বাংলাদেশের শিল্পকলাজগতে সফিউদ্দীন আহমেদ বিস্ময়করভাবে উজ্জ্বল এক বা ব্যক্তিত্বের নাম। প্রতিনিয়ত নিজেকে অতিক্রম করে যাওয়ার নিরন্তর প্রয়াসই তাঁর শিল্পযাত্রার মূলকথা। নব্বই বছরের জীবনে দীর্ঘ সত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে একান্তভাবে শিল্পচর্চায় মগ্ন থেকে এবং প্রতি মুহূর্তে নিজের সৃষ্টিকর্মকে উন্নত করার প্রয়াসে নিয়োজিত থেকে তিনি স্থাপন করে গেছেন এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। পরিণত হয়েছেন এক অনন্য শিল্পসাধকে। এদেশের পথিকৃৎ শিল্পীদের অন্যতম তিনি; একই সঙ্গে বাংলাদেশের আধুনিক ছাপচিত্রেরও জনক। সর্বদা প্রচারবিমুখ, নিভৃতচারী এই শিল্পী কখনো ছোটেন নি অর্থ কিংবা খ্যাতির পেছনে। সদাই তিনি ব্রতী থেকেছেন চারুশিল্পের পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। প্রতিটি ছবি ছিল তাঁর কাছে একেকটি শিল্পকর্ম, দীর্ঘ সৃষ্টিপ্রক্রিয়ার অংশ। এর সঙ্গে জড়িত ছিল তাঁর গভীর চিন্তা, পরিকল্পনা, আবেগ, মমতা ও ভালোবাসা। সুতরাং ছবি তাঁর কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে নির্মিত পণ্যসামগ্রী বলে বিবেচিত হয় নি কখনো। এখানেই তাঁর স্বাতন্ত্র্য ও মহত্ত্ব। শিল্পচর্চা সবসময়ই ছিল তাঁর কাছে গভীর সাধনার বিষয়। রুচিশীল, সংগীতানুরাগী, সাহিত্যপিপাসু, বিজ্ঞানমনস্ক, মুক্তদৃষ্টির অধিকারী - এর কোনো বিশেষণই তাঁর ক্ষেত্রে অতিশয়োক্তি নয়। ছিলেন তিনি নিরহংকার এবং সহজাত বিনয় ছিল তাঁর চরিত্রেরই এক অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য। মনে তিনি লালন করতেন না কোনো আভিজাত্যের গৌরব। বরং তিনি ছিলেন এক প্রখর নীতিবোধের অধিকারী, যা তাঁকে করে তুলেছিল দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তাঁর এই কঠোর ব্যক্তিত্বের মূলে সক্রিয় ছিল শিল্পক্ষেত্রে পরিশুদ্ধি অর্জনেরও এক নিরন্তর প্রয়াস।
জন্ম ১৯৫৯ সালের ৩০ এপ্রিল, বর্তমান পিরোজপুর জেলার সেহাঙ্গল গ্রামে। তিনি পাঠ গ্রহণ করেছেন সেহাঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লাভ করেছেন এম.ফিল. ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রি। শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটে, বর্তমানে বাংলা বিভাগে।