বিশিষ্ট কবি, ছড়াকার নির্মলেন্দু গুণের লেখা ছড়ার বই ‘সোনার কুঠার’। বইটিতে রয়েছে সাতটি ছড়া। ছড়াগুলো হলো―টিয়ের বিয়ের হাতি, ধুলোবালির পোলাও, খিন্তির আকাশ ভ্রমণ, পুতুলের গায়ে মশা, বিষ্টি, সোনায়মোড়া সূর্যমুখী এবং সোনার কুঠার। বইটির সর্বশেষ ছড়া ‘সোনার কুঠার’-এর নামেই বইটির নামকরণ হয়েছে। সোনার কুঠার ছড়া নিয়ে আলোচনার পূর্বে অন্য অন্য কয়েকটি ছড়া পাঠ করে নেওয়া যাক। ‘টিয়ের বিয়ের হাতি’র কাণ্ড ছড়ায় ছড়ায় উঠে এসেছে― শুঁড়ভাঙা এক হাতির পিঠে/হাওদা তুলে দিয়ে সওদা করে বনের থেকে/বেরুল এক টিয়ে। টিয়ে পাখির ডাঁট বেড়েছে/ঠিক হয়েছে বিয়ে, তাই না ছুটছে কনের বাড়ি/বনের পাখি নিয়ে। পশুপাখিদের নিয়ে কী চমৎকার কাল্পনিক ছড়া! টিয়ের বিয়ে হবে, তাই বনের সব পশুপাখির মধ্যে আনন্দের ধুম বয়ে যাচ্ছে। ছড়াটি পড়তে পড়তে যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছে হাতির চেহারা! হাতির কখনো পা ভেঙে যাচ্ছে, কখনো লেজ, কখনো তার কমে যাচ্ছে তেজ। অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা ঘটছে হাতির। ছোট্টদের পুতুল খেলার মতো মজার খেলা আর দ্বিতীয়টি দেখা যায় না। পুতুল নিয়ে যে কত আয়োজন তাদের। তেমনি একটি পুতুল খেলা নিয়ে রয়েছে একটি ছড়া―‘ধুলোবালির পোলাও’। এ ছড়ায় ছড়াকার লিখেছেন― আমি যখন কাঁদি, তখন/পুতুলটা কেন কাঁদে না? আমি যখন চুল বাঁধি মা,/পুতুলটা কেন বাঁধে না? আমি যখন ধুলোবালির/পোলাও বাঁধি উনুনে, উনি তখন ব্যস্ত থাকেন/উলের জামা বুনুনে। পুতুল নিয়ে রয়েছে আরো একটি চমৎকার ছড়া। ছড়াটির নাম ‘পুতুলের গায়ে মশা’। মানুষকে যেমন মশায় কামড়ায় পুতুলকেও কি মশা কামড়ায়? শিশু-কিশোরদের এমনই এক মনোজগৎ যে তারা ভাবে পুতুলকেও বুঝি মশা কামড়াবে! সে ভাবনা নিয়ে এই ছড়াটি লেখা হয়েছে― খেলনাগুলো ঘুমিয়ে গেছে/গভীর ঘুমে খেলছিল যে সেই মেয়েটির/একটা চুমে। কদিন ধরে আজিমপুরে/দারুণ মশা মেয়েটি তাই পুতুলগুলোর/পাশে বসা। সোনার কুঠার ছড়াটি একটি দীর্ঘ ছড়া। ছড়াগল্পও বলা যেতে পারে। এক কাঠুরিয়া ও তার কাঠ কাটার কুড়াল নিয়ে লেখা হয়েছে এই ছড়াটি। এই ছড়াটি আবৃত্তি উপযোগীও বলা চলে। যদিও দীর্ঘ ছড়া মুখস্থ করাটা কিছুটা কঠিন কিন্তু সঠিকভাবে চর্চা করলে এই ছড়াটি রপ্ত করা যাবে। ছন্দ আর কল্পনার একটি অসাধারণ ছড়ার বই কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না।
জন্ম: জুন ২১, ১৯৪৫, আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ, যিনি নির্মলেন্দু গুণ নামে ব্যাপক পরিচিত,তিনি একজন বাংলাদেশী কবি এবং চিত্রশিল্পী। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনীও লিখেছেন। তাঁর কবিতায় মূলত নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধীতা, এ-বিষয়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রেমাংশুর রক্ত চাই প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ-গ্রন্থের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতাটি ব্যাপক জরপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তাঁর স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য। তিনি ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমী , ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।