"৬০০ অঙ্কের কুইজ ও অলিম্পিয়াড ১০০ প্রশ্ন" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বুনিয়াদি গণিত শিক্ষা, যার প্রয়ােজন সামাজিক দৈনন্দিনতায়, অথবা আরাে গভীরে গিয়ে দেখলে, গাণিতিক অবরােহী যুক্তিধারায় মননকে শানিয়ে নিয়ে যুক্তি নির্ভর মানুষ গঠনে আজকের সমাজে তা এক বিকৃত পরিণাম লাভ করেছে পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সূত্র ধরে। আর এখানেই রয়েছে গণিতভীতির মূল কারণ। এই দুর্ভাগ্যজনক বিচ্যুতির মুখােমুখি দাঁড়াতে হয় এই প্রজন্মের সব ছাত্র-ছাত্রীকেসমাজের চোখে যাদের মেধা ও মননশীলতার মাপকাঠির নিরিখ আজ এক অবাঞ্ছিত প্রশ্নের আকার নিয়েছে-‘অঙ্কে কত পেলে?' ভাবখানা এই যে, যেন অঙ্ক পরীক্ষায় ভালাে নম্বর পেলেই সে মেধাবী নতুবা নয়। কিভাবে এই নম্বর পাওয়া গেল, শিখে না মুখস্থ করে-নাকি ভাগ্যে ‘শিকেছেড়া' সাজেশন মিলে গিয়ে-এসব প্রশ্ন আজকের সমাজে আদৌ বিবেচ্য বলেই ঠাই পাচ্ছে না। এই ব্যবস্থার দুর্ভাগ্যজনক শিকার আজকের ছাত্র-ছাত্রীরা, নিজেদের অজান্তেই যারা জটিল থেকে জটিলতর ‘কষা-অঙ্ক জমানাের প্রতিযােগিতায় নেমে পড়েছে-যেন এই ইঁদুর দৌড়ের প্রথম সারিতে থাকাকেই ‘অঙ্ক শেখা বলে। গণিত গবেষণাগার, গণিত ক্লাব, গণিত কুইজ ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গণিত বিষয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরী করা যায়। সেই লক্ষ্যেই এই বইয়ের রচনা। কুইজ বা প্রহেলিকা জাতীয় বইয়ের ক্ষেত্রে একজন লেখকের ভুমিকা মূলত একজন সংগ্রাহকের মতাে। তাই চেষ্টা করা হয়েছে বইটিতে গণিতের প্রায় সকল শাখার বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে সাজানাের। এখানে এমনসব প্রশ্নউত্তর দেওয়া হয়েছে যেসব অঙ্ক যা গণিত পাঠ্যপুস্তকের চৌহদ্দীকে এড়িয়ে, বলতে গেলে কেবলমাত্র কাণ্ড জ্ঞানের উপরে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে শুধু সংখ্যা, যুক্তি আর চিন্তাকে নিয়ে। আশাকরি সকলের তা ভালাে লাগবে।
সৌমেন সাহা ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে এই জেলাতেই। খুলনার স্বনামধন্য সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও সরকারি সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি পি.সি. কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিজ্ঞান , প্রযুক্তি ও গণিতের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল শুরু থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই পাড়ি জমান সুদূর ইংল্যান্ডে। সেখানকার লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লন্ডন কলেজ অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড কম্পিউটিং বিভাগ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমাসহ বি.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন। সৌমেন সাহা নিয়মিত বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, বিশেষত বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, মাসিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত লেখার সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। তাঁর পেশাগত জীবনেও তিনি বিজ্ঞান গবেষণার সাথে জড়িত। খুলনার ঐতিহ্যবাহী প্রাণিক বিজ্ঞানাগার খুলনার কেন্দ্রীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। জাতীয় বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রকল্পের উদ্ভাবনের কারণে তিনি পুরস্কৃতও হয়েছেন। পাঠক সমাদৃত সৌমেন সাহা এর বই সমূহ হলো ‘প্রাচীন ভারতীয় গণিত ও জ্যোতির্বিদ’, ‘বৈদিক গণিতের পরিচয়’, ‘পাগল করা গণিত’, ‘যন্ত্ররা যেভাবে কাজ করে’, ‘বিজ্ঞানের জানা অজানা কথা’, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের সহজ পাঠ’, ‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে’ ইত্যাদি। তাঁর লেখার মূল বিষয়বস্তু হলো বিজ্ঞান, গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান। সাধারণ পাঠকদের কথা মাথায় রেখে রচিত সৌমেন সাহা এর বই সমগ্র খুব সহজ ও সাবলীলভাবে এই জটিল বিষয়গুলো উপস্থাপন করে। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিতে আত্মমগ্ন এই লেখক বর্তমানে ঢাকার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।