"উপন্যাস সমগ্র ৯" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: কথাসাহিত্যিক বিমল কর-এর আজীবনের সাহিত্যে বারবার উঠে এসেছে আশ্চর্য জীবন, রংবেরঙের মানুষ, মায়াগভীর সংলাপ। মানুষের হৃদয়ের নিভৃত ভুবনে আলাে ফেলেছেন তিনি। ডুব দিয়েছেন চরিত্রের আত্মার গহনে। পরিশ্রমী সাধনায় পাঠককে উপহার দিয়েছেন অভাবিত সব আখ্যান। মনস্তাত্ত্বিক অভিযাত্রায় সিদ্ধহস্ত তিনি। বাংলা সাহিত্যের বিরল গােত্রের লেখক বিমল কর-এর ‘উপন্যাস সমগ্র’ সর্বার্থেই এক সম্পদ। নবম খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে জীবনপ্রান্তে রচিত ন’টি উপন্যাস— চাতক, সহচর, গােলাপের দুঃখ, এই বেদনায় বিষাদে, তারা তিনজন, শীত বসন্তের অতিথি, রাজমােহনের সুখদুঃখ, একটি বনৰ্চাপার গাছ ও আমার বন্ধু, ইমলিগড়ের রূপকথা। বিমল কর-এর বিচিত্র জগৎ আমাদের বিস্মিত করে। ‘চাতক’ উপন্যাসে এক বৃহৎ পরিবারের বর্ণিল তরঙ্গ তাে ‘সহচর’ উপন্যাসে তথাকথিত কলঙ্কময়। এক বাড়িতে প্রমথেশ-কমলিকার আত্মীয়-বিচ্ছিন্ন বিষাদ। আবার ‘গােলাপের দুঃখ’ জানায় বৃদ্ধ । শিবনাথের গােপনতা বহনের রহস্য আর এই বেদনায়, বিষাদে ভালবাসা যেন চিররূপকথা। ‘তারা তিনজন’ বাস করতে চায় বন্ধু-পৃথিবীতে, ‘শীত বসন্তের অতিথি’ সম্পর্কের কাছে খোঁজে নির্ভরতা। রাজমােহনের সুখদুঃখ’ যেন জ্বলন্ত। ফুলঝুরি, একটি বনৰ্চাপার গাছ ও আমার বন্ধু যেন দায়বদ্ধতা। আর ‘ইমলিগড়ের রূপকথা’য়। ভ্রমণার্থীরা নিশ্চিত পরে আছে নতুন জন্মের পােশাক। সজীব অনুভূতি, প্রগাঢ় অন্তদৃষ্টি নিয়ে শেষ পর্বের এই উপন্যাসগুলিতেও বিমল কর অক্লান্ত এবং স্ব-মহিম।
বিমল করের জন্ম ৩ আশ্বিন ১৩২৮, ইংরেজি ১৯২১। শৈশব কেটেছে নানা জায়গায়। জব্বলপুর, হাজারিবাগ, গােমাে, ধানবাদ, আসানসােল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। কর্মজীবন : ১৯৪২ সালে এ.আর.পি.-তে ও ১৯৪৩ সালে আসানসােলে মিউনিশান প্রােডাকশন ডিপােয়। ১৯৪৪-এ রেলওয়ের চাকরি নিয়ে কাশী মণিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘পরাগ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক, পরে পশ্চিমবঙ্গ’ পত্রিকা ও ‘সত্যযুগ’-এর সাব-এডিটর। এ-সবই ১৯৪৬ থেকে '৫২ সালের মধ্যে। ১৯৫৪-১৯৮২ সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮২-১৯৮৪ ‘শিলাদিত্য মাসিক পত্রিকার সম্পাদক। বহু পুরস্কার। আনন্দ পুরস্কার ১৯৬৭ এবং ১৯৯২। আকাদেমি পুরস্কার ১৯৭৫। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পুরস্কার ১৯৮১। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহদাস পুরস্কার ১৯৮২। ‘ছােটগল্প—নতুন রীতি’ আন্দোলনের প্রবক্তা ।