চারজনের চিহ্ন ছিলো শার্লক হোমস সিরিজের দ্বিতীয় বই। বেরিয়েছিলো ১৮৯০তে; বীটলস ক্রিসমাস অ্যানুয়েল বার্ষিকীতে ১৮৮৭তে বেরিয়েছিলো লালে- ছোপানো ছবি (প্রথম বই), আর এই বই ছিলো তার চাইতে ঢের ভালো। হোমসকে নিয়ে একটা পুরোমাপের উপন্যাস লিখতে গিয়ে ডয়েল কোনোদিনই তেমন সুখী হননি, যতটা তাঁর খুশি লাগতো ছোটোগল্পে। বাস্কারভিলের হাউণ্ড বাদ দিলে, বাকি সবগুলোতেই ছিলো দূর-দূর দেশে ফাঁদা গৌণ কতগুলো আখ্যান, যাদের মধ্যে ঠিক বেকার স্ট্রিট বা নরডের সামগ্রিক বাস্তবতা (বা বস্তুনিষ্ঠা) ছিলো না। লালে- ছোপানো ছবি থেকে মরমন নিপীড়নের গোটা গৌণ আখ্যানটাই বার ক'রে নেয়া সম্ভব; চারজনের চিহ্ন বইয়ের গৌণ আখ্যানটিকে খুব সহজেই চন্দ্রকান্তমণি (উইলকি কলিনস; ১৮৬৮)-র সঙ্গে মিলিয়ে নেয়া যায় : ভারত থেকে চুরি-ক'রে-আনা হিরে-জহরৎ, শূন্য একটি সিন্দুক আবিষ্কার, ছাতের ওপরকার চোর-দরজা দিয়ে আততায়ীর আবির্ভাব, এমনকী লোয়ার টেমস স্ট্রিট আর টাওয়ার হোয়ার্ফ দিয়ে পলায়ন। অথচ তবু... অথচ তবু... হোমসকে নিয়ে লেখা সব গল্পের মধ্যে চারজনের চিহ্ন তবু কেন আজ প্রায় ষাট বছর পরেও আমার স্মৃতিতে এমন নাছোড় গাঁথা হ'য়ে আছে?
কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম সিলেটে, ২৫ এপ্রিল ১৯৩৮। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যানাডার টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয় ও পোল্যান্ডের ভাশভি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য, ভারতীয় নন্দনতত্ত্ব, ললিতকলার ইতিহাস- নানা বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর এখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক- তাঁর প্রথম অধ্যাপনার কাজ ছিল মায়ানমারের ইয়াঙ্গনে, তখন অবশ্য তাকে ব্রহ্মদেশ বলেই আমরা জানতাম। শিশুসাহিত্যে তাঁর বিশেষ অবদানের জন্য মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় খগেন্দ্রনাথ মিত্র স্মৃতিপুরস্কার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর পুরস্কার পেযেছেন, আর অনুবাদে তাঁর কৃতিত্বের জন্য ভারতীয় সাহিত্য একাদেমি তাঁকে অনুবাদ পুরস্কার-এ ভূষিত করেছিল। মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতার অনুবাদ সবসময়েই এই কারণে উল্লেখযোগ্য যে, তার যতোটা বিশ্বস্ত হবার চেষ্টা, ততোটাই কবিতা হবারও-যাতে কবিতা হিসেবেই তারা নিজের পায়ে বাংলা ভাষায় দাঁড়ায়। তাঁর একেবারে হালের অনুবাদ গুলোর মধ্যে মাঝ রাস্তায়: কার্লোস ড্রুমন্ড ডি অন্ডরাডির কবিতা (২০০১) ও ভিসওয়াভা শিম্বোর্সকা-র কবিতা (২০০২) সেইজন্যই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।