ভূমিকা মণিপুরে আমি বহুবার গেছি, কাজে এবং বেড়াতে। মণিপুরের পটভূমিতে আমার কিছু গল্প এবং একটিমাত্র উপন্যাস আছে। সেই উপন্যাসের নাম, বাবলি । এটি দ্বিতীয় উপন্যাস। অসুস্থতার মধ্যে এবং শয্যাশায়ী অবস্থাতেই ঋজুদার এই কাহিনী বড়ই কষ্টে এবং ডাক্তারদের নিদ্ধে না শুনেই লিখলাম, আমার অগণ্য পাঠক-পাঠিকাদের এই পুজোতে আনন্দ দেবার জন্যে। কোনো পুজো সংখ্যাতেই আমি ব্যক্তিগত কারণে উপন্যাস লিখছিনা, গত তিনবছর হলো। তাই পাঠক-পাঠিকারা চান যে, তাঁদের জন্যে পুজোতে একটি উপন্যাস অন্তত লিখি। তাঁদের ন্যায্য দাবী মেটাতেই এই কষ্টকর প্রয়াস। নি। এখনও অসুস্থই আছি। অফিসে যোগ দেওয়ার দিন আজও স্থিরীকৃত হয় মানুষের মস্তিষ্ক যেহেতু ব্লাস্ট-ফারনেসেরই মতন, একবার তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিলে আমৃত্যু তা কাজ করে যায়ই। তাই শরীরের বিশ্রামের কথা ডাক্তারেরা নিশ্চিত করতে পারলেও মনুষ্যপদবাচ্য মানুষের মস্তিস্কের কোনো বিশ্রাম তাঁরা নিশ্চিত করতে পারেন না। বিশ্রাম হয়ত নেওয়া যাবে শুধু সেদিনই, যেদিন চিতার আগুনে সমস্ত শরীরটাই ছাই হয়ে যাবে। এটি আমার তৃতীয় গোয়েন্দা-উপন্যাস। এর আগে ‘অ্যালবিনো’ এবং তারও আগে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ থেকে ফিরে এসেই, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে হাওয়াই-এর পটভূমিতে “ওয়াইকিকি” লিখেছিলাম। শরীর সুস্থ থাকলে হয়ত আর একটু মনোযোগ দেবার চেষ্টা করা যেত, এই উপন্যাসের প্রতি। পাঠক-পাঠিকারা নিজগুণে দোষত্রুটি মার্জনা করবেন। এই বই ছাপা আদৌ হত না, যদিনা আমার অশেষ গুণগ্রাহী রূপা দত্ত ও ডঃ কৌশিক লাহিড়ীর সাহায্য পেতাম। প্রকাশক, দে'জ পাবলিশিং আমার শত দাবী ও “কুখ্যাত মেজাজ” সত্ত্বেও সবকিছু সহ্য করে নিয়ে সমাদরে যে এই বই ছেপেছেন যে, সে জন্যে ধন্যবাদ তাঁদেরও অবশ্যই প্ৰাপ্য । শ্রী সুধীর মৈত্র অত্যন্ত সম্মানিত ও অগ্রজ শিল্পী। বিকাশ ভট্টাচার্য তাঁর ছাত্র ছিলেন। সুধীর বাবু যে এবারেও আমার অনুরোধ রক্ষা করে প্রচ্ছদ এবং অলংকরণ করে দিয়েছেন “কাঙ্গপোকপি”র, সে জন্যে তাঁর কাছে এবং আমার প্রকাশকের সঙ্গে আমিও অশেষ কৃতজ্ঞ।
বুদ্ধদেব গুহ একজন ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক ও সংগীতশিল্পী। তিনি ১৯৩৬ সালের ২৯ জুন কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। বন, অরণ্য ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখার মাধ্যমে পাঠকহৃদয় জয় করে নেওয়া এই লেখকের জীবন অভিজ্ঞতা ও বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে তিনি পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘জঙ্গলমহল’। রচনাশৈলীর অনন্যতা ও স্বাতন্ত্র্য তাকে বাঙালি পাঠকের অন্যতম প্রিয় লেখকে পরিণত করেছে। বুদ্ধদেব গুহ কবিতা, ছোটগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন, যা তাকে খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে গিয়েছে। তাঁর সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্র ঋজুদা যেন তাঁর মতোই পরিব্রাজক। সে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় তার সঙ্গী রুদ্রকে নিয়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে আসা এই লেখক অরণ্যকে যেমন তাঁর লেখার এক মূল আধেয় হিসেবে ধরে নিয়েছেন, তেমনই তাঁর লেখাগুলোর পটভূমিও ছিল পূর্ব বাংলার গহীন অরণ্য। এর সাথে তিনি সমাজের উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনযাপন তাঁর লেখনীতে তুলে ধরেছেন, যা তাকে খুব সহজেই খ্যাতির পাত্রে পরিণত করে। বুদ্ধদেব গুহ প্রেমের উপন্যাস রচনা করেছেন বেশ কয়েকটি। এর মাঝে ‘হলুদ বসন্ত’ অন্যতম। বাংলা কথাসাহিত্যে এমন রোমান্টিসিজমের সংযোজন খুব কম লেখকই করতে পেরেছেন। পাঠকনন্দিত বুদ্ধদেব গুহ এর উপন্যাস সমগ্র হলো ‘মাধুকরী’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’, ‘নগ্ন নির্জন’, ‘অববাহিকা’, ‘পরদেশিয়া’, ‘সবিনয় নিবেদন (পত্রোপন্যাস)’, ‘আলোকঝারি’ ইত্যাদি। ছোটদের জন্য লিখেছেন ‘ঋজুদা’ সিরিজ। তাঁর রচিত ‘মাধুকরী’ উপন্যাস একইসাথে বিতর্কিত ও তুমুল জনপ্রিয়। বুদ্ধদেব গুহ এর বই সমগ্র শুধু উপন্যাস হিসেবে নয়, নগর ও অরণ্যের স্তুতি হিসেবে পাঠকের কাছে ভালোবাসার স্থান পেয়েছে। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট এবং একজন নামকরা সঙ্গীতশিল্পীও বটে। বুদ্ধদেব গুহ এর বই সমূহ থেকে নির্মিত হয়েছে একাধিক টিভি অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র। ১৯৭৭ সালে তিনি আনন্দ পুরস্কার পান। তাঁর রচনার জন্য তিনি বাংলা কথাসাহিত্যে এক মাইলফলক তৈরি করেছেন।