নেই চিরতুষারবৃত গিরিরাজ হিমালয়, নেই সুইজারল্যান্ডের মতাে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা নায়েগ্রার মতাে জলপ্রপাত ; নেই চীনের প্রাচীরের মতাে কোনাে কিছু। না, আমাদের দেশের মতাে লালকেল্লা-কুতুব মিনার-তাজমহল খাজুরাহাে-কোনার্ক বা মীনাক্ষী-রামেশ্বরমের মতাে কোনাে ঐতিহাসিক মন্দির-মসজিদ স্থাপত্যও নেই। জার বা চতুর্দশ লুই-এর অপূর্ব প্রাসাদের সমতুল্য কোনাে সম্রাটের প্রাসাদও এখানে নেই। নেই বাঘ-সিংহ হাতি-গণ্ডার ভর্তি নিবিড় অরণ্য। জেরুজালেম মক্কা-মদিনা বা কেদার-বদ্রী-বুদ্ধ গয়ার মতাে পবিত্র তীর্থস্থানও ওখানে নেই। নেই আরাে আরাে অনেক কিছু। তবু আজ সারা পৃথিবীর মানুষ সিঙ্গাপুর দেখার জন্য পাগল। সিঙ্গাপুর নেহাতই ছােট্ট একটা দ্বীপ। লম্বায় মাত্র ৪২ কিলােমিটার ; অর্থাৎ কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ার থেকে ব্যান্ডেল। চওড়ায় ২৩ কিলােমিটার ; অর্থাৎ টালিগঞ্জ মেট্রো রেলস্টেশন থেকে দমদম বিমানবন্দর। জনসংখ্যা ৩২-৩৩ লাখ। জনসংখ্যার শতকরা ৭৬ জন চীনা, ১৫ জন মালয়ের ও ৬ জন ভারতীয় (পাকিস্তানি-বাংলাদেশিশ্রীলঙ্কাবাসী সহ)। | এখানে না আছে প্রাকৃতিক সম্পদ, না আছে ইস্পাত কারখানা বা সােনার খনি। যে দেশের শতকরা ৯০ ভাগের বেশি খাদ্যশস্য ও তরিতরকারী বিদেশ থেকে আমদানী হয়, পানীয় জল আসে মালেশিয়া থেকে, সে দেশের জন প্রতি গড় জাতীয় আয় প্রায় কুড়ি হাজার ডলারের বেশি। অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় চার লাখ টাকারও বেশি। আগামী একশাে বছর পরও ভারতবর্ষ অত উন্নত হবে কিনা সন্দেহ। | ভাবতে পারেন ওখানে প্রতি তিন জনের জন্য দুটি করে টেলিফোন ও লােক্যাল কল-এর জন্য কোনাে পয়সা লাগে না। ওরা হিসেব করে
বাংলা সাহিত্যের এই খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক নিমাই ভট্টাচার্য ১৯৩১ সালের ১০ এপ্রিল কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আদি নিবাস তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার (বর্তমান জেলা) শালিখা থানার অন্তর্গত শরশুনা গ্রামে। তাঁর পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। নিমাই ভট্টাচার্য বাংলাদেশের বগুড়া জেলার কালীতলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর কন্যা দীপ্তি ভট্টাচার্যকে বিবাহ করেন। কলকাতার টালিগঞ্জের শাশমল রোডের বাসায় বসবাস করতেন তিনি। শিক্ষাজীবন: নির্মম অদৃষ্ট সাড়ে তিন বছর বয়সে তিনি মাতৃহীন হন। পিতার সীমিত আয়ে অকল্পনীয় দুঃখ কষ্ট অভাব অভিযোগের মধ্যে ভর্তি হলেন কলকাতা কর্পোরেশন ফ্রি স্কুলে। কলকাতা রিপন স্কুলে কিছুদিন তিনি পড়াশুনা করার পর যশোরে ফিরে আসেন। ১৯৪১ সালে যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনে চতুর্থ শেণীতে ভর্তি হন এবং নবম শ্রেণী পর্যন্ত সেখানে পড়াশুনা করেন। তাঁর পিতা সুরেন্দ্রনাথ বাবুও এক সময় সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ও পরবর্তীতে শিক্ষক ছিলেন। দেশ বিভাগের পর নিমাই ভট্টাচার্য পিতার সঙ্গে কলকাতায় চলে যান এবং পুনরায় কলকাতায় রিপন স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকেই তিনি ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতা রিপন কলেজে ভর্তি হন এবং রিপন কলেজ থেকে আই. এ পাশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫২ সালে তিনি বি. এ পাশ করেন। সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। কিন্তু প্রথম অবস্থায় সেখানেও তিনি ভাগ্যের বিড়ম্বনার স্বীকার হন। নিমাই ভট্টাচার্যের সাহিত্য চিন্তা তাঁর জীবনচর্চার একান্ত অনুগামী হয়ে দেখা দিয়েছে। ১৯৬৩ সালে তাঁর লেখা একটি উপন্যাস কলকাতার সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং সাহিত্যামোদীদের নিকট ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। পরবর্তীকালে ‘রাজধানী নৈপথ্য’ রিপোর্টার. ভি. আই. পি এবং পার্লামেন্ট স্টীট নামক চারখানি উপন্যাস ঐ একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিমাই ভট্টাচার্য পূর্ণোদ্যমে আরো আরো উপন্যাস লেখা শুরু করেন। ‘মেমসাহেব’, ‘ডিপেস্নাম্যাট’, ‘মিনিবাস’, ‘মাতাল’, ‘ইনকিলাব’, ‘ব্যাচেলার’, ‘ইমনক্যলাণ’, ‘ডিফেন্স’, ‘কলোনী’, ‘প্রবেশ নিষেধ’, ‘কেরানী’, ‘ভায়া ডালহৌসী’, ‘হকার্স কর্নার’, ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘নাচনী’, ‘অ্যাংলো ইন্ডিয়ান’, ‘ডার্লিং’, ‘ম্যাডাম’, ‘ওয়ান আপ-টু-ডাউন’, ‘গোধুলিয়া’, ‘প্রিয়বরেষু’, ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’, ‘মোগল সরাই জংশন’, ‘ইওর অনার’, ‘ককটেল’, ‘অনুরোধের আসর’, ‘যৌবন নিকুঞ্জে’, ‘শেষ পরানির কড়ি’, ‘হরেকৃষ্ণ জুয়েলার্স’, ‘পথের শেষে’ প্রভৃতি প্রকাশিত উপন্যাসগুলি উল্লেখযোগ্য। নিমাই ভট্টাচার্যের লেখা উপন্যাসগুলোতে বিষয়গত বৈচিত্র্যতার ছাপ প্রস্ফূটিত হয়ে উঠেছে।