঠেল্লে আরও একশ বছর উজানে নিয়ে যেতে চেয়েছি। ঊনবিংশ শতাব্দীর তুলনায় প্রাক-রামমোহনের 'সেই তর' যুগের বঙ্গসমাজ তথা গৌড়-সংস্কৃতি গভীর তমসাচ্ছন্ন।
Narayon Sanyal ( ২৬শে এপ্রিল, ১৯২৪ - ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৫) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখক। এছাড়াও তিনি একজন পুর প্রকৌশলী । নিত্য নতুন বিষয়বস্তু নির্বাচন ছিল তাঁর রচনাশৈলীর এক বৈশিষ্ট্য। লেখকের আদি নিবাস নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর। তিনি কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ছিলেন। স্কুলের খাতায় নাম ছিল নারায়নদাস সান্যাল। ১৯৪৮ সালে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি.ই. সম্পন্ন করেন। তিনি ইন্সটিট্যুট অব ইঞ্জিনিয়ার্স (ইন্ডিয়া)-এর ফেলো ছিলেন। ১৯৮২ সালে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছিলেন। সাহিত্যজগতে নারায়ন সান্যাল তাঁর বকুলতলা পি এল ক্যাম্প ও দন্ডক শবরি গ্রন্থের জন্য বিশেষভাবে পরিচত। পি.ডব্লু.ডি তে চাকরি করাকালীন দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে তাঁর পোস্টিং হয়, জীবনের অভিজ্ঞতায় এই দুটি উপন্যাস লেখেন যা বিদগ্ধ পাঠক মহলে সমাদৃত হয়। এছাড়া বিজ্ঞান, শিল্প স্থাপত্য ভাস্কর্য ও সামাজিক, ঐতিহাসিক উপন্যাস প্রচুর লিখেছেন। শিশু কিশোরদের জন্যেও তাঁর রচনা সুখপাঠ্য। তাঁর অন্যান্য রচনাগুলির মধ্যে বিশ্বাসঘাতক, ষাট একষট্টি, হে হংসবলাকা, নক্ষত্রলোকের দেবতাত্মা, আবার যদি ইচ্ছা করো, অরণ্য দন্ডক, অশ্লীলতার দায়ে, না মানুষের পাঁচালী উল্লেখযোগ্য। রহস্য গোয়েন্দা কাহিনীও লিখেছেন, তাঁর কাঁটা সিরিজ নামে খ্যাত বইগুলির মূল চরিত্র ব্যারিস্টার পি কে বাসু স্ট্যানলি গার্ডেনারের প্যারি ম্যাসন এর আদলে তৈরি। তার রচিত কাহিনী নাগচম্পা (যদি জানতেম), সত্যকাম, পাষণ্ড পন্ডিত চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। রবীন্দ্র পুরস্কার - অজন্তা অপরূপা-১৯৬৯, বঙ্কিম পুরস্কার - রূপমঞ্জরী-২০০০, পুরস্কারে ভূষিত হন।