প্রফেসর অমূল্যধন মুখোপাধ্যায়ের আধুনিক সাহিত্যজিজ্ঞাসা সম্পর্কে প্রফেসর শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত শ্রী অমূল্যধন মুখোপাধ্যায়ের 'আধুনিক সাহিত্যজিজ্ঞাসা বাংলায় সমালোচনাসাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজনা। শ্রীমান্ অমূল্যধনের আলোচনার বৈশিষ্ট্য চিন্তার স্বচ্ছতা ও ধারণার সুস্পষ্টতা। সাধারণতঃ আমাদের সাহিত্যভাবনার মধ্যে কিছু কিছু পরস্পরসামঞ্জস্যহীন চিন্তা শিথিল এলোমেলোভাবে জট পাকাইয়া থাকে। যে সমস্ত ধারণা আমরা প্রথাগত আলোচনা হইতে গ্রহণ করিয়া থাকি, তাহাদের তাৎপর্যপূর্ণভাবে উপলব্ধি করিবার উপযুক্ত মৌলিক চিন্তা আমাদের থাকে না। সেইজন্যে সাহিত্যসমালোচনায় এত অস্পষ্টতা ও দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাবের পরিচয় দেখা যায়। শ্ৰীমান্ অমূল্যধন এই দুর্বলতা হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত। তাহার প্রবন্ধে প্রাঞ্জলতার অভাব বা ভাবের ঘরে লুকোচুরি খেলিবার প্রবণতা কোথায়ও নাই। ...আধুনিক সাহিত্যের উপর লেখকের যে আলোচনা তাহা যুক্তিনিষ্ঠ ও সুচিন্তিত হইয়াও চূড়ান্ত সত্যনির্ণয়ে হয়ত অসমর্থ। অমূল্যধন আধুনিক সাহিত্যের সপক্ষে যাহা বলিয়াছেন তাহা আমাদের সকলেরই প্রণিধানযোগ্য। 'সাহিত্যে রূপক ও প্রতীক প্রবন্ধটি লেখকের স্বচ্ছ মনন ও সূক্ষ্ম ভেদ নির্ণয়ের শক্তির চমৎকার নিদর্শন। ..অমূল্যধনের সূক্ষ্ম সাহিত্যবিচার ও রসাস্বাদনের উৎকৃষ্টতম নিদর্শন তাহার 'সাম্প্রতিক শিশুকবিতা, ' 'ভক্তকবি রামপ্রসাদ', 'নাট্যকার গিরিশচন্দ্র', 'দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গান' ও 'গিরিশচন্দ্রের বিল্বমঙ্গল' - এই কয়েকটি প্রবন্ধ । ইহাদের মধ্যে মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গী পুরাতন বিষয় সম্বন্ধে নূতন কথা বলিবার শক্তি, নানামুখী পর্যবেক্ষণ ও যুক্তি ও অনুভূতির আলোকে স্থির-সিদ্ধান্ত নির্ণয় প্রভৃতি মহৎ গুণের সমাবেশ হইয়াছে। (১৯-৩-১৯৬৪)