পুত্রস্নেহে লোকে কী না করে। বাঘা বাঘা নেতারা নিজেদের সুনাম পর্যন্ত ভাসিয়ে দেন। খুচরো গোয়েন্দা গল্প বানানোর অপচেষ্টা তো সামান্য ব্যাপার। তবে, শিশুতোষণের সে চেষ্টা ছিল মুখে মুখে। ১৯৯০ সালে ‘খেলা'-র সহকর্মীদের চাপ : শারদ সংখ্যায় 'উপন্যাস' দিতে হবে। খবরের কাগজে কাজ করি, চাপেই নড়ি, চাপেই চড়ি। গোয়েন্দা কাহিনীর কাঠামোয় হল ক্রিকেট নিয়ে লেখা। পরপর তিন বছর কাহিনীর ফাঁকে ফাঁকে ব্যাটিং, স্পিন বোলিং, ফাস্ট বোলিং। ‘আরও জোরে' শেষ করার সময় দেখলাম ক্রিকেটপ্রেমিক সিদ্ধার্থ সেন নিজের ভালবাসার জায়গায় অন্ধকার ঘাঁটা পছন্দ করছেন না। বলছেন, ক্রিকেট বা খেলার কেস আর নয়। বলা বাহুল্য, গোয়েন্দার এই সিদ্ধান্তে আমার পূর্ণ সমর্থন ছিল। কিন্তু ঝামেলা চুকল না। এবার ‘আজকাল’ শারদ সংখ্যার সহকারি সম্পাদকের দাবি, সিদ্ধার্থ সেন খেলার বাইরের কেসে আসুন। এলেন, সংক্ষেপে। প্রকাশিত সব কাহিনীই লেখা শারদ সংখ্যার চাপে, তিন থেকে পাঁচ দিনে, খবরের কাগজের নিতান্ত জরুরি ফোনের ঝনঝন ছাড়া অন্য কিছুতে কান না-দিয়ে। এই কয়েকটা দিন দারুণ কাটে কিন্তু। নিজেকে লেখক-লেখক মনে হয়। সিদ্ধার্থ সেন, তাঁর ভাগ্নী বিনি, অ্যাসিস্ট্যান্ট কল্লোল ও হোয়াটনট গজেন—এই চারজনের সঙ্গে থাকি কয়েকটা দিন। বছরে একবারই দেখা হয়, তবুও কিংবা সেজন্যই ভালবাসায় মাখামাখি চরিত্রগুলো আরও কাছের হয়ে চলে যায়। বলে যায়, আবার আসব, আসছে বছর ! কাছাকাছি থাকা তিন সাহিত্যিক মাঝেমাঝেই বলেছেন, বই হয়ে আসুন সিদ্ধার্থ সেন। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত সেনগুপ্তর ইচ্ছের সঙ্গে যোগ দিলেন সুধাংশুশেখর দে। এদিকে, লন্ডন থেকে ‘আজকাল'-এর প্রতিনিধি বাদশা হক জানালেন, ওখানকার বাংলাদেশিদের পত্রিকা ‘নতুন দিন' ধারাবাহিক ছাপতে চায় ‘স্যারের সঙ্গে লন্ডনে’। পাউন্ডে যা সম্মানমূল্য জানালেন, পাঁচটা কেস করেও এত টাকা পান না সিদ্ধার্থ সেন। এই দুর্বল মুহূর্তেই বই করার সিদ্ধান্ত বছরে একটা কেস করলে তো গোয়েন্দার চলে না, বিশেষত সিদ্ধার্থ সেনের, যাঁর আয়ের অন্য কোনও পথ নেই । পাঠক-পাঠিকাদের আশ্বস্ত করার জন্য বলা যায়, যথেষ্ট পরিমাণে কেস ধরেন ও মেটান সিদ্ধার্থ সেন। আমরা প্রচার করি বছরে মাত্র একটি।