‘মরণ বলে আমি তোমার জীবন তরী বাই'—এ-গান আমার ভালো লাগার গান। কবিতার সঙ্গে আমার প্রতিদিন ঘরে-বাইরে সর্বত্র সম্পর্ক। কবির সঙ্গে আর কবিতার সঙ্গে কথোপকথনে আমি আনন্দ পাই। সুখী হয়ে উঠি। আমার পিপাসা বেড়ে যায়। জীবনে এইসব তৃষ্ণা নিয়ে আমার বেঁচে থাকা। তবে তৃষ্ণার যে কোনো শেষ নেই ! তৃষ্ণার্ত চোখে শকুন্তলার তৃষ্ণার কাহিনী শুনছিলো শ্যামলকান্তি। ওঁদের কাগজের অফিসে সহকর্মী শকুন্তলা দত্ত। দপ্তরে আনকোরা শ্যামলকান্তি। বাধো বাধো ভাব কাটেনি। শকুন্তলা দত্ত সাঁঝসকাল ম্যাগাজিনের সাহিত্যের পাতার একটা অংশ দেখে। গল্প আর কবিতা। বইয়ের সমালোচনা, নতুন বইয়ের খবর, সাহিত্যের সংবাদ বা কবিতাপাঠের আসর সংক্রান্ত খবর ইত্যাদি বিষয়গুলি দেখেন অধ্যাপক সজল চক্রবর্তী। সজলবাবু রোজ আসেন না। এখানে পার্টটাইম কাজ করেন। সপ্তাহে তিন দিন। সোম বুধ শুক্র। শকুন্তলাকে রোজই আসতে হয়। সজলবাবু ভারিক্কী চালের মানুষ। অধ্যাপকসুলভ গাম্ভীর্য নিয়ে আসেন। কখনো কখনো তাঁর দু’একজন ছাত্রছাত্রীও সঙ্গে আসে। ওরা ওদের স্যারকে কিছুটা সাহায্য করে দিয়ে যায়। প্রথম আলাপে অধ্যাপক মাস্টারমশাইসুলভ আচরণ বজায় রেখে কথা বলেছিলেন। বাড়ি, পড়াশোনা, কোন্ কলেজ, অনার্সের বিষয় ইত্যাদি জিজ্ঞেস করেছিলেন। শ্যামলকান্তি সেভাবেই উত্তর দিয়েছে। ব্যস! ওই পর্যন্তই। সজল চক্রবর্তী সম্পর্কে শ্যামলকান্তির তেমন কোন আগ্রহ তৈরি হয়নি। তবে অধ্যাপকের একটি ছাত্রকে শ্যামলের বেশ পছন্দ হয়েছিল। স্বভাবলাজুক অন্তর্মুখী শ্যামলকান্তি যেচে তার সঙ্গে কথা বলেনি। তবে ছাত্রটি সজলবাবুর কাছে এলে সে তাকে খুব লক্ষ্য করে।
ঘনশ্যাম চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৭ সালের ১লা অক্টোবর। কলকাতায় জন্ম হলেও শৈশব থেকে কিশােরকাল কেটেছে হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়ায়। লেখকের পরিবারের আদি নিবাস অখণ্ড বাংলার । ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের রাজানগর গ্রামে। অবিন্যস্ত জীবনে ঘনশ্যাম চৌধুরীর পড়াশােনা গুপ্তিপাড়ার মীরডাঙা প্রাইমারি স্কুল, গুপ্তিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, পরে উত্তর কলকাতার সারদাচরণ এরিয়ান ইনস্টিটিউশন এবং তারও পরে বর্ধমান জেলার পূর্ব সাতগাছিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। পারিবারিক কারণেই তার পড়াশােনার মাঝে মাঝে ছেদ ঘটে ও স্কুল বদল করতে হয়। পড়াশােনা চলাকালীনই চলতে থাকে জীবনসংগ্রাম। কলকাতায় বিদ্যাসাগর সান্ধ্য কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পড়াশােনা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রজীবন থেকেই গল্প-উপন্যাস লেখার পাশাপাশি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনাও করেছেন। এম এ পাশ করার পর লেখক একটি বিশিষ্ট বাংলা দৈনিকে সাংবাদিকতার কাজে যুক্ত হন। তখন থেকেই তার জীবনপ্রবাহ অন্যদিকে মােড় নেয়। এরপর শুধুই বড়দের নয়, শিশু-কিশােরদের জন্যও লিখতে শুরু করেন ঘনশ্যাম চৌধুরী। গােয়েন্দা রহস্য কাহিনি ছাড়াও তিনি কল্পবিজ্ঞানের গল্প, রূপকথার গল্প লিখে সমসময়ের সাহিত্যে অন্য স্বাদ নিয়ে আসতে পেরেছেন। তাঁর রাজনৈতিক উপন্যাস ‘অবগাহন’ মল্লভূম পুরস্কার পায়। পুণ্যিবালা গল্প সংকলনের ‘পুণ্যিবালা’ গল্প অবলম্বনে বেতার নাটক। আকাশবাণীর সর্বভারতীয় প্রথম পুরস্কার পায় ২০০৪ সালে। বাংলাদেশের ঢাকা থেকেও তার বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখা ছােটদের বই রূপকথার ঝাপি, সােনারঙের দিন, আনন্দ রূপকথা। অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কয়লাখনি অঞ্চলের জীবন নিয়ে তার দু’টি গল্প সংকলনে ব্রাত্য মানুষজনের। প্রতি লেখকের অকৃত্রিম দরদ উপলব্ধি করা যায়।