মহীশূর রাজ্যের কাদুর জেলার মধ্যে একটা রেলওয়ে স্টেশনের নাম হলো বীরুর। বীরুরের পশ্চিমে একটা রেললাইন টানা চলে গেছে সিমোগাতে। পাশেই বেশ উঁচু একটা পাহাড়; হোগারখান নামে পরিচিত। অর্ধচন্দ্রের আকারে সারি সারি পাহাড়গুলো থেকে ছিটকে সরে দাঁড়ানো একটা চূড়াই হলো এই কাহিনির পটভূমিকা। এই পাহাড়গুলোকে বলা হয় বাবা বুধন বা মাউন্টেন অফ্ ক্রিসেন্ট। অর্থাৎ অর্ধচন্দ্রের পাহাড়। এই পাহাড়ের পশ্চিমমুখো ঢেউখেলানো উপত্যকাটা আর্দ্র হলেও সবুজ ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। উপত্যকাটার নাম হলো ডগের ভ্যালি। এই উপত্যকায় আস্তানা গেড়েছে অসংখ্য বাইসন এবং সম্বর; লক্ষ লক্ষ বিষাক্ত কীট সরীসৃপ আর জোঁক। সেই সঙ্গে বছরে একশো ইঞ্চিরও বেশি বৃষ্টিপাত জঙ্গলটাকে অন্ধকারময় ঘন অরণ্য করে তুলেছে। অরণ্যের এমনই নিবিড়তা যে দুপুর বেলাতেই টানা গলায় ব্যাঙ ডাকে, একনাগাড়ে ঝিঁঝি পোকা গান গায়। রাতের বেলা ওদের গলাটা আরো উচ্চগ্রামে ওঠে; সঙ্গে সঙ্গত শুরু করে কাঠ ঝিঁঝি, যাদের ডাক শুনলে দূর থেকে মনে হয় কোনো কাঠুরিয়া ক্রমাগত করাত দিয়ে কাঠ চেরাই করে চলেছে। ক্রিসেন্ট পাহাড়ের পূর্বদিকে হলো হোগারখান; এই হোগারখানের উপত্যকায় পরিষ্কার সূর্যালোকে উদ্ভাসিত সুগভীর অরণ্য বছরের প্রায় তিন মাস ভারতের পশ্চিম উপকূল থেকে আসা জোরালো বাতাস মনসুনের প্রবল বারিপাত বয়ে নিয়ে আসে। এই পাহাড়ের পাদদেশে ছোট্ট একটা গ্রাম; এই অঞ্চলের লাল পাথর দিয়ে তৈরি একটা বিরাট মন্দির ঠিক গ্রামটার মাঝখানে। মন্দিরটা নিয়ে গ্রামবাসীদের গর্বের সীমা নেই। ধারে-পাশের পাহাড়গুলো থেকে গ্রামগুলোর নাম ধার করা। যার জন্য এই গ্রামের নাম হোগরেহালি। গ্রামটার দক্ষিণে বিরাট একটা হ্রদ; ভারতবর্ষের এই প্রান্তের লোক অবশ্য তালাও বা পুকুর বলে। গ্রাম থেকে দুটো পায়ে চলা রাস্তা বেরিয়ে এই পুকুরের দু' পাশ দিয়ে চলে গেছে। একটা রাস্তা পাহাড়ের গায়ের কয়েকটা কফিখেত পেরিয়ে সোজা চলে গেছে হোগারখান পাহাড়ে; আর একটা রাস্তা পুকুর পেরিয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাইল এগোনার পর একটা ক্যানালে গিয়ে শেষ হয়েছে। ক্যানেলটা গিয়ে মিশেছে একটা বেশ বড়সড়ো হ্রদে। হ্রদটার নাম হলো মাদ্দাক ট্যাংক। এই মাদ্দাক ট্যাংক একটা এমন উপত্যকার মধ্যে অবস্থিত যার চারদিকে ঘিরে রয়েছে উঁচু পাহাড় আর টিলার সারি।
কেনেথ এন্ডারসন (১৯১০ - ১৯৭৪) একজন প্রখ্যাত ব্রিটিশ শিকারি ও লেখক। তিনি দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন বনে দীর্ঘকাল ধরে বহু মানুষখেকো বাঘ ও চিতা শিকার করে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে রয়েছেন। দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন বনে দীর্ঘকাল শিকারের অভিজ্ঞতার আলোকে এন্ডারসন শিকার ও এডভেঞ্চার বিষয়ক বহু গ্রন্থও লিখেছেন।