জুল ভের্ন যে অনেকগুলো চমৎকার ছোটোগল্প লিখেছিলেন, তাঁর নামজাদা বইগুলোর পাশে তা আমাদের খেয়ালই থাকে না। এই বই জুল ভের্ন-এর গল্পলেখার নৈপুণ্যের সঙ্গে আমাদের নতুন ক'রে পরিচয় করিয়ে দেবে। এই অনুবাদগুলো বিভিন্ন সময়ে ‘মৌচাক, ‘শুকতারা’ও ‘আশ্চর্য-তে বেরিয়েছিলো। গল্পগুলো পড়তে গিয়ে প্রথমেই চোখে পড়বে তাদের বিষয়গত ও রচনাগত বৈচিত্র্য। কোনো গল্প ব্যঙ্গবিদ্রূপে ভরা, কোনোটা রগরগে ও রুদ্ধশ্বাস, কোনোটা ভয়ধরানো, রোমাঞ্চকর। কখনও মনে পড়বে এডগার অ্যালান পো- কে, কখনো-বা এ. টে. আ. হোফমানকে—অথচ দেখা যাবে এদের মধ্যে জুল ভেন-এর নিজের ব্যক্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্যও সুপরিস্ফুট। বিশেষত গথিক গল্প-উপন্যাসে তাঁর যে অপরিসীম আগ্রহ ও নৈপুণ্য ছিলো, তারও পরিচয় দেবার জন্য এই বইয়ের প্রয়োজন ছিলো। একসময় গথিক গল্প-উপন্যাসের দারুণ চাহিদা ছিলো ইওরোপে। রিফর্মেশনের সময় থেকে এই সেদিনও, উনিশ শতাব্দীর প্রযুক্তি ও কারিগরি বিদ্যার স্বর্ণযুগের সময় পর্যন্ত। ঐতিহাসিক কতগুলো কারণ ছিলো নিশ্চয়ই- —যার জন্য এমনকী এই সেদিনও ‘ড্রাকুলা'র মতো বই লেখা হ’তো ও জনপ্রিয় হ’তো—যাকে ঠাট্টা ক'রে এই-তো ক-বছর আগে রোমান পোলানস্কি তাঁর ‘ফিয়ারলেস ভ্যাম্পায়ার কিলার্স'-এর মতো মজার ছবিটি তুলেছিলেন। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে গথিকের দুটি প্রধান সহযোগী ধারা ছিলো : একদিকে ভ্যামপায়ার, অয়্যারয়ুলফ্, ডোপ্পেলগাঙ্গের, আর অন্যদিকে মেরি শেলি-র ‘ফ্রাঙ্কেনষ্টাইন'—রোমান্টিকতার এক ইশতেহার বা দলিল ব’লে যাকে আজ আমরা ধরছি। ভ্যামপায়ার গল্পগুলো আসলে কী? শোষিত বঞ্চিত সাধারণ মানুষের ঘোরানো ও লুকোনো প্রতিবাদ : ধনী কাউন্টের অকথ্য অত্যাচার—তার রক্তশোষণ, নারী ধর্ষণ, সাধারণ লোকের সম্পত্তিহরণ—আর তার হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য কাঠের ক্রুশ, বাইবেল আর রসুনের কোয়া—অর্থাৎ খ্রিষ্টধর্ম আর কুসংস্কার। যখন রুখে দাঁড়াবার বা প্রতিবাদ করারও ক্ষমতা নেই, তখন ধর্ম আর কুসংস্কারই হয়তো লোকের রক্ষাকবচ, অভয়পত্র । কিন্তু, কারিগরি বিদ্যা আর বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে-সঙ্গে অবস্থার বদল হতে লাগলো । পুরোনো কাউন্টের বদলে এলো উদ্ভাবক ও প্রযুক্তিবিদ—যাদের আবিষ্কার আস্ত জগৎটারই ভোল পালটে দিচ্ছে। তারা ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী, কারণ তারা আস্ত সৃষ্টিটাতেই ওলোটপালোট ঘটাচ্ছে—আর ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী ব'লেই শয়তানের সহযোগী, শয়তানের সহচর। কিন্তু যদি তাদের নিজের সৃষ্টিই একদিন তাদের বিরুদ্ধে যায় ? এখানেও পুরোনো বিশ্বাস, সংস্কার বা ধর্মের ভূমিকা নেহাৎ নগণ্য নয় ৷ আমরা জানি, জুল ভের্ন বিজ্ঞানভিত্তিক গল্পের জনক—কিন্তু তিনি যে সায়ান্স ফিকশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গল্পের এই ধারাগুলো নিয়েও ভেবেছিলেন, তারই অবিস্মরণীয় নজির এই Maitre Zacharius ou l' horloger qui a perdu son ame, অর্থাৎ “মাস্টার জাকারিয়ুস” আর Fritt-Flac “টুপটাপ”। নানা ধরনের আচ্ছন্ন চিন্তা মিলেছে এখানে, অথচ গল্পের গতি দুর্বার, কল্পনার ক্ষিপ্রতা দূরপ্রসারী। আর তারই পাশাপাশি আছে মানুষের আকাশবিজয়ের কাহিনী, খ্যাপা বিজ্ঞানমুগ্ধ মানুষ, আর উপনিবেশ প্রথার বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র বিদ্রূপে ভরা কশাঘাত—“শূন্য পুরাণ” আর “জিল ব্রলটার” যার উদাহরণ। গল্পগুলো যে শেষ হবার পরেও রেশ রেখে যায়, ভাবায়, তাই জুল ভের্ন-এর সাফল্যের নিদর্শন ।
Jules Gabriel Verne (8 February 1828 – 24 March 1905) was a French novelist, poet, and playwright best known for his adventure novels and his profound influence on the literary genre of science fiction. Verne was born to bourgeois parents in the seaport of Nantes, where he was trained to follow in his father's footsteps as a lawyer, but quit the profession early in life to write for magazines and the stage. His collaboration with the publisher Pierre-Jules Hetzel led to the creation of the Voyages extraordinaires, a widely popular series of scrupulously researched adventure novels including Journey to the Center of the Earth (1864), Twenty Thousand Leagues Under the Sea (1870), and Around the World in Eighty Days (1873).