কবি-মন বড় স্পর্শকাতর। শুরু বাল্মীকি থেকে, শুরু কালিদাস থেকে, শুরু বৈষ্ণবকবিদের থেকে। এর মূলসূত্রে বেদনা, বিরহ। ভারতের সমাজজীবনের শাশ্বত ও চিরকালীন বাস্তবতার সঙ্গে এই সূত্র জড়িয়ে ছিল বহু শতাব্দী। কিন্তু বিশ শতকের মধ্যভাগে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা। আমাদের দেশের সাহিত্যে প্রভাব ফেলে। তাতেই বাংলা সাহিত্য হয়ে উঠে বৈচিত্র্যময়। এর সবচেয়ে উন্নত অংশটি হল বাংলায় নির্মিত কবিতা। কী এ বাংলায় কী ও-বাংলায় এই সময়কার কবিরা ঘুরে ফিরে দেখেছেন। ইতিহাসের নিষ্ঠুর ঘটনাবলি। সেসব বিষাদের মধ্যে তারা তাদের কবিতায় আলাের হদিশ দিয়েছেন। এঁদের কবিতার ভাষা হয়েছে দীর্ঘ গভীরতর হয়েছে এঁদের অনুসন্ধান। এঁরা দর্শনদ্রষ্টা। এঁদের সৃজনশীলতার সুরভি থেকে যােগ্যতার সঙ্গে এই কাব্যসংকলনগ্রন্থের সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় সেন সুনিপুণভাবে তুলে এনেছেন সেই বিশ শতকের প্রতিনিধিত্বমূলক কবিদের কবিতা। এইসব কবি তাদের কবিতায় নিজস্ব-জগৎ সৃষ্টি করেছেন, গড়েছেন ভাষা, গড়েছেন স্বতন্ত্র ঘরানা। মৃত্যুঞ্জয় সেন সম্পাদনার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে সুধী পাঠকের প্রশংসাধন্য হয়েছেন। ইনি একাধারে কবি এবং সম্পাদনায় অভিজ্ঞ হবার ফলে বর্তমান সংকলনগ্রন্থটি অনিন্দ্য সুন্দর হয়েছে। সম্পাদকের কাজ পাঠকের সঙ্গে কবির কবিতার যােগাযােগসূত্র তৈরি করা। সে হিসেবে এই সংকলনগ্রন্থের ক্ষেত্রে তিনি সার্থক। এখানে যেমন সম্পাদকের সন্ধানীদৃষ্টির হদিস পাওয়া গেছে, তেমন পাওয়া গেছে কিছু কবিতাও নতুন করে। বস্তুত বুদ্ধদেব বসুর পরে এমন প্রতিনিধিত্বমূলক কাব্যসংকলনগ্রন্থ আর হয়েছে বলে মনে হয় না। সুধী পাঠকদের আনুকূল্য পেলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে।