মেঘনাদ সাহা অসাধারণ ধী-শক্তি, জ্ঞান এবং কর্মোদ্যম। এবং সেইসঙ্গে অপরিসীম মানবিকতাবোধ। যদি কেউ মনে করেন, একটি মানুষের মধ্যে এতগুলি গুণের সমন্বয় বিরল ঘটনা, তা হলে অবশ্যই বলব, ভারতের ইতিহাসে মেঘনাদ সাহাও এক বিরল ব্যক্তিত্ব। বিজ্ঞান তাঁর কাছে ছিল জীবনের সোপান। বিশ্বাস। তিনি মনে করতেন, চিন্তাভাবনার কসরত অথবা ভৌতজগতের সত্যানুসন্ধানই বিজ্ঞানের একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে না; মানুষের স্থুল প্রয়োজন থেকে শিল্প, কলা এবং সাংস্কৃতিক উত্তরণ সার্থক করে তোলার পেছনেও বিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিহার্য। আর এর জন্যেই জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সংগ্রাম করে গেছেন। বছর দশ আগে। বসু বিজ্ঞান মন্দিরের ডিরেক্টর এবং বিশ্ববিশ্রুত পদার্থবিজ্ঞানী আচার্য দেবেন্দ্রমোহন বসু তখন অবসর জীবনযাপন করছেন। ওই সময় একদিন তাঁর ঘরে বসে নিভৃতে আলোচনা করছিলাম। আমাদের আলোচ্য বিষয় ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানচর্চা। দেবেন্দ্রমোহন ছিলেন অত্যন্ত সংযতবাক্। সতর্কও। ঠিক যেটুকু কথা বলা দরকার, তার বেশি তিনি বলতেন না। মনে পড়ে, সেদিন তিনি অনেকেরই নাম করেছিলেন। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ থেকে শুরু করে তাঁর অনুজপ্রতিম যাঁরা ছিলেন, যেমন শিশিরকুমার মিত্র, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রভৃতি। কিন্তু মেঘনাদ সাহার কথা উঠতেই তাঁর বাসংযম যেন হারিয়ে গেল। দেবেন্দ্রমোহনকে অতটা উচ্ছ্বসিত এর আগে কখনও দেখিনি। জিজ্ঞেস করেছিলাম, মেঘনাদ সাহার সঙ্গে ঠিক কোন সময়ে আপনার প্রথম পরিচয় হয়েছিল?