আমার উত্তর শুনে যুবক হোটেলম্যানেজার কয়েক সেকেন্ড ধরে আমাদের দুজনকে দেখেন তারপরে বিস্মিত স্বরে পুনরায় প্রশ্ন করেন—ইনি আপনার বোন? আমি মাথা নেড়ে একই উত্তর দিই। ম্যানেজারের বিস্ময় বাড়ে। বলেন--কিন্তু আপনি তো ভারতীয়। -হ্যাঁ। —আর ইনি? গ্যাব্রিয়েলকে দেখিয়ে ম্যানেজার বলেন। উত্তর দিই—ফরাশি । —তাহলে আপনারা ভাই-বোন হলেন কেমন করে? ম্যানেজারের মুখে মৃদু হাসি । এবারে পাল্টা প্রশ্ন করতে হয়—রক্তের সম্পর্ক না থাকলে বুঝি ভাই-বোন হওয়া যায় না? ভদ্রলোক অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। একটু নীরব থেকে মৃদুকণ্ঠে উত্তর দেন—তা হয়তো হওয়া যায়। —আমরাও তেমনি ভাই-বোন। —তবুও এ হোটেলে আমি আপনাদের একঘরে রাত্রিবাস করতে দিতে পারি না। —আমি তো আপনার কাছে একখানি ঘর চাই নি। আমাদের পাশাপাশি দু'খানি সিঙ্গলরুম দিতে পারলে ভাল হয়। বেশ। তাই পাবেন। তিনি খাতা খুলে আমার সামনে মেলে ধরেন। আমি কলম বের করি। ভদ্রলোক আবার জিজ্ঞেস করেন—আপনার বোনের তো পাসপোর্ট আছে? —নিশ্চয়ই। গ্যাব্রিয়েল বলে ওঠে। সে হ্যান্ডব্যাগ খুলে পাসপোর্ট বের করে ম্যানেজারের হাতে দেয়। লেখা-লেখি ও সই-সাবুদ শেষ হবার পরে ম্যানেজার জনৈক কর্মচারীর হাতে দুটি চাবি দিয়ে বলেন—এঁদের ১০৪ ও ১০৫ নম্বর ঘরে নিয়ে যাও । আমি মালপত্রের দিকে হাত বাড়াই। ম্যানেজার বাধা দিয়ে বলেন—আপনারা ব্রিফকেস ও হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে ওর সঙ্গে যান। স্যুটকেস দুটো পরে ঘরে দিয়ে আসবে। তারপরে তিনি আমার হাতে একখানি কার্ড দিয়ে বলেন—এটা পকেটে রেখে দেবেন। নতুন জায়গা, সুবিধে হবে। কার্ডখানিতে চোখ বোলাই HOTEL ITTA, T. G. N. Complex, 95 N. S. C. Bose Road, Chennai - 600079. দোতলায় পাশাপাশি দু-খানি ছোট ঘর। ছোট হলেও বাথরুম যুক্ত এবং ঘরে প্রয়োজনীয় আসবাব রয়েছে। আর আছে একটি করে জানলা, পেছনের দেওয়ালে।
Shonku Moharaj বর্তমান বাংলা ভ্রমণ-সাহিত্যের জনপ্রিয়তম নাম। সুগত সাতাশ বছরে তাঁর ছত্রিশটি শিল্পকর্মের মধ্যে তিনখানি বাদে বাকি সবকটিই ভ্রমণকাহিনী। তাঁর পনেরোটি হিমালয়-কাহিনীর শেষখানি ব্রহ্মলোকে। বিগত গ্রন্থে শঙ্কু মহারাজ-এর সারথ্যে পাঠক-পাঠিকার মানস-ভ্রমণ সম্পণ ‘হয়েছে সূদূরবতী’ সুইজারল্যান্ডে, জয়ন্তী জুরিখে। য়ুরোপের আলপস থেকে স্বল্প স্বাদবদল করে লেখক আবার ফিরে এলেন হিমালয়ে, দেশমাতার পূজায় পুনরায় নিজেকে নিবেদন করতে। বিচ্ছেদবাদ যখন ভারতের অঙ্গচ্ছেদনে শামিল, জাতীয় চেতনার সামনে তখুনি তিনি তুলে ধরলেন গুর্জর কিশোরী শ্যামা আর কিশতোয়ারী মালবাহক আবদুল রসিদের কথা, যারা বিদায়বেলায় বাঙালি অভিযাত্রীদের জন্য চোখের জল ফেলে, হিন্দু সাহেবদের নিরাপত্তার জন্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কারফিউ কবলিত শহরে ছুটে আসে। বাঙালির কাছে প্রায় অপরিচিত কিশতোয়ার-হিমালয়ের ওপরে রচিত বাংলাসাহিত্যের প্রথম ভ্রমণকাহিনী এই ব্রহ্মলোকে। কলকাতার একদল দামাল যুবক গিয়েছিলেন কিশতোয়ার হিমালয়ের দুগেমতম শৃঙ্গ ব্রহ্মা-১ (২১,০৪৯) পর্বতাভিযানে। লেখক সেই অভিযাত্রীদের অন্যতম। তবে তিনি কেবল পর্বতারোহণ নিয়েই ব্যস্ত থাকেননি। সেই সঙ্গে তাঁর সাবলীল ভাষায় বলেছেন, অনাবিষ্কৃত বিশতোয়ার হিমালয়ের ভাষা ভূগোল ইতিহাস গাছপালা পশু-পাখি পাহাড় ও পথের কথা, বলেছেন সরল ও সুন্দর মানুষদের কথা, যাঁদের সহজ জীবন আর লেখকের সরস লিখন একযোগে পাঠক-পাঠিকাকে নিয়ে যাবে ব্রহ্মলোকের ব্রজ্যায়।