“এই শহরে কোনো চোর নেই ও অন্যান্য গল্প” কিছু কথা: নিঃসঙ্গতার একশো বছর লেখার অব্যবহিত আগে ও লিখেছিলেন। সবই ছিলো অন্যরকম, প্ৰথাগত গল্প বানাবার চবিতচবাণ নয়, একই জিনিশ নিয়ে জাবর কাটাও নয় ; বাস্তবের মধ্যেই কুহক কোথায় লুকিয়ে থাকে-বেলার ভঙ্গিতে বা কৌশলে, না কি বিষয়ের ঘেরাটোপে-সেটা আবিষ্কার করবারই চেষ্টা ছিলো। এইসব গল্পে। এখন এক জায়গায় এই এক ডজন গল্প (বেকার্স ডজন হিশেবে ফাউ রইলো ত্ৰয়োদশ গল্প, কোলোম্বিয়ারই কথাসাহিত্যিক এরনান্দো তেইয়েস [ ১৯০৮-১৯৬৬] রচিত একটি গল্প, এবং সেটা কেন এই বইতে ঢুকে পড়েছে; পর-পর গল্পগুলো পড়ে গেলেই বোঝা যাবে; অর্থাৎ একজনের গল্পে এক দন্তচিকিৎসক এবং অন্যজনের গল্পে একজন ক্ষৌরকার-দুজনেই যে বকী সংকটে পড়েছিলো, যখন দেশে তাণ্ডব চালাচ্ছিলো। সামরিক হনতা তাদের মধ্যে কোথাও কোনো উচ্চারিত—অথবা অনুচ্চারিত—সম্বন্ধ আছে নিশ্চয়ই।) এখানে জড়ো ক’রে দেয়া হ’লো ক্ষীরের স্বাদ যাতে ঘন দুধের সরে পাওয়া যায়, এই জন্যেই।
“এই শহরে কোনো চোর নেই ও অন্যান্য গল্প” এর সূচিপত্র: * নাবে * মাকোন্দায় বৃষ্টি-পড়া দেখতে-দেখতে ইসাবেলের স্বগতোক্তি * মঙ্গলবারের ফিয়েস্তা * এইরকমই এক দিনে * এই শহরে কোনো চোর নেই * বালতাসারের আশ্চর্য বিকেল * হারানো সময়ের সমুদ্র * জগতের সবচেয়ে-সুন্দর জলে-ডোবা পুরুষ * মৃত্যুই ধ্রুব প্ৰণয়ের পরপারে * অলৌকিকের ফেরিওলা, সাধু ব্লাকামান * “শুধু ফেনা, আর-কিছু না।”
কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম সিলেটে, ২৫ এপ্রিল ১৯৩৮। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যানাডার টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয় ও পোল্যান্ডের ভাশভি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য, ভারতীয় নন্দনতত্ত্ব, ললিতকলার ইতিহাস- নানা বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর এখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক- তাঁর প্রথম অধ্যাপনার কাজ ছিল মায়ানমারের ইয়াঙ্গনে, তখন অবশ্য তাকে ব্রহ্মদেশ বলেই আমরা জানতাম। শিশুসাহিত্যে তাঁর বিশেষ অবদানের জন্য মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় খগেন্দ্রনাথ মিত্র স্মৃতিপুরস্কার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর পুরস্কার পেযেছেন, আর অনুবাদে তাঁর কৃতিত্বের জন্য ভারতীয় সাহিত্য একাদেমি তাঁকে অনুবাদ পুরস্কার-এ ভূষিত করেছিল। মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতার অনুবাদ সবসময়েই এই কারণে উল্লেখযোগ্য যে, তার যতোটা বিশ্বস্ত হবার চেষ্টা, ততোটাই কবিতা হবারও-যাতে কবিতা হিসেবেই তারা নিজের পায়ে বাংলা ভাষায় দাঁড়ায়। তাঁর একেবারে হালের অনুবাদ গুলোর মধ্যে মাঝ রাস্তায়: কার্লোস ড্রুমন্ড ডি অন্ডরাডির কবিতা (২০০১) ও ভিসওয়াভা শিম্বোর্সকা-র কবিতা (২০০২) সেইজন্যই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।