চৈতন্যদেবের গৌড় তথা রামকেলি পরিদর্শন প্রসঙ্গে ‘গৌড়ে ব্রাহ্মণরাজা হব হেন আছে’ অথবা ‘নবদ্বীপে ব্রাহ্মণ অবশ্য হব রাজা। গন্ধর্বে লিখন আছে ধৰ্ম্ময় প্রজা' (জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল) বা অনুরূপ বৈষ্ণবশাস্ত্রে আলোচিত এহেন বক্তব্যে কিছু অনুমানের সুযোগ আছে। মধুপর্ণী, মালদা জেলা সংখ্যাতে (১৯৮৫) অধ্যাপক অচিন্ত্য বিশ্বাসের লেখা মালদহে শ্রীচৈতন্য' নামে এই অনুমানের ভিত্তিতে লেখা একটি ছোট্ট প্রবন্ধ আছে। চৈতন্যকে কেন্দ্র করে রাজা হোসেনশাহর হিন্দু অমাত্যদের মধ্যে কি কোনো উচ্চাশা অঙ্কুরিত হয়েছিল? প্রবন্ধটি কুড়ি বছর আগে আমাকে ঈষৎ আলোড়িত করেছিল। সত্যিইতো, চৈতন্য উড়িষ্যা থেকে ফিরে সোজা শান্তিপুরে গিয়ে অদ্বৈতের সঙ্গে কী আলোচনা করলেন? সেখান থেকে কুলিয়া গ্রামে বিদ্যাবাচস্পতির বাড়িতে অজ্ঞাতবাসই বা করতে গেলেন কেন? সেখান থেকে রামকেলিতেই বা হঠাৎ এলেন কেন? রূপ, সনাতনই বা ছদ্মবেশ ধারণ করে মাঝরাত্তিরে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন কেন? এ ধরনের বহুপ্রশ্নের কোনো পরিষ্কার উত্তর নেই। তখন ভেবেছিলাম এই বিষয় নিয়ে একটি গল্প লিখব। কুড়ি বছর পরে লিখতে শুরু করে বুঝলাম, গল্প নয়, বিষয়টি একটি উপন্যাসেরই অবয়ব দাবি করে। ইতিহাসের একটি বিশেষ সময় যেহেতু এই উপন্যাসের উপজীব্য, সামান্য দু একটা সন তারিখ খেয়াল রাখলে পাঠকের সুবিধা হবে। চৈতন্যদেবের জন্ম—১৪৮৬ খৃঃ, হোসেন শাহর সিংহাসন দখল—১৪৯৩–১৪৯৪, প্রতাপরুদ্রের সিংহাসন আরোহন–১৪৯৭, চৈতন্যদেবের সন্ন্যাস গ্রহণ—১৫১০, ঐ বছরই নীলাচলে যাওয়া, ১৫১৪ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দের জুনের মধ্যে কোনো এক সময়ে রামকেলি গমন এবং এর কয়েকদিন পরে শান্তিপুর হয়ে তিনি পুনরায় উড়িষ্যা ফিরে যান। এর মাস দুয়েকের মধ্যে হোসেন শাহ উড়িষ্যা আক্রমণ করেন।